রূপসচেতন নারী
- কাজী তানজিলা মেহনাজ
- ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
শীতকাল এলে রূপসচেতন নারী-পুরুষ ত্বকের যতেœর কমতি রাখেন না, কিন্তু তবুও নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হলো ত্বকের চামড়া ওঠা ও নি®প্রাণ ভাব। শীতকালে ত্বকের যতেœ যে জিনিসটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো স্ক্র্যাবিং। স্ক্র্যাবিং ত্বকের মরা চামড়া দূর করে, ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল করে, ত্বকের নি®প্রাণ ভাব দূর করে। সপ্তাহে দুই-এক দিন স্ক্র্যাবিং করলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আরো নরম ও কোমল। শুধু যে মুখের ত্বকেই স্ক্র্যাব করতে হয় তা কিন্তু নয়। সারা শরীরের ত্বকেই স্ক্র্যাব করার প্রয়োজন আছে। কিন্তু মুখ ও শরীরের অন্যান্য অংশের স্ক্র্যাবের উপাদান হয় ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু স্ক্র্যাব করবেন কিভাবে? দেখে নিন খুব সহজ কিছু উপায়Ñ
মুখের জন্য স্ক্র্যাব
এই স্ক্র্যাব আপনি ব্যবহার করতে পারবেন শুধু মুখের ত্বকে। মুখের ত্বক অনেক পাতলা ও কোমল হয়। তাই খুব আলতো হাতে স্ক্র্যাব করতে হবে। কয়েকটি ফেস স্ক্র্যাব হলোÑ
ক্স চালের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ময়দা ১ টেবিল চামচ, সামান্য হলুদের গুঁড়া এবং পরিমাণমতো কাঁচা দুধ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ত্বকের মৃতকোষ দূর করার সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো একটি প্যাক।
ক্স পাকা পেঁপের কয়েকটি টুকরো ব্লেন্ড করে সাথে সামান্য চিনি মিশিয়ে নিন। মুখে ও গলায় মেখে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। এ স্ক্র্যাবটি ত্বকের পুষ্টি জোগায়, ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং উজ্জ্বল রাখে। এটি যেকোনো ধরনের ত্বকের জন্য খুব ভালো একটি প্যাক।
ক্স চালের গুঁড়ার সাথে মধু ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। বেশি ঘন হয়ে গেলে একটু পানি মিশিয়ে নিন এবং ব্যবহার করুন। প্যাকটি মুখে ও গলায় আলতো করে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ক্স ছয় থেকে আটটি ব্যবহৃত টি-ব্যাগ রেফ্রিজারেটরে রেখে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। আরো লাগবে সোয়া কাপ চিনি ও ২ টেবিল চামচ মধু। টি-ব্যাগ কেটে ভেতর থেকে পাতা বের করে ব্লেন্ড করে সাথে চিনি ও মধু মিশিয়ে ঘন ও দানাদার মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। তৈরি হয়ে গেল গ্রিন টি স্ক্র্যাব। গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-এইজিং উপাদান, যা ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ত্বকের যেকোনো ধরনের দাগ ও বলিরেখা সারিয়ে তুলতেও সাহায্য করে গ্রিন টি।
ক্স দু’টি পাকা কলা চটকে চিনি ও ১ টেবিল চামচ মধু মেশান। মিশ্রণটি ৫ মিনিট ত্বকে ঘষে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ক্স আধা কাপ পাকা পেঁপের সাথে ২ টেবিল চামচ দই, ১ টেবিল চামচ মধু ও তিন ফোঁটা লেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে লাগান চক্রাকারে ঘষে। ৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
হাত-পায়ের জন্য স্ক্র্যাব
ক্স দারুচিনি গুঁড়া করে নিন। দানা দানা ভাব যেন থাকে। এবার দারুচিনির সাথে বাকি উপকরণ মিশিয়ে নিন। হাত ও পায়ে ভালো করে ঘষে ঘষে লাগান ৫ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
ক্স একটি লেবু অর্ধেক করে চিনি মিশিয়ে হাত ও পায়ের ত্বকে ঘষুন। ৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। কোমল হবে ত্বক।
ক্স বেকিং সোডার সাথে অল্প অল্প করে পানি মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। প্যাকটি আপনার পায়ে লাগিয়ে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
বেকিং সোডা স্ক্র্যাবটি খুব সহজেই তৈরি করা যায় এবং এটি ব্যবহারে পায়ের ব্যথা উপশম হয়। এটি পায়ের ফাঙ্গাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি পায়ের ক্লান্ত ভাব দূর করে সতেজ ভাব ফুটিয়ে তোলে। এই স্ক্র্যাবটি শুধু পায়ের পাতার জন্য।
