২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রূপচর্চায় কলা

-

রূপচর্চায় কলার ব্যবহার চলে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। কলা খাওয়া যেমন শরীরের জন্য ভালো, কলা ত্বকে মাখা ত্বকের জন্য ঠিক ততখানিই উপকারী। কলার তৈরি ফেস মাস্কে থাকে ভিটামিন এ, বি ও ই এবং পটাসিয়াম। ভিটামিন এ ত্বকের দাগ দূর করে এবং খসখসে ভাব থকে ত্বককে থেকে মুক্তি দেয়। ভিটামিন বি ত্বককে আর্দ্র করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের জন্যও কলার খোসাও অনেক উপকারী। কলার খোসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা বলিরেখা দূর করে ত্বকের টান টান ভাব ফিরিয়ে দিতে পারে। এটি ত্বককে সজীব রাখতে সাহায্য করতে পারে। কলায় থাকা ভিটামিন ‘ই’ রক্ষক হিসেবে কাজ করে। এটি সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি, ধুলাবালি এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদান থেকে ত্বককে রক্ষা করে, ত্বকে বলিরেখা তৈরি হতে বাধা দেয়। পটাসিয়াম ত্বকের কোষগুলোকে হাইড্রেট করে এবং আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বক শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। আজ থাকছে চুল ও ত্বকের জন্য কলার কিছু প্যাক।
১টি পাকা কলা, ১ টেবিল চামচ ভিটামিন ‘ই’ অয়েল, ১ টেবিল চামচ টক দই ভালো করে মিশিয়ে ত্বকের ওপর লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। কুসুমগরম পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নেয়ার পর আবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে শেষবারের মতো মুখ ধুয়ে নিন। কলার তৈরি এই ফেস মাস্ক ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
চোখের আশপাশের দাগ দূর করার জন্য বেশি পাকা কলার খোসা চোখের ওপর লাগিয়ে রাখুন; অথবা ত্বকের যেসব জায়গায় বলিরেখা দেখা দিয়েছে সেখানে লাগান। নিয়মিত ব্যবহারে দাগ ও বলিরেখা দুটোই কমে আসবে।
একটি পাকা কলা খোসা ছাড়িয়ে নিন। তার পর কলা ও খোসা টুকরো করে কেটে নিন। টুকরো করা কলা, খোসা, এক টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো, এক টেবিল চামচ টক দই এক সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেড করে নিন। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে আলতো হাতে মাসাজ করে ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারে আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ দেখাবে।
পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে মুখটা ধুয়ে নিন। একটি কালো দাগ ধরা পাকা কলা নিন। মূল কলাটি আপনার কাজে লাগবে না। আপনার কাজের জিনিস হচ্ছে খোসাটি। খোসাটি ছাড়িয়ে নিন। এরপর খোসার ভেতরের সাদা অংশটি পুরো মুখে ঘষে নিন। কিছুক্ষণ ঘষার পরে যদি দেখেন খোসার ভেতরের অংশটি ধূসর হয়ে গিয়েছে, তা হলে সেই খোসাটি ফেলে দিয়ে একটি নতুন খোসা নিন। আবার ঘষুন মুখে। মুখের ওপর খোসার নির্যাসের একটি পুরু আস্তরণ তৈরি করে নিন। এই অবস্থায় যত বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব, থাকুন। তার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে মুখের দাগ ও বলিরেখা দুই-ই দূর হবে।
অনেকেই আঁচিল নিয়ে অনেক বিব্রত অবস্থায় পরেন। ঘরোয়াভাবে কলার খোসা এই আঁচিল দূর করতেও সাহায্য করতে পারে। কলার খোসার ভেতরের অংশ আঁচিলের ওপর রেখে কাপড় বা সুতা দিয়ে বেঁধে রাখুন সারা রাত। নিয়মিত ব্যবহারে আঁচিল শুকিয়ে পড়ে যাবে। তবে সাত দিনের মধ্যে এ পদ্ধতিতে আঁচিল পড়ে না গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
মুখের ব্রণ দূর করতে কলার খোসা উপকারী। এই উপায়ের মাধ্যমে একবার সেরে গেলে ব্রণ আর ফিরে আসে না। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে মুখে ভালো করে কলার খোসার ভেতরের সাদা অংশটি ঘষে সারা রাত রেখে দিলে ব্রণের সমস্যা কাটবে।
ত্বক যদি শুষ্ক আর খসখসে হয় তা হলে মধুর সাথে কলার খোসা মিশিয়ে মুখে ভালো করে ঘষে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক মসৃণ হয় ও দাগ দূর হয়, এ ছাড়াও বলিরেখাও দূর হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে অর্ধেকটা পাকা কলা চটকে তার সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট বানিয়ে নিন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। উজ্জ্বল ত্বক পেতে একটি পাকা কলা চটকে তার সাথে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রাকৃতিক স্ক্রাব বানাতে পাকা কলার সাথে চিনি মিশিয়ে নিন। মুখে ও গলায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। প্রাকৃতিক এই স্ক্রাব ত্বকের মৃত কোষগুলো সরিয়ে ফেলে ত্বককে করে তুলবে আরো উজ্জ্বল।
বয়সের ছাপ দূর করতে অ্যালোভেরার রস ও পাকা কলার মিশ্রণ খুব ভালো কাজ করে। একটি পাকা কলা ও এক টেবিল চামচ এলভেরার শাঁস একসাথে ব্লেন্দ করে নিন। সপ্তাহে তিন দিন ২০ মিনিট করে মুখে লাগিয়ে রাখলে অনেক উপকার পাবেন।
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে পাকা কলা চটকে চোখের চার পাশে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ফলাফল নিজেই টের পাবেন।
কলা আমাদের মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পকে হাইড্রেটেড এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে যা স্ক্যাল্পের শুষ্কতা, চুলকানি এবং চুল ফাটা কমিয়ে দেয়। নিয়মিত কলা দিয়ে রূপচর্চা করলে চুলের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়, কোঁকড়ানো চুল মসৃণ হয় এবং স্ক্যাল্পের চুলকানি কমায়। কলায় থাকা পটাসিয়াম ও প্রাকৃতিক তেল চুলের আগা ফাটা দূর করার পাশাপাশি চুলকে করে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যবান।
ঝলমলে চুল পেতে হলে তিনটি পাকা কলা (বেশি পাকা হলে ভালো), ৩ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ টক দই একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন যেন কলা মিহি পেস্ট হয়। চুলে লাগানোর আগে গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে পানি ঝেড়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে মাসাজ করে লাগিয়ে দিন। মাথায় একটি প্লাস্টিকের ক্যাপ এবং গরম রাখার জন্য তার ওপর তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখতে পারেন। এভাবে ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
একটি পাকা কলা চটকে এর মধ্যে একটি ডিম ফেটিয়ে ভালোভাবে মেশান। এরপর ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল ও ৩ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগান। ১ ঘণ্টা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল হবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও ঝলমলে।
একটি পাকা কলা চটকে ২ টেবিল চামচ টকদই, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস আর কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে নিন। এরপর চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। এতে চুলের আগা ফেটে যাওয়া কমবে।
একটি পাকা কলা চটকে ২ টেবিল চামচ মধুর মিশিয়ে ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের আগা ফেটে যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। কয়েক টুকরা পাকা পেঁপে ও পাকা কলা একসঙ্গে পেস্ট করে চুলে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়, চুল নরম হয় এবং চুলের আগা ফাটা দূর হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement