২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাইশ টিলা

-

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। একেকটি ঋতুতে এ দেশের প্রকৃতি সাজে ভিন্নরূপে যা ভ্রমণপিপাসুদের অতৃপ্ত মনকে তৃপ্তি দিয়ে থাকে। সব ঋতুতে যদিও প্রকৃতির বহুরূপী সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবুও নির্দিষ্ট ঋতুতে কিছু স্থান যেন তার যৌবন ফিরে পায়। অর্থাৎ সেই নির্দিষ্ট সময়ে আপনি ওই স্থানের রূপ-সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশিই। পরিকল্পনা করেছিলাম যাবো নতুন গন্তব্য, কিন্তু বিধিবাম। বের হতে পারিনি, তাই আগের থেকেই ত্রিচক্রযানের কাণ্ডারিকে আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম। কাক্সিক্ষত দিন এলো, সকাল হতেই হাতের কাজ শেষ করার তাগাদা দেয়া শুরু করলাম ভ্রমণসঙ্গীদের। সময় বেঁধে দিলাম দুপুর ১টার ভেতর তৈরি হয়ে নিতে হবে। আমাদের আজকের গন্তব্য সিলেট শহর থেকে খানিক দূরে বাইশ টিলা নামক স্থানে। যেহেতু আগে যাওয়া হয়নি ভ্রমণ গন্তব্যে, তাই একটু আগেই বের হওয়া। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরই বের হতে হলো আমাদের কুটির থেকে। জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা পেরিয়ে চলছি আমরা। ও, বলাই হলো না, আমাদের আজকের ভ্রমণসঙ্গী অর্পিতা, সুকান্ত আর সর্বকনিষ্ঠ ভ্রমণসঙ্গী সপ্তক। আকাশের মন এই ভালো তো একটু পরই খারাপ। কখনো করছে অঝোর ধারায় কান্নাকাটি। এর মাঝেই চলছি এগিয়ে। আম্বরখানা পেরিয়ে যেই লাক্কাতুরা চা-বাগানের দিকে ধাবিত হলাম, আমরা নতুন চা-পাতার অসাধারণ রূপ চোখে পড়ল। বর্ষায় চা গাছগুলো নতুন যৌবন পেয়েছে দেখে মনে হলো। আমরা চলছি গন্তব্যপানে সবুজের সমারোহের ভেতর দিয়ে। এবার কোন দিকে যাওয়া জানতে চাইলেন আমাদের ত্রিচক্রযানের কাণ্ডারি সত্য দা। আমি বললাম, আরো কিছু দূর গিয়ে কারো কাছে জেনে নিলেই হবে। একজন প্রবীণ ব্যক্তির কাছে জানতে চাওয়া হলো বাইশ টিলার পথটি কোন দিকে। প্রত্যুত্তরে প্রবীণ ব্যক্তিটি বললেন, সোজা পথ ধরে যেতে হবে আরো ১৫ মিনিট; তাহলেই পাবেন আপনাদের কাক্সিক্ষত গন্তব্য। আমি ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আসলেই কি ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব গন্তব্যে। এ বিষয়ে আমার আবার অভিজ্ঞতা খারাপ। এর আগে রেমা কালেঙ্গা বনে ঘুরতে যাওয়ার সময় পথে জানতে চেয়েছিলাম গন্তব্য পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবেÑ তখন বলা হয়েছিল, আধা ঘণ্টা লাগবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গন্তব্য পথের প্রবেশ দ্বারে পৌঁছাতেই এক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল। যাই হোক ঘড়ির কাঁটা চলছে এগিয়ে। ঘড়ির কাঁটায় এখনো দুই মিনিট বাকি, দেখা পেলাম একটি দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা বাইশ টিলা সিলেট। বুঝতে আর বাকি রইল না, আমার উপস্থিত হয়েছি বাইশ টিলায়। এ দিকে বৃষ্টিও কমে এসেছে । বাতাস বইছে , বর্ষার জন্য ধান ক্ষেতও নবীনা জলে টইটম্বুর। দেখা পেলাম নৌকার মাঝি অপেক্ষারত যাত্রীর জন্য। আমরা ত্রিচক্রযান থেকে নেমে