২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

  সৌন্দর্যচর্চায় কমলালেবু

-

বলুন তো! এই সময়ে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এমন কোন ফল যা আপনার ত্বকে এনে দিতে পারে ঝলমলে আভা? যে ফলটি নিয়মিত খেলেও ত্বক সুন্দর হবে আর ত্বকে মাস্ক হিসেবে লাগালে ত্বক আরো বেশি চকচকে হয়ে উঠবে। ঠিক ভেবেছেন! কমলালেবু।
কমলালেবু শুধু যে খেতে ভালো তা-ই নয়, এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি এক দিকে ভেতর থেকে আমাদের শরীরে পুষ্টি জোগায়, শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, অন্য দিকে বাইরে থেকেও আমাদের ত্বক সুন্দর রাখে। কমলালেবুর রস ও খোসা দিয়ে তৈরি ফেস ও হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলেও ত্বক ও চুল হয়ে ওঠে সতেজ, ঝলমলে ও সুন্দর।
কমলালেবুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল, বিটা ক্যারোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং খাদ্যআঁশ। কমলালেবুতে থাকা এল্কালাইজিং এবং ডিটক্সিফাইং উপাদান মানবদেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কমলালেবু খেলে শরীরের খারাপ কোলস্টেরল কমে। কমলালেবুর আঁশ শরীরকে খাবার থেকে কোলস্টেরল শুষে নিতে বাধা দেয়। কমলালেবুতে থাকা পটাশিয়াম ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কমলালেবুতে আরো আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। প্রতিদিন একটি কমলালেবু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। চুলের বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের ভিটামিন ও নিউট্রিএন্টস দরকার হয় যা কমলালেবুতে আছে, তাই প্রতিদিন একটি কমলালেবু খেলে চুল তাড়াতাড়ি বাড়ে। এ ছাড়া কমলালেবু আমাদের শরীরের আরো নানা ধরনের উপকার করে।

ত্বকের যতেœ কমলালেবুর রস

কমলালেবু রস ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি তৈরি করাও খুবই সহজ। চাইলে কোনো ইলেকট্রিক যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বা হাতেই বানিয়ে নিতে পারেন কমলালেবুর রস। আর কমলালেবুর রস দিয়ে ফেসমাস্ক তৈরি করা আরো সহজ। থাকছে কয়েকটি ফেসমাস্ক তৈরির পদ্ধতি।
বেসন ও কমলালেবুর রসের মাস্ক
২ টেবিল চামচ কমলালেবুর রস, ১ টেবিল চামচ বেসন, ১ চা চামচ গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। সারা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ দিন লাগাবেন। এই মাস্কটি ত্বকের ক্লিনজিংয়ের কাজ করে এবং ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে। তাছাড়া ত্বকের দাগ দূর করে এবং ত্বক ফর্সাও করে।
গ্রিন টি ও কমলালেবুর মাস্ক
কমলালেবু ২ কোয়া (ভেতরের পাতলা খোসা ও বীজ ছাড়িয়ে নেয়া), আধা চা চামচ গ্রিন টির পাতা একসাথে ভালোভাবে পেস্ট করে নিন। সারা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি মুখের লোমকূপের মুখ বা পোরস ছোট করে এবং ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করে। এটিও সপ্তাহে ২ দিন লাগানো উচিত।
কমলালেবু মধু ও ওটমিল মাস্ক
কমলালেবুর রস ২ চা চামচ, ৩ চা চামচ ওটস, ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ টকদই একসাথে মেশান। আলতো হাতে সার্কুলার মোশন বা বৃত্তাকারভাবে ত্বকে মাসাজ করুন। ১০ মিনিট রাখুন। পুরোপুরি শুকাতে দেবেন না। পানি দিয়ে ভিজিয়ে আবার হালকা হাতে মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ময়লা ও মৃত কোষ দূর করতে ও ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে এই প্যাকটি খুব কার্যকর।
কমলালেবুর রস, চিনি, মধু ও অলিভ অয়েলের মাস্ক
৩ টেবিল চামচ কমলালেবুর রস, আধা কাপ চিনি, ১ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে নিন। তারপর আলতো হাতে এই মাস্কটি হাত-পা, গলা ও ঘাড়ে মাসাজ করে লাগান। এটি খুব ভালো একটি এক্সফলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। এটি মৃত কোষ দূর করে ও রোদে পোড়া ভাব দূর করে হাত-পা উজ্জ্বল করে। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি মুখে ব্যবহার করবেন না। সবচেয়ে ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।
ত্বকের যতেœ কমলালেবুর খোসা
কমলালেবুর খোসায় কমলালেবুর ভেতরের অংশের চেয়ে অনেক বেশি ভিটামিন সি থাকে। এ ছাড়া এতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকার কারণে এটি ব্রণ সারায়, তৈলাক্ত ত্বক স্বাভাবিক করে তোলে। কমলালেবুর খোসায় এত পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট আছে যে, নিয়মিত ফেসমাস্কে কমলালেবুর খোসা ব্যবহার করলে অল্প কিছু দিনের মাঝেই আপনি পেতে পারেন দাগহীন ও উজ্জ্বল ত্বক। কমলালেবুর খোসা যেকোনো ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসমাস্ক তৈরি করে এতে কমলালেবুর খোসা পেস্ট করে মিশিয়ে নিলেই হয়ে গেল। প্রতিদিন কমলালেবুর খোসা ব্লেন্ড করা ঝামেলার কাজ। তাই একসাথে অনেক কমলালেবুর খোসা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে শক্ত ঢাকনাযুক্ত বয়ামে ভরে রাখা ভালো। এটি ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। প্রয়োজন মতো যেকোনো ফেসমাস্কের সাথে মিশিয়ে নিলেই হলো। কমলালেবুর খোসা ব্যবহার করে তৈরি করা যায়। এমন চমৎকার কিছু ফেসমাস্ক হলোÑ
টকদই ও কমলালেবুর খোসার ফেসপ্যাক
৩ টেবিল চামচ টকদই ও ১ টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে নিন। সারা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। পাবেন পরিষ্কার, সতেজ ত্বক। মুখের বলিরেখাও কমে আসবে।
কমলালেবুর খোসা, হলুদ ও মধুর ফেসওয়াশ
এটি রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ১ টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো, ১ চিমটি হলুদ, ১ টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এটি মুখ, গলা, ঘাড় ও হাতে লাগিয়ে নিতে হবে। ১০ মিনিট পর যে কোনো ভালো ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রোদে পোড়া দূর করতে এই প্যাকটি সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করুন। ত্বকে ব্রণ থাকলে এই প্যাকটি ব্যবহার করবেন না।
কমলালেবুর খোসা, চন্দন ও কাঠবাদাম গুঁড়োর স্ক্র্যাব
১ টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ কাঠবাদাম গুঁড়ো একসাথে মেশান। এবার এতে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস ও পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। সারা মুখে, গলা, ঘাড় ও হাতে ৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ৫ মিনিট পর অল্প পানি দিয়ে ভিজিয়ে সারা মুখ, হাত, গলা ও ঘাড় আলত হাতে সার্কুলার মোশনে মাসাজ করুন ২-৩ মিনিট। এবার ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ব্যবহারে ত্বকের মৃত কোষ ঝরে যাবে, এছাড়া পাবেন উজ্জ্বল ত্বক।
কমলালেবুর খোসা, মুলতানি মাটি ও গোলাপজলের ফেসপ্যাক
১ টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। মুখে ও গলায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। যখন টানতে শুরু করবে, তখনই ধুয়ে ফেলুন। পুরোপুরি শুকানোর প্রয়োজন নেই। এই প্যাকটি ত্বকে ডিপ ক্লিনজিং করে। তবে এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য নয়।
কমলালেবুর খোসা ও লেবুর রসের ফেসপ্যাক
এই প্যাকটিও রোদে পোড়া দূর করে এবং ত্বক ফর্সা করে। ২ টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো, ১০ ফোঁটা লেবুর রস, ১ চা চামচ চন্দন, ১ চা চামচ মুলতানি মাটি একসাথে মেশান। এতে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ও ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য এই প্যাকটি খুবই উপকারী।

চুলের যতেœ কমলালেবু ও কমলালেবুর খোসা
ত্বকের যতেœ কমলালেবু যেমন চমৎকার ফল নিয়ে আসতে পারে, তেমনি চুলের যতেœও। চুলে শাইন বা ঝলমলে ভাব আনতে, খুশকি দূর করতে, চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় ও মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ কমাতে কমলালেবু দারুণ কাজ করে।
ষ ঝলমলে চুল পেতে একটি কমলালেবুর রস, ১ চা চামচ মধু ও আধা কাপ পানি মিশিয়ে নিন। চুল শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার হিসেবে এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। ১০ মিনিট রেখে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল এতই নরম ও ঝলমলে হবে যে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।
ষ কমলার খোসা গুঁড়ো পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট মাথার তালুতে লাগান। কমপক্ষে আধাঘণ্টা রাখুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে ১ দিন করে ব্যবহার করলে শিগগিরই খুশকি দূর হয়ে যাবে।
ষ একটি কমলা পুরোটা ব্লেন্ড করে নিন, খোসাসহ। এবার এই পেস্ট মাথার তালুসহ পুরো চুলে লাগান। তারপর একটি তোয়ালে কুসুম গরম পানিতে চুবিয়ে নিংড়ে নিয়ে তা দিয়ে পুরো চুল ও মাথা পেঁচিয়ে রাখুন। সপ্তাহে ১ দিন করে এই প্যাকটি ব্যবহার করুন। চুল হবে মজবুত ও ঝলমলে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মতামত গ্রহণে ওয়েবসাইট চালু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন কপ-২৯ সম্মেলনে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও এলডিসি’র ‘ওয়াকআউট’ আলোচনায় 'না' ভোট এবং 'ভোট রিকল' হাসানের জোড়া উইকেটের পরও ৩০০ পার করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বিতর্কিত করে অভ্যুত্থান ব্যর্থ প্রমাণের অপচেষ্টা চলছে : উপদেষ্টা নাহিদ ফরিদপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম তালুকদার গ্রেফতার ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে : ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের ইস্যু তুলেও ঝাড়খণ্ডে জিততে পারেনি বিজেপি ‘নতুন বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না’

সকল