২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পাহাড়ের পথে পথে

-


প্রকৃতির রূপ দেখার জন্য দেশ ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। তবে ভ্রমণ যেহেতু শিক্ষা লাভের অন্যতম সূত্র, সেই খাতিরে সারা বিশ্ব ভ্রমণে বাধা হতে পারে না। ভ্রমণ করতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার চাইতে সুন্দর একটি ভ্রমণপিয়াসী মনই যথেষ্ট। যাক সেসব শক্ত কথা। আমি মূলত দেশের মাটিতে প্রাণ-প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘুরে তা অন্যকেও উৎসাহিত করতে পছন্দ করি। প্রাণের সংগঠন দে-ছুট ভ্রমণ সঙ্ঘের নিয়মিত ভ্রমণ ধারাবাহিকতায় জোছনা বিলাসের জন্য গিয়েছিলাম আলীকদম উপজেলার মুরংদের বসতি আদুপাড়া। পূর্ব পরিচিত মেন্থন মুরং এর ঘরে উঠি। রফিক ভাইয়ের ফুঁকনি ফুয়ে রান্না করা গরম গরম মহা স্বাদের খিচুড়ি খেয়ে ছুটি, পাড়া থেকে কিছুটা দূরে পাহাড় চূড়ায় গড়া মেন্থনের জুমঘরে। প্রথমে নেমে যেতে হলো অনেক নিচে। এর পর প্রবাহমান শ্বেত শুভ্র পানির ঝিরি মাড়িয়ে ওপর দিকে উঠতে থাকি। এবার জুমঘরটি দেখা যায়। ভাবলাম এসেই গেছি। কিন্তু না যতই আগাই ততই যেন দূরে সরে যায়। তুহিন ব্যাটার কথায় বুঝেছিলাম খুব সামান্য পথ। তাই লুঙ্গি পরেই ট্রেকিং। যাক কি আর করা। ওর বদৌলতে লুঙ্গি ট্রেকিংটা না হয়ে হয়েই গেল। তবে অভিজ্ঞতাটা মন্দ নয়। এয়ার বেন্টেলেশনটা বেশ ভালো হয়েছে। জুমঘরে পৌঁছতেই চোখ চড়কগাছ। মাতাল হাওয়ায় দেহ-মন জুড়িয়ে গেল। যত দূর চোখ যায় শুধু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজ আর সবুজ। গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করবে ঐ দূর পাহাড়ের ধারে/ নিঃসঙ্গ একটি মেয়ে। থাক আর না গাইলাম। জুমঘরে বসে প্রকৃতির ভিন্ন রূপ দেখার অন্যতম অনুভূতি একমাত্র তারাই বুঝবে যারা কখনো এই গল্প পড়ার আগে উপভোগ করেছে। জুমঘরের অসাধারণ কিছু স্মৃতি নিয়ে পাড়াতে ফিরি। দিন শেষে নেমে আসে রাত। সাথে করে যেন নিয়ে এলো এক দ্যুতি। ভরা চান্দের আলোয় চারদিক ফকফকা। নীরব সুমসাম পাহাড়গুলো যেন একেকটা হাই ভোল্টেজের সোডিয়াম লাইট। জোছনার আলো সঙ্গী করে হেঁটে বেড়াই। অনেক রাত পর্যন্ত মুলি বাঁশের মাচায় শুয়ে পূর্ণিমার আলো উপভোগ করতে করতে কখন যে দেÑছুট এর দামালরা ঘুমিয়ে পড়ে টেরই পাই নাই।
পরের দিন সকাল সকাল ছুটি ডিম পাহাড়ের পাদদেশে। আগেই রেডি থাকা ১৭ কিলো নামক জায়গা থেকে চান্দের গাড়িতে চেপে বসি। গাড়ি এগিয়ে যেতে থাকে দেশের দ্বিতীয় উঁচুতম সড়ক পথে। যতই এগিয়ে যায় ততই বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রই। এ পথে আমি আগেও এসেছি। আগামীতেও আসব। এখানকার নজরকাড়া প্রকৃতিই ভ্রমণপিপাসুদের বারেবার টেনে নিয়ে আসে। জনবসতিহীন রাস্তার ধারে চায়ের দোকান দেখে খানিকটা বিরতি নেই। একটা সময় দেখি পেছনে ফেলে আসা পথ শুভ্র ঘন মেঘে ঢেকে গেছে। চা চক্র শেষে আবারো এগিয়ে যাই। এবার চোখে ধরা দিলো মিয়ানমারের মংডু শহরের সারিসারি পাহাড়মালা। পুরো পাহাড়জুড়ে সবুজ তবে আমাদের পাহাড়গুলোতেও সবুজের সমারোহ কম নয়। প্রকৃতির কোমল নেশায় এবার গাড়ি ছেড়ে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যাই একেবারে দিগন্ত ছোঁয়া ডিম পাহাড়ের পাদদেশে। মাথার ওপরে নিলীমা, ডানে বামে সামনে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। তারই মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ের বুক চিরে করা থানচি যাওয়ার সড়ক। আমরা আর এগিয়ে না গিয়ে সেখানেই বসে যাই। মাঝে মধ্যে কিছু গাড়ি শা করে এসে ভোঁ করে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখি। যেন শান্ত প্রকৃতিকে মিশাইল দিয়ে আঘাত করা। বুক ভরা নিঃশ্বাস নিয়ে, অপলক চাহনিতে দূর বহু দূর-যত দূর যায় দৃষ্টির সীমানা তাকিয়ে রই। এই বসন্তে ডিম পাহাড় লাগোয়া আঁকাবাঁকা পাশে থাকা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দোকান ঘরগুলো হতে, ধোঁয়া তোলা চায়ের কাপে চুমুক দিতে মন্দ লাগবে না।
যাবেন কিভাবে
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান হয়ে থানচি বা কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া নেমে আলীকদম হয়ে আদুপাড়া।
থাকবেন কোথায়
আদুপাড়াসহ আরো কিছু পাড়া রয়েছে। সেসব পাড়ার ঘরগুলোতে নামে মাত্র খরচে থাকা-খাওয়া যাবে।
ভ্রমণ তথ্য
চাদের হিসাব করে যাবেন। পাড়া বা জুমঘর হতে দেখা জোছনা উপভোগ, আপনার জীবনের সেরা মুহূর্ত হয়ে রবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখবেন।

ছবি : দে-ছুট ভ্রমণ সঙ্ঘ


আরো সংবাদ



premium cement