২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাঙালির মিষ্টিপ্রীতি

-

বাঙালি মাত্রই মিষ্টির প্রতি থাকে আলাদা টান। দুপুর কিংবা রাতের খাবারের পরে মিষ্টি তাদের জন্য অপরিহার্য। হরেক রকম মিষ্টি আইটেম দিয়ে সাজানো থাকে তাদের ডেজার্ট টেবিল। সেখান থেকে কিছু আইটেম নিয়ে রেসিপি দিয়েছেন : তাসলিমা সুলতানা
ছানার বরফি

উপকরণ : দেড় কাপ ছানা, ২০০ মিলি কনডেন্সড মিল্ক, সিকি চা চামচ এলাচ গুঁড়ো, ৫-৭টি পেস্তা (কুচি করে নেয়া), ২ টেবিল চামচ ঘি।
প্রণালী : একটি সসপ্যানে ছানা ও কনডেন্সড মিল্ক নিন। চুলা জ্বালাবেন না। ছানা ও কনডেন্সড মিল্ক ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার চুলা জালান। মৃদু আঁচে রান্না করুন যতক্ষণ মিশ্রণটি ঘন না হয়ে যায়। ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। ৬-৭ মিনিট পর এলাচ গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে চুলা বন্ধ করে দিন। একটি চারকোনা পাত্রে ঘি ব্রাশ করে নিন যাতে ছানা নিচে লেগে না যায়। এবার রান্না কড়া ছানা ও কনডেন্সড মিল্কের মিশ্রণটি এই পাত্রে ঢেলে সমান করে বিছিয়ে দিন। উপরে পেস্তা কুচি ছিটিয়ে দিন। ঠাণ্ডা করুন। ২ ঘণ্টা ফ্রিজে রাখুন। তার পর চারকোনা আকারে কেটে পরিবেশন করুন।

গোলাপজাম

উপকরণ : ১ কাপ চিনি, ৩টি এলাচ, দেড় কাপ পানি, ২৩ ফোঁটা লেবুর রস, আধা কাপ গুঁড়ো দুধ, ১ টেবিল চামচ ময়দা, ১ চিমটি বেকিং সোডা, ১ টেবিল চামচ ঘি, ৩ টেবিল চামচ তরল দুধ, তেল (ভাজার জন্য)।

প্রণালী : গুঁড়ো দুধ, ময়দা ও বেকিং সোডা একটি পাত্রে নিন। ভালোভাবে মেশান। এবার এতে ১ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে আবারো খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এতে ২ টেবিল চামচ তরল দুধ দিন, হাত দিয়ে ভালোভাবে মেশান। প্রয়োজন হলে আরো কয়েক চামচ তরল দুধ মিশিয়ে আলতো করে মাখিয়ে একটি খামিরের মতো বানিয়ে নিন। বেশি জোরে মাখাবেন না। হাতে তেল মাখিয়ে নিন। খামির থেকে মার্বেল আকারের ৯-১০টি বল বানিয়ে নিন, বেশি বড় আকার বানাবেন না। বলগুলো একদম মসৃণ হবে, কোনো ফাটা থাকবে না। যদি ফাটা থাকে তাহলে বুঝবেন খামির বেশি শুকনো আছে, আরো কয়েক চামচ দুধ মিশিয়ে আবার আলতো করে মাখিয়ে নিন। একটি বড় প্যানে মাঝারি আঁচে তেল গরম করুন। তেল কড়া গরম হওয়া চলবে না, মোটামুটি গরম হলে এক চিমটি খামির এতে দিয়ে দেখুন। যদি তেলে দেয়ার সাথে সাথে খামির তেলের ওপর চলে আসে, তার মানে তেল মাঝারি গরম হয়েছে। একে একে বলগুলো তেলে দিন। মৃদু আঁচে ভাজুন। আস্তে আস্তে মিষ্টির রঙ সোনালি হতে থাকবে। হালকাভাবে নেড়েচেড়ে মিষ্টিগুলো ডুবো তেলে লাল করে ভেজে তুলুন।
কিচেন টিস্যুতে রাখুন যাতে অতিরিক্ত তেল দূর হয়ে যায়। অন্য একটি বড় সসপ্যানে ১ কাপ চিনি, ৩টি এলাচ, দেড় কাপ পানি ও ২ ফোঁটা লেবুর রস নিন। লেবুর রস শিরা জমে যেতে বাধা দেয়। মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন যতক্ষণ শিরা ঘন না হয়ে যায়, ৮-১০ মিনিটের মধ্যেই সিরা ঘন হয়ে যাবে। তার পর চুলা বন্ধ করে দিন। এতে ভাজা মিষ্টিগুলো দিন। কমপক্ষে ২ ঘণ্টা সিরায় ডুবিয়ে রেখে তার পর পরিবেশন করুন।


রসগোল্লা

উপকরণ : খাঁটি গরুর দুধ ১ লিটার, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস, ৩টি এলাচ, দেড় কাপ চিনি (বেশি মিষ্টি চাইলে আরো ১ কাপ চিনি দিতে পারেন), ৪ কাপ পানি।
প্রণালী : ছানা : মাঝারি আঁচে দুধ জ্বাল দিন। দুধ ফুটতে শুরু করলে একটি ছোট বাটিতে ২ টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে ২ টেবিল চামচ পানি মেশান। এবার ফুটন্ত দুধে এই লেবুর রসের মিশ্রণটি দিয়ে দিন। ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। ১-২ মিনিটের মাঝে দুধ ছানা হয়ে যাবে। পুরোপুরি ছানা হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে দিন। একটি বড় ছাঁকনির ভেতর পাতলা কাপড় বিছিয়ে সেই ছাঁকনি দিয়ে ছানা ছেঁকে নিন। কলের নিচে ছানাসহ ছাঁকনিটি পেতে পরিষ্কার পানি দিয়ে ছানা ২-৩ বার ধুয়ে নিন। এতে করে ছানার টকভাব চলে যাবে। এবার কাপড়টি আলতো করে চেপে চেপে পানি ঝরিয়ে নিন। ছানাসহ কাপড়টি ৩০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখুন। এতে করে বাকি পানিও ঝরে যাবে। কোনোভাবেই ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ছানার পানি ঝরানো যাবে না। এতে ছানা বেশি শক্ত হয়ে যাবে। ৩০ মিনিট পর কাপড় খুলে ছানা বের করে প্লেটে রাখুন। হাত দিয়ে ডলে ছানা একদম মিহি ও নরম করে নিন যাতে একটি খামিরের মতো হয় এবং হালকা তেল বের হতে থাকে। যখন দেখবেন হাত তেলতেলে অনুভূত হচ্ছে তখন বুঝবেন ছানা তৈরি হয়ে গেছে, আর মাখাবেন না ছানা। একদম পারফেক্ট মিষ্টির জন্য ছানা সামান্য ভেজা ভেজা হবে। বেশি শুকনো হলে মিষ্টি শক্ত হবে, বেশি ভেজা হলে মিষ্টি ভেঙে যাবে।
রসগোল্লা : ছানার খামির থেকে ছোট ছোট বল বানিয়ে নিন। চিনির সিরায় ডুবালে এই বল আকারে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাই মিষ্টির জন্য ছোট ছোট বল বানান। একটি সসপ্যানে ৪ কাপ পানি, দেড় কাপ চিনি ও ৩টি এলাচ দিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন, চুলার আঁচ কমানো যাবে না। যখন টগবগ করে ফুটতে থাকবে, তখন মিষ্টির বলগুলো আস্তে আস্তে সিরায় ছেড়ে দিন। এবার ঢাকনা দিয়ে পাত্রটি ঢেকে দিন। ৫ মিনিট পর ঢাকনা তুলে একটি চামচ দিয়ে আলতো করে মিষ্টির বলগুলো নেড়ে দিন। আবার ঢেকে দিন। ৪ মিনিট পর আবার ঢাকনা তুলে নেড়ে দিন, ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। আরো ৪-৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলুন, চুলা বন্ধ করে দিন। দেখবেন মিষ্টিগুলো আকারে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। একটি বড় পাত্রে ঢেলে ঠাণ্ডা করুন। তারপর পরিবেশন করুন।

