২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খেলার ছলে কথা

-

সব শিশুই এক সময়ে কথা বলা শেখে না। কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে শিশুর কথা বলাকে ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। বাবা-মায়েদের কেউ বলে তাড়াতাড়ি, কেউ কিছুটা সময় নেয়। কথা শেখানোর সময় কিছু প্রাথমিক বিষয় মনে রাখতে পারেন।

শিশুর সাথে প্রচুর কথা বলা
শিশুরা খুবই অনুকরণপ্রিয়। তারা সব সময় বড়দের অনুকরণ করতে চায়। বিশেষ করে বাবা-মায়ের সাথে শিশুরা সব সময় হাসি আর খেলায় মেতে থাকে। শিশুদের সাথে সময় কাটানোর সময় বাবা-মাকে অবশ্যই তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের সদস্যদেরও শিশুর সাথে শুদ্ধ উচ্চারণে প্রচুর কথা বলতে হবে। শিশুকে এমন প্রশ্ন করতে হবে যার উত্তর সে ছোট ছোট শব্দ বা বাক্যে অথবা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে দিতে পারে। অনেকেই শিশুকে টিভি দেখতে বসিয়ে দেন। তা না করে তাকে গল্পের বই পড়ে শোনান। শিশুকে গল্পের ফাঁকে বিভিন্ন রকম আওয়াজ করানোর চেষ্টা করুন।

গান বা ছড়া শোনান
শিশুকে কথা শেখানোর আরেকটা কার্যকরী উপায় হলো শিশুকে ছড়া বা গল্প শোনানো। ছড়ার অর্থ বা কথা না বুঝলেও শিশুদের অন্তর্নিহিত একটা ছন্দবোধ থাকে। সেই ছন্দে শিশুদের ঘুম আসে আবার মনের মাঝে বাজতেও থাকে। ফলে শিশুরা চেষ্টা করে ছড়াটা উচ্চারণের। আপাতদৃষ্টিতে এটা শুধু বিনোদনের মাধ্যম মনে হলেও শিশুর কথা পরিষ্কারভাবে বলতে সাহায্য করে।

শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশ অনুকূল রাখুন
শিশুকে সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে দিন। শিশুর সামনে তর্ক বা ঝগড়া করবেন না। কোনো ব্যাপারে দ্বিমত হলে তা শিশুর সামনে প্রকাশ করা যাবে না। শিশুকে যতটুকু সম্ভব হাসি-খুশির মধ্যে রাখতে হবে। শিশু কান্নাকাটি করলে অস্থির হলে চলবে না। শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে হালকাভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে সে আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসে। বাবা-মায়ের ঝগড়া শিশুর কোমল মনে আঘাত হানতে পারে। এতে শিশুরা এক ধরনের মানসিক চাপ বা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে যা শিশুর কথা বলায় বা অন্য স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত করতে পারে।

উচ্চারণ শুধরে দিন
শিশুকে সবসময় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। ছোটবেলা থেকেই ভুল উচ্চারণে কথা বলা শেখালে পরে শিশুর কথা বলায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই শিশুর ভুল উচ্চারণে ভাঙা ভাঙা কথা শুনতে ভালো লাগলেও তাকে উৎসাহ দেবেন না। শিশুর ভুল উচ্চারণ শুনে খুশি না হয়ে বরং তা তৎক্ষণাত তা শুধরে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে শিশুরা ভুল উচ্চারণে কথা বলতে নিরুৎসাহ বোধ করবে। এদিকে কথা বলা হবে আরো বেশি স্পষ্ট।

শিশুকে সময় দিন
বাবা-মায়ের শিশুকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। বর্তমান সময় হলো শুধুই ছুটে চলার। কর্মজীবী মহিলাদের সন্তানের প্রতি যতœ নেয়া বা পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করার অবকাশ খুবই অল্প। এরই মাঝে বাবা-মায়ের শিশুর প্রতি সময় বের করে নিতে হবে। শিশুর সাথে খেলাধুলা করতে হবে। শিশু বুঝুক আর না-ই বুঝুকÑ শিশুর সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলতে হবে। শিশুর মা-বাবা যতটা সম্ভব শিশুর সাথে সুন্দর সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। ওরা যেন হীনম্মন্যতায় না ভোগে বা নিজেকে অসহায় না ভাবে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

খেলার ছলে কথা শেখান
শিশুকে অনেক সময় খেলার ছলেও কথা শেখানো যায়। যেমন শিশুর সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটি একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় রেখে (শিশুর নাগালের বাইরে) তাকে জিনিসটি দেখান। যখন সে ওটা নিতে চাইবে বা আপনার হাত ধরে টানবে তখন আপনি জিনিসটির নাম একটু স্পষ্টভাবে বলুন। যেমন যদি ‘গাড়ি’ হয় তবে বলুন ‘ও, তুমি গাড়ি খেলতে চাও?’ অথবা ‘এই যে তোমার গাড়ি।’
শিশুর অনুকরণের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর বেশি গুরুত্ব দিন। যেমন শিশুর হাসি বা মুখভঙ্গির অনুকরণ করে দেখান। শিশুর সাথে শিশুর মতো আচরণ করুন।

প্রতীকী শব্দের ব্যবহার
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু মূল শব্দের আগে প্রতীকী শব্দ ব্যবহার শুরু করে। তাই এ ক্ষেত্রে আপনিও প্রাথমিকভাবে প্রতীকী শব্দ ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন। যেমন গাড়ি বোঝাতে পিপ পিপ। বেড়াল বোঝাতে মিউ মিউ ইত্যাদি।

শিশুর কথা বলা শেখাতে যা করা যাবে না
শিশুকে কথা বলার জন্য অত্যধিক চাপ যেমন ‘বল, বল’ ইত্যাদি একেবারেই করা যাবে না।
বাবা-মায়ের এক ধরনের প্রবণতা বেশি দেখা যায় সেটা হলো শিশুকে একসাথে অনেক শব্দ শেখানোর চেষ্টা করা। এতে শিশু কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কিছুটা দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসাব্যবস্থা। সঠিক সময়ে এ পদ্ধতির কৌশলগত প্রয়োগ হলে শিশু কথা এবং যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে উন্নতি করবেই।
শিশুকে অযথা অপ্রাসঙ্গিক অথবা অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অনেক মা-বাবাই ভাবেন, অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুর সাথে তাদের পিছিয়ে পড়া শিশুর খেলার পরিবেশ করে দিলেই আপনা-আপনিই কথা শিখে যাবে। কিন্তু মনে রাখবেন, এমনটা না-ও হতে পারে। তাই নিজেরা বাড়িতে চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে স্পিচ থেরাপির সহায়তা নিতে হবে।
ওপরের টিপসগুলো যে শিশুরা একটু দেরিতে কথা শেখে তাদের জন্য প্রযোজ্য। তবে মানসিক বা শারীরিক কোনো প্রতিবন্ধকতার কারণে শিশু কথা না বললে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।


আরো সংবাদ



premium cement