শিশুরাও হোক সবুজপ্রেমী
- মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ছোটবেলায় যদি শিশুকে গাছের সাথে পরিচিত করানো যায়। বড় হয়ে সে গাছের গুরুত্ব বুঝবে। সবুজায়নের দরকার কেন। তাকে বোঝাতে হবে না। এমনকি সে যখন অভিভাবক হবে। তখন তার শিশুও সবুজপ্রেমী হয়ে বড় হয়ে উঠবে। তাই শিশুদের সবুজপ্রেমী, সবুজের প্রতি ভালোবাসা জাগাতে কাজ করছে সবুজ কথন। এটি একটি ফেসবুক গ্রুপ হলেও এর কর্মকাণ্ড ব্যাপক। স্কুল, মাদরাসা, এতিমখানায় ছড়িয়ে পড়েছে এর কার্যক্রম। স্কুল, মাদরাসার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গ্রুপটি অসংখ্য ফলগাছ, ফুলগাছ, শাকসবজির বীজ, বনজ গাছ বিতরণ করেছে। পুরোটাই বিনা মূল্যে। গাছ নিতে ছাত্রছাত্রীদের কোনো টাকা দিতে হয় না। পাশাপাশি গাছের অভাবে পরিবেশের দুরবস্থা, বায়ুদূষণ, নিরাপদ খাদ্যের অভাবÑ এসব বিষয়ে সচেতন করে তুলছে। সবুজ কথনের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে গাছ, গাছের চারা, বীজ, কাটিং আদান প্রদান করে। সদস্যরা যে যেখানেই থাকুন নিজ উদ্যোগে সবুজায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। গ্রুপের উদ্যোগে গত ডিসেম্বরের ১২ তারিখে বাড়বকুণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম) প্রাঙ্গণে শীতকালীন ফুলগাছ, বারো মাসি ফুল এবং শোভাবর্ধক গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। একই মাসের ১০ তারিখে উপজেলা সদর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম) প্রাঙ্গণে শীতকালীন ফুলগাছ, বারো মাসি ফুল এবং শোভাবর্ধক গাছের চারা রোপণ করা হয়। বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম) এ ফুল গাছের অপূর্ব সমারোহ সবার চোখে পড়ে। যার উদ্যোক্তা সবুজ কথন গ্রুপ। বাড্ডা হাইস্কুল (বাড্ডা, ঢাকা), আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মফিজুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার (টঙ্গী, গাজীপুর) ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সবুজ কথন গাছের চারা বিতরণ করেছে। আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মফিজুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানায় ৪০টি পাত্রে ফল, ২০টি পাত্রে সবজির গাছ রোপণ করা হয়। এই মাদরাসায় বর্তমানে ২২০ জন ছাত্র অধ্যয়নরত আছে। এ বিষয়ে এডমিন শওকত আরা খন্দকার বলেন, আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসে কিছুটা হলেও পূরণ করবে তাদের নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা এবং সবুজের সাথে কাটবে সুন্দর সময়।
শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরেও সবুজ কথন বৃক্ষরোপণের মহতী কাজ করেছে। এ বিষয়ে গ্রুপটির এডমিন শওকত আরা খন্দকার জানান, জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ সবুজ কথনের পক্ষ থেকে ভারতের নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ক্যান্সার হাসপাতাল (নয়াবাদ, কলকাতা) বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে বিভিন্ন সময় গ্রুপটির সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় একত্র হন। তাদের মধ্যে ফুলগাছ, ফলগাছ, শোভাবর্ধক গাছ, শাকসবজির বীজ বিতরণ করা হয়। অ্যাডমিন শওকত আরা খন্দকার জানান, যারা ঢাকার বাইরে থাকে কুরিয়ারের মাধ্যমে ফুলগাছ, ফলগাছ, শোভাবর্ধক গাছ, পাঠানো হয়। ২০২০ সালে সবুজ কথন এরই মধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ করেছে। জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে সম্মিলনী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (ঝিকরগাছা, যশোর), একই মাসের ১০ তারিখ ওমর গনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (জাকির হোসেন রোড, চট্টগ্রাম), ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখে কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল (নারায়ণগঞ্জ) প্রাঙ্গণে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ফুলগাছ, ফলগাছ, শোভাবর্ধক গাছ, বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এ তো ব্যাপক কর্মকাণ্ড। এগুলো কি সদস্যদের কাছে চাঁদা নিয়ে সে টাকায় করা হয়। এমন প্রশ্নের জবাবে শওকত আরা খন্দকার বলেন, আমরা কখনো মেম্বারদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নিয়ে গাছ বিতরণ করি না। তবে বিভিন্ন সময় মেম্বাররা তাদের অতিরিক্ত বীজ, গাছের কাটিং দিয়ে থাকেন যা বিভিন্ন ইভেন্ট মেম্বারদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
গাছের চারা, বীজ বিতরণই শেষ নয়। সঠিক পরিচর্যা না হলে সবই বৃথা। সেজন্য সবুজ কথন পরিচর্যার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে বলে জানা গেল। সাহায্য চেয়ে সবুজ কথন গ্রুপে পোস্ট দিলেই হয়। একাধিক অভিজ্ঞ ব্যক্তি সাহায্য হাত বাড়িয়ে দেন। সবুজ কথন গ্রুপের এডমিন হিসাবে আছেন মো: শাহাদাৎ হোসেন, আবুল কাসেম আহসানউল্লাহ, নিরঞ্জন চক্রবর্তী, স্বপন খান, শওকত আরা খন্দকার, পামেলা ইসলাম, মুর্শিদা সুমি, কানিজ স্বর্ণা, ইশতিয়াক মুনিম, নীলাঞ্জনা চক্রবর্তী, স্বীকৃতি দে, মো: ফজলে রাব্বি, মেহেদী হাসান, এনামুল হক রুবেল, নাসরিন হাসান নূপুর, সুবর্ণা পলি, মারুফ খান। এরা বিভিন্ন পেশার মানুষ হলেও সময় করে গ্রুপের জন্য কাজ করেন। সবটুকু সবুজের জন্য। ব্যক্তিগত কারো কোনো স্বার্থ নেই। কোনো প্রাপ্তিও নেই। পরিচয় একটাই, এরা সবুজ ভালোবাসে। সবুজ বাংলাদেশ চায়। ২০১৪ সালে ১৭ নভেম্বর বৃক্ষপ্রেমী মারুফ খান গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন। সবুজ কথনের মেম্বার সংখ্যা এখন ৪৩ হাজার পেরিয়ে গেছে। লোক দেখানো সভা, মিলনমেলা, জমকালো অনুষ্ঠান নয়। যেন তৃণমূলে সবুজের বিস্তৃতি বাড়ে। শিশুরা সবুজপ্রেমী হয়ে বেড়ে ওঠে সে জন্য গ্রুপের সদস্যরা তৎপর। জানা যায়, ৫ বছর আগে হাতিরঝিলে মেম্বারদের মাঝে গাছ বিতরণ করা হয়েছে। সেই গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। গাছের কাটিং এখন অন্যদের দেয়া হচ্ছে। এতেই অনুমেয়, সবুজের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা না থাকলে এটা কখনোই সম্ভব হতো না। ২০২০ সালে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন স্থানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের নিয়ে কাজ করা হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা আমরা কথা বলেছি। শুধু গাছ বিতরণ নয়। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে এ বছর আমরা আরো বেশি কাজ করব। এমনটাই বললেন শওকত আরা খন্দকার। ফেসবুক থেকে ভালো কিছু হয় নাকি? ভুরু কুঁচকে যারা এমন কথা বলেন। তাদের জন্য সবুজ কথন জুতসই জবাব হতে পারে। অল্প সময়ে সবুজ কথন সবার নজর কেড়েছে। কথার চেয়ে সবুজায়নে তাদের কর্মকাণ্ড বেশি কার্যকর। এমনটাই অভিজ্ঞ বৃক্ষপ্রেমীদের মতামত।