পড়লাম। পদব্রজে ঘুরে দেখতে লাগলাম চারপাশ। আমাদের মাঝে উপস্থিত আমাদের সবচেয়ে ছোট্ট ভ্রমণসঙ্গী তো খুবই খুশি। দেখা পেলাম সদ্য মাছ ধরে আনা হয়েছে হাওর থেকে। মাছগুলো নিজেদের মধ্যে দাপাদাপি করছে। মাছগুলো ঘিরে ধরেছে মানুষজন। এর মধ্যে দরদাম করা শুরুও হয়ে গেছে। বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। আমি মনে মনে ভাবলাম, এখন চাইলেও মাছ কেনা যাবে না। এত ক্রেতা দেখে বিক্রেতা দাম নিশ্চয়ই ছাড়তে চাইবে না। তার চেয়ে আমরা নৌ-ভ্রমণ করে আসি। এর মধ্যে নিশ্চয়ই আরো বিক্রেতা উপস্থিত হবেন, তাদের কাছ থেকে মাছ নেয়ে যাবে। ঠিক করলাম নৌকা। আমাদের নৌকা দুলে দুলে চলছে এগিয়ে। সূর্যদেবের প্রখরতা নেই বললেই চলে আর সাথে মৃদুমন্দ বাতাস ভালোই লাগছিল। আমাদের মতো অনেকেই নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দেখা পেলাম জেলে মাছ ধরছেন। হঠাৎ মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে গেল। কাছেই এয়ার পোর্ট তাই উড়োজাহাজের নিত্য যাওয়া-আসা। প্রায় আধা ঘণ্টা হাওরের জলে ভেসে বেড়ালাম আমরা। ঘড়ির কাঁটা চলছে ছুটে, তাই ঘাঁটে ফেরার প্রয়োজন। নৌকা থেকে নেমে দেখলাম বেশ কয়েকজন মাছবিক্রেতা উপস্থিত সদ্য ধরে আনা মাছ বিক্রির জন্য। শুরু করে দিলাম দরদাম। এক খাঁচার মাছ বেশ পছন্দ হলো, বিভিন্ন ধরনের মাছ আছে। ছোট মাছ থেকে শুরু করে বড় মাছ বোয়াল, সরপুঁটি, চাপিলা সব মাছের নামও জানি না। মনের ভেতর আবার শঙ্কাও ছিল, খারাপ মাছ নিলে মায়ের বকুনি খেতে হবে। আমার মায়ের ধারণা, আমরা বাজার করতে পারি না। যদিও করি, তা বেশি দাম দিয়ে বুঝি কিনি। তাই তিনি আমাদের বাজারই করতে দেন না। যাই হোক, ওই খাঁচার মাছের দাম বিক্রেতা চাইলেন এক হাজার ২০০ টাকা। ছোটবেলায় বাবা বাজারে নিয়ে গেলে বলতেন, মাছের বাজারে দাম করতে হলে বিক্রেতা যে দাম বলবে তার অর্ধেক দাম বলে দামাদামি শুরু করতে হবে, তাহলেই লাভবান হওয়া যায়। আমি সেই বুদ্ধি কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। আমি বললাম, ৬০০ টাকা, বিক্রেতা রাজি হলেন না। পরে আরো ১০০ টাকা দাম বলাতেই রাজি হয়ে গেলেন মাছ বিক্রির জন্য। মাছ নিয়ে একটু ভয় ভয় লাগছিল, ঠকলাম না তো আবার। আমাদের ত্রিচক্রযানের সত্য দা’র কাছে জানতে চাইলাম, এই মাছগুলোর দাম ৭০০ টাকা নিয়েছে, বেশি নেয়নি তো। সত্য দা বললেন, না না, বেশি কেন হবে, এই মাছ শহর থেকে কিনতে গেলে দুই হাজার টাকার কম নেবে না। আর এত টাটকা মাছও পাবেন না। যাই হোক, মনে মনে খুশিই হলাম।

যাবেন কিভাবে :

ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রিনলাইন, শ্যামলী, এনা, হানিফ বা বিআরটিসি বাসে অথবা ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালে আন্তঃনগর পারাবত, দুপুরে জয়ন্তিকা ও কালনী এবং রাতে উপবন সিলেটের পথে ছোটে ভাড়া ৩২০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। সিলেটের শহরের বন্দরবাজার থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যান সিলেট এয়ারপোর্টের পেছনে বাইশ টিলায়। রিজার্ভ যাওয়া-আসা পড়বে ৫০০ টাকা। আর নৌকা ভ্রমণ করতে পারবেন ঘণ্টা ২০০ টাকায় ।


আরো সংবাদ



premium cement