ক্স একটি বাটিতে আনারস পেস্ট আধা কাপ, মোটা চিনি আধা কাপ, টকদই ২ টেবিল চামচ ভালোভাবে মেশান। প্যাকটি আপনার পায়ে ১০-১২ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। তারপর আরো ১০ মিনিট রেখে দিন। সবশেষে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আনারসে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ এবং এনজাইম ত্বক এক্সফোলিয়েট করে ত্বকের মরা কোষ দূর করে এবং ত্বকের চামড়া উজ্জ্বল করে ও টেক্সচার উন্নত করে। ফুট স্ক্র্যাব করার ফলে পায়ের ওপরের চামড়া থেকে মরা কোষ দূর হয় এবং তাতে আপনার পা দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। এ ছাড়াও পা ফাটার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শরীরের জন্য স্ক্র্যাব
গলা, ঘাড়, বুক, পেট ও পিঠেরও দরকার স্ক্র্যাব। এ অংশগুলো ঢাকা থাকে বলে যতœ নেয়া হয় না। সপ্তাহে দুই-এক দিন এই অংশগুলোও স্ক্র্যাব করতে হবে।
ক্স চালের গুঁড়া দিতে হবে দুই টেবিল চামচ, দুই টেবিল চামচ করে গ্রেট করা শসা ও গাজর, দুধ আধা কাপ ও জলপাই তেল এক টেবিল চামচ ও কাঁচা হলুদ এক চা চামচ একসাথে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ব্যবহার করলে এ স্ক্র্যাবটি ত্বককে বেশ উজ্জ্বল করে তুলবে।
ক্স টমেটো স্লাইস করে কেটে তার ওপর মধু ও চিনি ছিটিয়ে দিয়ে তা পুরো শরীরে ঘষে নিন। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ক্স অ্যালোভেরার জেল দুই টেবিল চামচ, চিনি দুই টেবিল চামচ এবং মধু এক চা চামচ একসাথে মিশিয়ে স্ক্র্যাব তৈরি করুন। এবার শরীরে লাগিয়ে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর ৫ মিনিট শুকাতে দিন। এরপর ধুয়ে ফেলুন।
লিপ স্ক্র্যাব
শীতে ঠোঁট হয়ে পড়ে শুষ্ক ও রুক্ষ। ঠোঁট ফেটে যাওয়া, চামড়া ওঠাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় ঠোঁটে। তাই ঠোঁটও স্ক্র্যাব করার প্রয়োজন রয়েছে।
ক্স চিনি ও অলিভঅয়েল একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে হালকা হাতে এক্সফোলিয়েট করুন। তারপর ঈষদোষ্ণ গরম পানিতে ধুয়ে নিলেই হলো।
ক্স এক টেবিল চামচ বাদামি চিনি ও মধুর সাথে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে তা দিয়ে আলতোভাবে ঠোঁট ঘষে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ঠোঁট মসৃণ ও কোমল হবে।
ক্স নারকেল তেল ও চিনির সাথে লিপবাম মিশিয়ে নিন। এটি সাথে সাথে ঠোঁটে না মেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। তারপর মিশ্রণটি আলতোভাবে ঠোঁটে ঘষুন। এতে করে ঠোঁটের খসখসে ভাব দূর হবে।
হাত ও পায়ের তালুর জন্য স্ক্র্যাব
হাত ও পায়ের তালুও শীতের রুক্ষতা থেকে রেহাই পায় না। যার ফলাফল হাত ও পায়ের তালু শক্ত হয়ে যাওয়া, চামড়া ওঠা, ফেটে যাওয়া। এ জন্য এসব স্থানেও স্ক্র্যাবিং প্রয়োজন।
ক্স চিনি ও অলিভঅয়েল মিশিয়ে নিন। এ মিশ্রণটি হাত-পায়ের তালুতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন ৫ মিনিট।
লক্ষ রাখতে হবে :
ক্স খুব জোরে স্ক্র্যাব করা যাবে না। আলতো হাতে সার্কুলার মোশন বা চার দিকে ঘুরিয়ে স্ক্র্যাব করতে হবে।
ক্স অতিরিক্ত সংবেদনশীল ত্বকে স্ক্র্যাব না করাই ভালো।
ক্স বডি স্ক্র্যাব কখনো মুখে ব্যবহার করবেন না।
ক্স মুখ বা শরীরের অন্য যেকোনো অংশ স্ক্র্যাব করার পর সব সময় ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
ক্স সপ্তাহে দুই দিনের বেশি স্ক্র্যাব করা ঠিক নয়। সংবেদনশীল ত্বক হলে সপ্তাহে এক দিনের বেশি স্ক্র্যাব করা উচিত নয়।
ক্স সব ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেই দুই থেকে তিন মিনিট স্ক্র্যাব করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এর বেশি সময় স্ক্র্যাব করা যাবে না।
বিশেষ সতর্কতা
যাদের মুখে খুব বেশি ব্রণের সমস্যা তারা ভুলেও শক্ত দানাযুক্ত স্ক্র্যাব ব্যবহার করবেন না। এতে ব্রণের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্রণের সমস্যা আছে এমন ত্বকের জন্য বাজারে বিশেষ ধরনের স্ক্র্যাব পাওয়া যায়।
এ ছাড়া স্পর্শকাতর ত্বকেও মোটা দানার স্ক্র্যাব ব্যবহার করা ঠিক হবে না। যারা সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারী তারা ফলের এনজাইম দিয়ে তৈরি স্ক্র্যাব ব্যবহার করতে পারেন।