অবসর হোক আনন্দময়
- মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
- ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
যান্ত্রিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছেন। সেই এক রুটিন। অফিস, সংসার। এই তো। মাঝে মধ্যে চরম একঘেয়ামি পেয়ে বসে। কিছুই হয়তো ভালো লাগে না তখন। মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। লাইফস্টাইলে একটু বৈচিত্র্য দরকার। কিন্তু কিভাবে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না একদম। বাড়তি অনেক টাকা খরচ করার মতো সামর্থ্যও আপনার নেই। একটু ভেবে দেখুন তো? আপনার অবসর কিভাবে কাটে। টিভি দেখেন কখনো, কখনোবা ঘুমান। অথচ অবসর সময়টা হতে পারে আনন্দময়। যদি না নিচের কাজগুলোর মধ্যে যেটি পছন্দ হয় সেটি বেছে নেন।
পোষা পাখি
বাংলাদেশে বাজরিগার, ফিঞ্চ, ডোভ, ককাটেইল, সান কৌনর, ম্যাকাও, লরিসহ বিভিন্ন বিদেশী খাঁচার পোষা পাখি কিনতে পাওয়া যায়। এদের বাহারি রং,আর চমকপ্রদ লাইফস্টাইল আপনাকে মুগ্ধ করবে। খাঁচার এই পাখিগুলো খাঁচায় ডিম বাচ্চা করে। এসব পাখি পালন আমাদের দেশের আইনে বৈধ। বারান্দায় যতসব আজেবাজে জিনিস ফেলে রেখেছেন, এটা যেন হয়ে গেছে মিনি স্টোররুম। বারান্দা পরিষ্কার করে সেখানে খাঁচায় করে পোষা পাখি পালন সম্ভব। পাখি অনুযায়ী খাঁচার সাইজ নির্ধারণ করা হয়। পাখি, খাঁচা, খাবার, ওষুধ সবই সহজলভ্য। রাজধানীর কাঁটাবন, নিমতলীসহ বিভাগীয় শহর, এমনকি জেলা শহর থেকে এসব জিনিস কিনতে পারবেন। প্রজাতি অনুযায়ী পাখির দাম বিভিন্ন রকম। ৫০০ থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। শুরুতে হাজার দেড়েক টাকা খরচ হতে পারে এক জোড়া পাখির জন্য। সুন্দর এসব পাখি আপনার মন ভালো রাখবে। অবসরের খানিকটা সময় পাখির স্পর্শ স্ট্্েরস কাটাতে ভূমিকা রাখবে। বাসার বাচ্চার গ্যাজেট আসক্তিও কমাতে পারে। খাবার পানি দেয়া আর খাবার দেয়া। দৈনিক এটুকুই কাজ পোষা পাখির জন্য। এতে যে খুব বেশি সময় লাগবে তাও নয়। পোষা পাখি খাঁচায় ডিম পাড়ে। বাচ্চাও করে থাকে। পোষা পাখি পালনে তাই বোরিং হওয়ার সুযোগ নেই। বরং বাচ্চাকে খাওয়ানো, পাখির গোসল করা, একে অন্যের গা খুঁটে দেয়া ইত্যাদি দৃশ্য আপনার মনে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেবে। নিঃসন্দেহে এ কথা বলা যায়। পাখি সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধানে ফেসবুকে দি ফিঞ্চ সোসাইটি অব বাংলাদেশ,বার্ডস ওয়ে : ন্যাচারাল টিমমেন্ট অ্যান্ড কেয়ার, বাংলাদেশ বার্ডস হেল্প গ্রুপ, চিটাগাং বার্ড ব্রিডারস অ্যাসোসিয়েশন, বাজরিগার সোসাইটি অব বাংলাদেশ, লাভবার্ড রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ ইত্যাদি এমন অনেক গ্রুপ আছে। এমনকি অনলাইনে পাখির খাবার, ওষুধও কেনা যায়।
অ্যাকুরিয়াম
অ্যাকুরিয়ামে বিভিন্ন বাহারি রঙের মাছ। কতই না ভালো লাগে। ছোট ছোট মাছগুলো ঘুরে বেড়ায়। মুগ্ধ হয়ে আপনি তা দেখেন। কিনতে সাহস হয় না। ভাবেন, কতই না ঝামেলা। এসব আপনাকে দিয়ে হবে না। আসলে কিন্তু ব্যাপারটা একদমই তা নয়। একটু সিস্টেম মেনে চললে অ্যাকুরিয়াম সবচেয়ে সহজ শৌখিন কাজ। কাঁটাবনে অ্যাকুুরিয়ামের দোকানে সব কিছুই কিনতে পাওয়া যায়। প্রথমেই আপনাকে অ্যাকুরিয়াম কিনতে হবে। সাথে স্ট্যান্ড। অবশ্য অর্ডার দিয়েও বানানো