২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ফি চা র

পা নিয়ে নয় হেলাফেলা

-

শীতকালে চুল, মুখ ও হাতের সৌন্দর্য বজায় রাখার ব্যাপারে সবাই সচেতন, কিন্তু পায়ের যতেœর বেলায় অনেকেই উদাসীন। অথচ আমাদের পা দুটোকে কত কিছুই না সহ্য করতে হয়। প্রথমত, সারা শরীরের ওজনটা কিন্তু সারা দিন পা-ই বয়ে বেড়ায়। দ্বিতীয়ত, হাইহিল পরার কষ্ট, বিভিন্ন জুতা পরার দাগ সইতে হয়, আর রাস্তার ধুলাবালির অত্যাচার তো আছেই। এছাড়া আছে ঋতু পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা। মুখ, চুল, পোশাক-আশাক সব কিছু পরিপাটি থাকলেও পা দুটো যদি হয় রুক্ষ, মলিন ও ফাটা, তাহলে কিন্তু একজন মানুষের পুরো সাজগোজই মাটি হয়ে যায়। সৌন্দর্য অপরিপূর্ণ থেকে যায়। শীতে তাই নিতে হয় পায়ের কিছু বাড়তি যতœ।
পা ময়লা থাকলে পায়ের চামড়া ও গোড়ালি ফেটে যায়। এছাড়া ইনফেকশন হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাই পায়ের যতেœর প্রথম ধাপ হলো পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখা। যত শীতই হোক না কেন, প্রতিদিন অন্তত দু’বার পা ভালোভাবে ধুয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজ করতে হবে। পা ময়লা বা ভেজা কোনোটাই রাখা যাবে না। যতবার ঘরের বাইরে যাবেন, বাড়ি ফিরে পা দুটো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
পায়ের ওপরের মরা চামড়া সরিয়ে ফেলাটা পায়ের যতেœর খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের কারণে পা দেখায় নিষ্প্রাণ ও কোঁচকানো। এছাড়া পায়ের রঙও ময়লা মনে হয়। এই মরা চামড়া না সরিয়ে ত্বকের ওপর যতই প্যাক বা ময়েশ্চারাইজার লাগান, কোনো লাভ হবে না। পা ১০ মিনিট কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর নরম তোয়ালে ভিজিয়ে আলতো করে ঘষে ঘষে ত্বকের ওপরের মরা চামড়া ও ময়লা দূর করতে হবে। কিন্তু জোরে ঘষা যাবে না। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর গোড়ালি ঘষতে হবে পিউমিক স্টোন দিয়ে। বাজারে স্টিলের তৈরি স্ক্র্যাবার পাওয়া যায়, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। যেহেতু গোড়ালিতে প্রতিদিনই মরা চামড়া জমে, তাই আমাদের প্রতিদিন গোসলের সময় হালকা করে পিউমিক স্টোন দিয়ে গোড়ালি ঘষে নেয়ার অভ্যাস তৈরি করে নেয়া উচিত।
দুই পা এক্সফলিয়েট করার জন্য ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন একটি ভালো স্ক্রাব। ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, আধা চা চামচ চিনি একসাথে মিশিয়ে নিন। চাইলে এর সাথে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েলও মিশিয়ে নিতে পারেন।
এবার প্রথমে ১০ মিনিট কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে চামড়া নরম করে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি পায়ে আলতো হাতে সার্কুলার মোশন বা বৃত্তাকারভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। চিনির দানাগুলো পায়ের ওপরের মৃতকোষ সরিয়ে ফেলবে, আর অলিভ অয়েল ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবে। সপ্তাহে দু’দিন পা এক্সফলিয়েট করা উচিত।
পা এক্সফলিয়েট করার পর সবচেয়ে ভালো হয় যদি একটি নারিশিং ফুট মাস্ক লাগানো যায়। কলা খুব ভালো নারিশমেন্ট করতে পারে। একটি পাকা কলা নিন। এমন একটি কলা বেছে নেবেন যেটি একটু বেশি পাকা, অর্থাৎ যেটির চামড়া কালো হয়ে গেছে। এবার এই কলাটির সাথে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস ও ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। দুই পায়ে ভারী করে লাগিয়ে পা দুটি এলুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই ঋতুতে সম্ভব হলে প্রতিদিন রাতে ১০ মিনিটের জন্য পা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে একদিকে যেমন ক্লান্তি দূর হবে, অন্য দিকে পায়ের ময়লা ও কোঁচকানো ভাব দূর হবে। মনে রাখবেন, পানি যেন বেশি গরম না হয়। অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। পানি হতে হবে কুসুম গরম। কুসুম গরম পানিতে অল্প শাওয়ার জেল মিশিয়ে নিতে পারেন। অথবা ইপসোম সল্ট মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে পায়ের মাংসপেশি আরাম পাবে। যদি রাতে বা সন্ধ্যায় এটা করা সম্ভব না হয়, অন্তত গোসলের সময় অতিরিক্ত ১০ মিনিট ব্যয় করে এই কাজটি করতে পারেন। পার্থক্য নিজেই বুঝতে পারবেন।
ত্বককে সঠিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করার গুরুত্ব অনেক। অনেকেই একটি ভুল করে থাকেন, ত্বকে লোশন, ক্রিম বা তেল তখন লাগান যখন ত্বক এটি নেয়ার জন্য তৈরি নয়। একদম শুকনো ত্বকে যতই ময়শ্চারাইজার লাগান, ত্বক তা ভেতরে শুষে নিতে পারে না। ময়েশ্চারাইজার তখন লাগাতে হবে যখন চামড়ায় একটু ভেজাভাব থাকবে। পা ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে সাথে সাথেই লাগাতে হবে ময়েশ্চারাইজার।
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই পা ধুয়ে লোশন, ক্রিম, তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলির একটি ভারী পরত লাগিয়ে সুতি মোজা পরে নিতে হবে। এতে করে পা সারারাত ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ হবে। যাদের গোড়ালি ফাটার সমস্যা আছে তাদের জন্য তো এই রুটিন মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য। পা ফাটা থাকলে গোড়ালিতে পা ফাটার ক্রিম অথবা ঘরে তৈরি কোনো মিশ্রণ লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ১ চা চামচ ঘন গ্লিসারিন, আধা চা চামচ লেবুর রস, আর এক চিমটি চিনি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এটি ফাটা গোড়ালিতে লাগিয়ে সুতি মোজা পরে ঘুমাতে হবে। পায়ের পাতা যদি অতিরিক্ত রুক্ষ হয় তাহলে এই মিশ্রণটি পুরো পাতাজুড়েই লাগানো যায়। এটি লাগানোর ফলে ত্বক ফর্সা হয়, জুতা বা স্যান্ডেল পরার কারণে সৃষ্ট দাগ দূর হয় এবং ত্বক লাবণ্যময় হয়। তবে এই মিশ্রণটি শুধু পায়ের জন্য। হাত বা মুখে এটি লাগানো যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement