চুল থাকুক খুশকিমুক্ত
- ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
যারা খুশকির সমস্যায় ভুগেছেন শুধু তারাই জানেন এর যন্ত্রণা। খুশকির কারণে মাথা চুলকায় এবং অস্বস্তিকর অনুভূতিও হয়। এ ছাড়া চুল থেকে খুশকি কাঁধে ঝরে পরে যা বাইরের মানুষের সামনে লজ্জার কারণ হয়। খুশকি আসলে মাথার ত্বকের মৃত কোষ, যা একসাথে জমাট বেঁধে খুশকিতে রূপ নেয়। মৃত কোষ ঝরে যাবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এই মৃতকোষ ঝরে পরার মাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়, তখনই খুশকির প্রকোপ দেখা দেয়। লিখেছেন
কাজী তানজিলা মেহনাজ
খুশকির কারণ
বিভিন্ন কারণে খুশকি হয়ে থাকে। যেমন :
হ আবহাওয়া পরিবর্তন
হ শুষ্ক ত্বক
হ নানা ধরনের চর্মরোগ যেমন : সোরাইসিস, একজিমা
হ চুলের কোনো ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারে প্রতিক্রিয়া
হ মাথার ত্বক অতিরিক্ত ঘামলে
হ চুলের গোড়া ভালোমতো না শুকালে
হ মাথার ত্বকে ইস্ট জাতীয় ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ফলেও খুশকি দেখা দেয়।
খুশকি দূর করার কিছু সহজ উপায়:
ঘরে বসেই খুশকি দূর করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু একটু যতœ ও ধৈর্যের। কোনো কিছুই এক দিন বা এক সপ্তাহ লাগালেই খুশকি নির্মূল হয়ে যাবে না। অন্তত দেড় থেকে দুই মাস ধৈর্য ধরে যতœ চালিয়ে যেতে হবে। খুশকি দূর করার অনেকগুলো উপায় দেয়া হলো। দেখে নিন আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ কোন পদ্ধতিটি-
টি-ট্রি অয়েল:
এই অয়েল অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাগুণের কারণে এটি খুশকি দূর করায় অতি কার্যকর। সপ্তাহে দু-তিন দিন যেকোনো ব্র্যান্ডের টি ট্রি অয়েলের কিছু ফোঁটা নিয়ে টেবিল চামচ পরিমাণ নারিকেল তেল,অলিভ অয়েল অথবা আমন্ড অয়েল এর সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বক এ ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। ৫-১০ মিনিট রেখে এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার :
এই ভিনেগার ত্বকের পি-এইচ লেভেল পরিবর্তন করে সঠিক মাত্রায় আনে। একইভাবে এটি ত্বকে জন্ম নেয়া ইস্ট জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে, যার ফলে ত্বকে খুশকির প্রভাব কমে যায়। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার পানির সাথে সমপরিমাণে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ও ত্বকে ভালোভাবে স্প্রে করে নিতে হবে। এরপর তোয়ালে দিয়ে চুল ভালোভাবে মুড়িয়ে ৩০-৪০ মিনিট রেখে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এ পদ্ধতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার অবলম্বন করতে হবে।
রসুন :
রসুনের উপকারিতা নতুনভাবে বলার কিছুই নেই, সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে মোটামুটি সব রোগেরই ঘরোয়া পথ্য এই রসুন। ‘সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত এই রসুন খুশকি দূর করায় খুবই উপকারী। এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা খুশকি কিংবা যেকোনো ইনফেকশন জন্ম নেয়ায় বাধা দেয়। পাঁচ-ছয়টি রসুনের কোয়া ছেঁচে নিয়ে কিছুক্ষণ পর সেটি যেকোনো তেল বা মধুর সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। ১০ মিনিট পর তা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
অলিভ অয়েল :
খুশকি হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো শুষ্ক ত্বক। অলিভ অয়েল ত্বকের আদ্রতা ধরে রেখে ত্বককে খুশকির আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। রাতে ঘুমানোর আগে তিন-চার টেবিল চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিতে হবে। সকালে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোমতো ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে তিনবার এ পদ্ধতিটি অবলম্বন করলে খুব তাড়াতাড়িই খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
অ্যালোভেরা :
নিয়মিত অ্যালোভেরার প্যাক ব্যবহার করলে এটি চুলকে খুশকির আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। একই সাথে এটি চুলের গোড়া মজবুত করে ও চুল পরা কমায়। টি-ট্রি অয়েল এর সাথে মিশিয়ে চুলে লাগালে এটি খুব দ্রুত খুশকি দূরীকরণে কাজ করে। পাঁচ-ছয় ড্রপ টি-ট্রি অয়েলের সাথে দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোমত অ্যাপ্লাই করতে হবে। সারারাত রেখে সকালে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সপ্তাহে দু-তিন দিন চুলে অ্যালভেরা লাগাতে হবে।
কলা :
