আন্তর্জাতিকমানের কবুতর প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা
- মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
- ১০ মার্চ ২০২০, ০০:০০
কবুতর শান্তির প্রতীক। আগেরকার আমলের রাজা বাদশাহদের পত্র আদান-প্রদানে কবুতর ব্যবহার হতো। কবুতরের পায়ে পত্র বেঁধে ছেড়ে দেয়া হতো। ঠিক জায়গামতো কবুতর বার্তা পৌঁছে দিত। আবার কবুতরে গোশত সুস্বাদু খাবার। রোগীর পথ্য হিসেবে কবুতরের গোশতের জুড়ি নেই। শখ করে একদল মানুষ কবুতর পালন করে। নানা প্রজাতির নানা রঙের। শৌখিন কবুতরপ্রেমীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একটা বড় গ্রুপ গড়ে উঠেছে। যার বেশির ভাগ যুবক, তরুণ। তারা কবুতর পালন করে। হাতখরচের টাকা উপার্জন করে কবুতর পালন করে। অন্য সব পোষা পাখির চেয়ে কবুতরের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বেশি। দেশ ও দেশের বাইরে কবুতরের বড় বাজার রয়েছে। কবুতরপ্রেমীদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ ন্যাশনাল পিজিওন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এনপিএবি)। দীর্ঘ দিন ধরে এই গ্রুপটি কবুতরপ্রেমীদের জন্য কাজ করছে। তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখভাল করছে। সম্প্রতি রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) প্রথম জাতীয় কবুতর প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা-২০২০ অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিকমানের এই প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় তিনজন বিদেশী বিচারক ছিলেন। প্রধান বিচারক গৎ. ঘবরষ চৎধঃঃ ইংল্যান্ড থেকে আসেন। আর যে বিদেশী দু’জন বিচারক ছিলেন তারা হলেনÑ গৎ. চযরষু নবরিপশ (ইংল্যান্ড), গৎ. ঘধলববন জধভরব বাহরাইন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অসংখ্য কবুতর বিশেষজ্ঞ, ব্্িরডার ফেসবুকে শুভেচ্ছা বার্তা জানান। তারা প্রোগ্রামের সফলতা কামনা করেন। প্রায় ৮০০ খামারি এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা আসেন। বোখারা ট্্রামপিটার, জেকোবিন, লাহোর, কিং, ফ্রিলব্যাক, ওরিয়েন্টাল ফ্রিল (শান্টিনেট প্লাস ব্লডিনেট), ফ্যানটেইল ( ইন্ডিয়ান প্লাস ইংলিশ), আমেরিকান হেলমেট, আমেরিকান কমোরনান, মোক্ষী, হানগেরিয়ান হাউজ পিজিওন, ইংলিশ ট্্রামপিটার, আমেরিকান সেইন্ট, স্যাক্রন সোয়ালো, শর্ট ফেস টাঙ্গলার, ওল্ড ডাচ টাম্বলার, পমেরানিয়ান পোউটারসহ প্রায় ২০ জাত বা ব্্িরডের কবুতর প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি কবুতর খামারিদের এ প্রদর্শনী থেকে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সামনে অগ্রসর হওয়ার কথা বলেন। তিনি কবুতর প্রদর্শনীকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। কবুতর পালনের মাধ্যমে খামারিদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করেন তিনি। একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যে ধরনের নিয়ম-কানুন মানা হয়, এই প্রতিযোগিতায় তা সবটাই করা হয় বলে জানা যায়। বিভিন্ন পেশা, জায়গার মানুষ প্রদর্শনী দেখতে ভিড় করেন। তাদেরই একজন মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা বেশি বেশি হওয়া দরকার। মাহমুদুল নিজের কিছু সংখ্যক কবুতর পালন করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো জর্দানে কবুতর রফতানি হয়। প্রথমবারের মতো কবুতর রফতানি করেন খুলনায় ব্্িরডার এস আর কে শাওন। শাওন বলেন, এমন একদিন আসবে, যে দিন বাংলাদেশেও নিল ক্লিন্ট, রবেটসন, মুলার, সিনমরো, জুলিও, পাভেলের মতো বিশ্বখ্যাত ব্্িরডার তৈরি হয়ে যাবে, এমন স্বপ্নই দেখি। ন্যাশনাল পিজিওন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দু’টি কবুতর ফার্মের মালিক সামশেদ আলম। তিনি জানান, বাংলাদেশে অনেক কবুতর ব্্িরডার আছেন, যারা নির্দিষ্ট প্রজাতির কবুতরের ব্্িরড নিয়ে কাজ করেন। তাদের কবুতর রফতানি মানের বলে জানা যায়। দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি কবুতর প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সহজ ব্যাপার ছিল না। মূলত কবুতরপ্রেমী আবদুুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একদল তরুণ অসাধ্য সাধন করেন। রাত-দিন নিরলস পরিশ্রম করেন। তাদের আশাবাদ, সবার সহযোগিতা পেলে কবুতর পালনে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বসেরা হবে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে ব্্িরড হওয়া কবুতর সুনাম কুড়াবে। প্রোগ্রামটিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন এসিআই এগ্রি বিজনেসের এমডি ও সিইও ড. এফ এইচ আনসারী।