যায়। এর সাথে প্রয়োজন পড়বে ফিল্টার, লাইট, পাথর, মাছ, মাছের খাবার ইত্যাদি। দোকানদারের কথায় ভুলেও ঝার কেনা যাবে না। ঝার মাছ পালার জন্য নয়। অ্যাকুরিয়ামের শুরুতে ট্যাংক সাইকেল করতে হয়। প্রায় ৪০ দিন। মাটি, বালি দিয়ে আপনি প্ল্যান্টেড অ্যাকুরিয়ামও করতে পারেন। তবে এটা সিওটু (কার্বন ড্্রাই-অক্সাইড) এবং সিওটু ছাড়া দু’ভাবেই করা যায়। এক ফুট ক্লিস্টাল ক্লিয়ার গ্লাসের তৈরি করা অ্যাকুরিয়াম, অন্যান্য অনুষঙ্গিক জিনিস কিনতে হাজার দুই, আড়াই টাকা লাগতে পারে। ছোট মাছ, গাপ্পি, প্ল্যাটি, সিম্পÑ এসব এক ফুট অ্যাকুরিয়ামে রাখা যায়। অটো টাইমার কিনে লাইট, সিওটু অটো করা যায়। ছাড়া ও বন্ধ করার প্যারা নেই। পানি পরিবর্তন সপ্তাহে একবার করলে হয়। অ্যাকুরিয়ামে মাছ পালার এ টু জেড সহজেই জানা যাবে কোনো পয়সা খরচ না করেই। সেটার জন্য আপনাকে যেতে হবে ফেসবুকে বাংলাদেশ অ্যাকুয়ারিস্টস পেজে।
লেখালেখি
ছাত্র অবস্থায় কতই না গল্প কবিতা লিখেছেন। যেই না সংসার হলো। অমনি ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলেন। সৃজনশীলতাকে গলা টিপে হত্যা করলেন। অফিস শেষে বাসায় এসে অলস সময় কাটান। এই সময়টাতে লেখালেখি করতে পারেন। দৈনিক পত্রিকার প্রায় সব ফিচার পাতা উন্মুক্ত। পাঠকের লেখাগুলো পত্রিকাগুলো প্রকাশ করে। অত্যন্ত যতœসহকারে। পাতার উপরে বা নোটিশ আকারে লেখা পাঠানোর ঠিকানা দেয়া থাকে। কোন বিষয়ে লিখতে পারেন সে গাইড লাইনও দেয়া থাকে কোনো কোনো পত্রিকায়। লেখালেখির পূর্বশর্ত হলো প্রচুর পড়া। নিয়মিত কিছু না কিছু লেখা। আপনি যে পাতায় লিখবেন, সে পাতায় কী ধরনের লেখা ছাপে সেটা দেখতে হবে। বেশ কয়েকবার লেখা ছাপা হয়নি। এর মানে এই নয়, আপনাকে দিয়ে লেখালেখি হবে না। লেগে থাকলেই লেখালেখিতে সফলতা আসবে। হাত খরচের টাকা লিখে আয় করা সম্ভব। চোখ কান খোলা রাখুন। লেখার বিষয়ের শেষ নেই।
ছাদে বাগান
ছাদে কিংবা বারান্দায় খানিকটা জায়গা ফাঁকা। কয়েকটা টব কিনে গাছ লাগালেই হয়। কাজটা মোটেও কঠিন নয়। অবসরে বাগান করা যায়। ফুল তো বটেই, সবজির বাগান করা যায়। নিজের বাগানের সবজি, ভাবতেই কেমন জানি লাগে তাই না? বাগান করে অবসর সময় ভালোই কাটতে পারে ফেসবুকে বাগান বিষয়ে সাহায্য করে গাছ অদলবদল এবং পরিচর্যা গ্রুপ। এই গ্রুপে সমস্যা লিখে পোস্ট দিলে সাহায্য পাওয়া যায়। এ জন্য কোনো মূল্য দিতে হয় না।
ছবি তোলা
ছবি কথা বলে। একটি ছবি যেন একটি গল্প। এখন তো ক্যামেরার অভাব নেই। দামও কমে এসেছে। অবসরে ছবি তোলা যায়। শখে ছবি তুলে টাকা আয় করা সম্ভব। বিয়েশাদি, জন্মদিন কত উৎসব। এসব অনুষ্ঠান ছবি ছাড়া চলেই না। এসব জায়গা থেকে ডাক আসতে পারে। তবে একটুখানি জানাশোনা থাকলে ভালো। দৃকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। যারা ফটোগ্রাফিতে প্রশিক্ষণ দেয়। শৌখিন ফটোগ্রাফার হয়েও আপনি আয় করতে পারবেন। অন্তত হাত খরচের টাকাটা উপার্জন করা সম্ভব। তাতে মূল চাকরির কোনো বিঘœ ঘটবে না।
আপনি যে শখটাকেই লালন করুন না কেন সেটা যেন ভালোবাসা, যতœসহকারে হয়। অবহেলা, উদাসীনতা যেন না থাকে। পেশাগত সব কাজের ফাঁকেই উপরের শখগুলো পূরণ করা যাবে খুব সামান্য অর্থ খরচ করে। প্রয়োজনে স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের সাহায্য নিতে পারেন। তাদের অবসরটাও তখন হবে আনন্দময়।