২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শীতে ত্বকের যতœ

মডেল : বীথি সরকার ছবি : মোহসীন আহমেদ কাওছার -


শীত চলে আসছে। ইতোমধ্যেই আবহাওয়া বেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে। চার দিকে ঋতু পরিবর্তনের সব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শীত আসার আগেই কিন্তু আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠতে থাকে। শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কমার কারণে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক, ঠোঁট ফাটা, পায়ের গোড়ালি ফাটা, ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলোময়লা বেশি থাকে। ফলে ময়লা জমে ত্বকে মৃত কোষের সৃষ্টি হয়। এ সময় ধুলোময়লা জমে আমাদের ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ত্বকে ব্রণ ও নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। তাই অন্য সময়ের থেকে শীতে একটু বেশিই ত্বকের যতœ নিতে হয়। শীতে ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে কিছু পরামর্শ থাকছে আজÑ
শরীরের ত্বকের যতœ : শীতকালে বাতাসে ধুলোবালুর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই শীতে ত্বকের যতেœর প্রথম ধাপ হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা। শীতে দেহকে উষ্ণ রাখতে সাধারণত আমরা গরম পানিতে গোসল করে থাকি। কিন্তু গরম পানি আপনার দেহকে উষ্ণ করবে ঠিকই, তবে ত্বককে রুক্ষ করে দেবে। তাই শীতে বেশি গরম পানি এড়িয়ে চলাই ভালো। এ সময় প্রতিদিন কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হবে। গোসলের পানিতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন বা অলিভ অয়েল দিয়ে গোসল করলে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে। এতে ত্বক ফেটে যাওয়া থেকেও রক্ষা পায়। শরীরের বাহ্যিক আর্দ্রতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আর্র্দ্রতা ধরে রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। ভাজা খাবার পরিহার করে মওসুমি ফল, সালাদ, শাকসবজি ও স্যুপ খেতে হবে। প্রতিদিন সকালে উঠে এক চা চামচ মধু খান। এতে ঠাণ্ডা যেমন লাগবে না ত্বকও হয়ে উঠবে সুন্দর।
ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে গোসলের আগে ত্বকে ভালো করে অলিভ অয়েল লাগিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। এরপর গোসল করে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগান। এ ছাড়াও শীতে ত্বকের জন্য দারুণ একটি স্ক্রাব তৈরি করা যায় অলিভ অয়েল দিয়ে। দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েলের সাথে চার টেবিল চামচ লাল চিনি এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। ত্বকে লাগিয়ে ঘষে ঘষে লাগিয়ে কয়েক মিনিট রাখুন। এরপর গোসল করে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগান।
হাতের যতœ : হাত শুষ্ক হয়ে গেলে হাতের চামড়ায় মৃতকোষের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে ময়েশ্চারাইজার ত্বকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না, ত্বক আরো শুষ্ক হয়ে যায়। এ জন্য সপ্তাহে দুই দিন অবশ্যই হাতের ত্বক এক্সফোলিয়েট করবেন অর্থাৎ স্ক্রাব করবেন। প্রতিদিন যখনি হাত ধোবেন, হাত ধোয়ার পর একটু ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না। আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে কোনো ডিপ ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। এ ছাড়াও মাসে দু’বার ম্যানিকিওর করুন।
হাঁটু, কনুই ও গোড়ালির যতœ : মুখ ও শরীরের ত্বকের পাশাপাশি গোড়ালি, হাঁটু, কনুইয়েরও বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন, বিশেষ করে শীতকালে। না হলে এগুলো রুক্ষ ও কালো হয়ে যায়? তাই হাঁটু ও কনুইয়ে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে ও একদিন পরপর স্ক্রাব করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে নারিকেল তেল ত্বকে মাখিয়ে নিন। এটা ত্বককে নরম রাখবে। এ ছাড়াও নিয়মিত গোসলের পর হাঁটু ও কনুইয়ে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল লাগাতে হবে। শীতের সময় পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া একটি বড় সমস্যা। আর এই সমস্যা সমাধানের একটি সহজ উপায় হলো গোসলের সময় পিউমিস স্টোন দিয়ে পায়ের গোড়ালি ঘষে পরিষ্কার করা এবং নিয়মিত পায়ে গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা। এ ছাড়াও ১৫ দিন পরপর পেডিকিওর করতে হবে। এ ছাড়াও পায়ের পাতা সুন্দর রাখতে দুই টেবিল চামচ বেসন, সামান্য কাঁচা হলুদ, ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস আর এক চা চামচ দুধ দিয়ে প্যাক বানিয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি পায়ে পাঁচ মিনিট ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন এই প্যাকটি ব্যবহার করলে অতি দ্রুত ফল পাবেন।
মুখের ত্বকের যতœ : শীতে শরীরের অন্যান্য অংশ ঢাকা থাকলেও মুখ খোলা থাকে, তাই শীতের হাওয়া সবচেয়ে বেশি লাগে মুখে। এতে ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে হয়ে উঠে শুষ্ক এবং ত্বকে চামড়া ওঠা শুরু হয়। তাই এ সময় মুখে একদমই সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। সাবান ব্যবহারে ত্বক আরো শুষ্ক হয়ে যায়। মুখ হালকা ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা মেডিকেটেড ক্লিনজার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। সানস্ক্রিনটি এসপিএফ ৫০ হলে ভালো হয়। সপ্তাহে এক বা দুই দিন স্ক্রাবিং করতে হবে। এতে করে মরা চামড়া ও কোষ ঝরে পড়বে। মুখের ত্বক শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে গেলে এই প্যাকগুলো ব্যবহার করতে পারেন। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, এক চা চামচ সর ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটা প্রতিদিন করতে পারেন। চার টেবিল চামচ ময়দার সাথে পরিমাণ মতো দুধের সর মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের যতেœ এই ফেসওয়াশটি অনেক কার্যকরী। পাকা কলা ও মধু এক সাথে ব্লেন্ড করে নিন? মুখে লাগান প্রলেপের মতো করে, তার পর ২০-২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন ও ময়েশ্চরাইজার লাগান। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় আর্র্দ্রতা, তা হয়ে উঠবে নরম ও কোমল। পাকা কলা, মধু আর সরের প্রলেপও শুষ্ক ত্বকের খুব ভালো একটি প্যাক হতে পারে।
ঠোঁটের যতœ : শীতে ঠোঁট ফাটার সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। ঠোঁট শুকিয়ে গেলে ঠোঁটে গ্লিসারিন মেখে হালকা ম্যাসাজ করতে হবে। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং মৃত কোষগুলো উঠে যাবে। ঠোঁটে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা উচিত। গোসল ও হাতমুখ ধোয়ার পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পাশাপাশি ঠোঁটেও পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। বাজারে পাওয়া যায় এমন পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে না চাইলে নারকেল তেল লাগাতে পারেন ঠোঁটে। তাছাড়া ঘরেও বানিয়ে নিতে পারেন পেট্রোলিয়াম জেলি। শীত শুরুর আগে থেকেই প্রতি রাতে ঠোঁটে লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ঘুমাবেন।
এ ছাড়া একটি লিপবাম সমসময় সাথে রাখবেন। যখনই প্রয়োজন হবে তখনই যাতে ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করার জন্য সপ্তাহে দুই-তিনবার লিপ স্ক্রাব করে নেবেন।
এ জন্য চিনি, মধু, লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁটে স্ক্রাব করে নিন। রাতে ঘুমনোর আগে ঠোঁটে ঘি ঘষে নিতে পারেন। এতে ঠোঁট নরম হবে এবং ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি মিলবে।


আরো সংবাদ



premium cement