ত্বকে কলার উপকারিতা অপরিসীম, হোক তা মুখের কিংবা মাথার ত্বক। খুশকি দূরের পাশাপাশি চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। একটি কলা, এক টেবিল চামচ মধু, লেবুর রস, অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। ৩০ মিনিট এর জন্য প্যাকটি চুলে লাগিয়ে তারপর সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
মেথি :
চুলের জন্য মেথি খুবই উপকারী। খুশকি দূর করতে মেথি ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি একটি প্যাক খুবই কার্যকরী। ৩-৪ টেবিল চামচ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে মেথি ও ১ টেবিল চামচ পরিমাণ লেবুর রস দিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। পেস্টটি চুলের গোড়া থেকে শেষমাথা পর্যন্ত লাগিয়ে ৩০ মিনিটের মতো রাখতে হবে। এরপর খুব ভালোভাবে পেস্টটিকে চুল থেকে ধুয়ে ফেলতে হবে, অন্যথা চুলে মেথির অবশিষ্ট অংশ থেকে যাবে। এই পদ্ধতি খুশকি দূর করায় বহুল ব্যবহৃত।
মেহেদি :
মেহেদি ও লেবুর প্যাকের সাহায্যে সহজেই খুশকি দূর করা যায়। বাটা মেহেদির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে চায়ের লিকার, টকদই এবং সামান্য পরিমাণ লেবুর রস। প্যাকটি তৈরির আট ঘণ্টা পর এটি চুলের গোড়ায় ও চুলে ব্যবহার করতে হবে। প্যাকটি দুই ঘণ্টা চুলে রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুল মসৃণ ও খুশকিমুক্ত থাকবে।
নিমপাতা :
নিমের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ খুশকি দূর করতে অধিক কার্যকর। নিমপাতা ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। ওই পেস্ট চুলের গোড়ায় খুশকি আক্রান্ত জায়গায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। ১০-১৫ মিনিট রাখার পর চুল পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ডিম ও মধু :
শুষ্ক চুলের জন্য ২টি ডিমের কুসুম/ তৈলাক্ত চুল হলে ২ টি ডিমের সাদা অংশ/ স্বাভাবিক চুল হলে একটি ডিম, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ কাপ টকদই একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত লাগান। ২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে চুল শ্যাম্পু করে নিন। টকদই ও লেবু মাথার ত্বক থেকে খুশকি পরিষ্কার করে আর ডিম ও অলিভ অয়েল মাথার ত্বকে ও চুলে পুষ্টি যোগায়। যেদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করবেন সেদিন গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া যাবে না।
টকদই ও মধু :
এক কাপ টকদই, ২ টেবিল চামচ মধু, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে নিন। চুলের গোড়া থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত এই প্যাকটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। তার পর ধুয়ে ফেলুন।
নারকেল তেল ও লেবু :
তিন টেবিল চামচ নারকেল তেল গরম করে নিন। এর সাথে সমপরিমাণ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মাথার ত্বকে ঘষে ঘষে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক থকে খুশকি বেশি হয়, নারকেল তেল মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। আর লেবুর রস খুশকির চিকিৎসা করে।
বেকিং সোডা :
মাথার চুল হালকা ভিজিয়ে নিন। ভেজা তালুতে বেকিং সোডা হালকা করে ঘষে ঘষে লাগান। ২-৩ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সোডা পুরো চুলে লাগাবেন না, শুধু তালুতে লাগান। যেদিন বেকিং সোডা লাগাবেন তালুতে, সেদিন শ্যাম্পু করা যাবে না। প্রতি সপ্তাহে ১-২ বার এ পদ্ধতিটি অবলম্বন করুন। কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চালিয়ে যান যতদিন খুশকি দূর না হয়। বেকিং সোডা মাথার ত্বকের পিএইচ লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বকে খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাক জন্মাতে দেয় না।
কমলালেবুর খোসা :
খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে কমলালেবুর খোসা খুব ভালো কাজ করে। ২টি কমলালেবুর খোসা, এ টেবিল চামচ লেবুর রস একসাথে ব্লেন্ড করে নিন। এই পেস্টটি মাথার তালুতে আধাঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। তার পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি দূর না হওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে তিন বার এই প্যাকটি লাগাতে হবে।
পেঁয়াজ :
পেঁয়াজ মিহি করে বেটে নিন। রস ছেঁকে নিন। পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ভালো করে ঘষে ঘষে লাগান। ২০-২৫ মিনিট রেখে চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুই বার মাথার তালুতে পেঁয়াজের রস লাগান যত দিন পর্যন্ত খুশকি একেবারে চলে না যায়।