রসমালাই

উপকরণ : ১ লিটার দুধ থেকে তৈরি করা ছানা, আধা কেজি খাঁটি গরুর দুধ, আধা কাপ চিনি (মিষ্টি দুধের জন্য), সিকি চা চামচ এলাচ গুঁড়ো, ৮টি কাঠবাদাম কুচি, ৮টি পেস্তা কুচি, ১ চিমটি জাফরান (না দিলেও চলবে)।
প্রণালী : রসগোল্লার রেসিপি অনুযায়ী ছানা বানিয়ে নিন ও ছানা থেকে একদম ছোট ছোট আকারে বল বানিয়ে নিন, বলগুলো হাত দিয়ে চাপ দিয়ে চ্যাপটা করে নিন। প্রেশারকুকারে ১ কাপ চিনি ৩ কাপ পানি দিন। পানি ফুটতে শুরু করলে এতে ছানার চ্যাপটা বলগুলো দিন। ঢাকনা বন্ধ করে দুই সিটি পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। দুই সিটি হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে আরো ৫ মিনিট রান্না করুন। চুলা বন্ধ করে ১ ঘণ্টা রাখুন। অন্য একটি সসপ্যানে আধা লিটার দুধ দিন। ২০ মিনিট মৃদু আঁচে জ্বাল দিন। অন্য একটি পাত্রে জাফরান, আধা চামচ চিনি ও সিকি চামচ এলাচ গুঁড়ো একসাথে হাত দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি জ্বাল দিতে থাকা দুধে মেশান। ১০ মিনিট জ্বাল দিন। আধা কাপ চিনি মেশান। এতে কাঠবাদাম কুচি ও পেস্তা কুচি দিয়ে আরো ৫ মিনিট জ্বাল দিন। মিষ্টি এক ঘণ্টা সিরায় ভেজার পর মিষ্টিগুলো আলতো করে চামচ দিয়ে তুলুন। আরেকটি চামচ দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে সিরা ঝরিয়ে নিন। এবার দুধের মিশ্রণে মিষ্টিগুলো ছেড়ে দিন। ঠাণ্ডা হতে দিন। দারুণ মজার রসমালাই তৈরি।

বালুসাই

উপকরণ : (ডো এর জন্য) ময়দা ২ কাপ, গুঁড়োদুধ আধা কাপ, জায়ফল গুঁড়ো ১ চা চামচ, ঘি আধা কাপ, বেকিং পাউডার আধা চা চামচ, তেল প্রয়োজন মতো ও মাওয়া ৩ টেবিল চামচ।
শিরা তৈরির জন্য : পানি দেড় কাপ, চিনি দুই কাপ ও এলাচ ৪টি।
প্রণালী : ময়দা, গুঁড়ো দুধ, ঘি ও বেকিং পাউডার এক সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার আধা কাপ পানি দিয়ে মেখে নিন। মাখানো হলে তা ১২ ভাগে ভাগ করে নিন। হাতে গোল গোল করে ভেতরে মাওয়া ও জায়ফলগুলো দিয়ে গোল করে মধ্যখানে চ্যাপ্টা করে দিন। এরপর সেগুলোকে ডুবো তেলে হাল্কা আঁচে বাদামি করে ভেজে তুলে নিন। চিনি ও পানি জ্বাল দিয়ে মাঝারি ঘন শিরা তৈরি করুন। গরম অবস্থায় চিনির সিরার মধ্যে দিয়ে ৭-৮ মিনিট রেখে তুলে নিন। গরম অবস্থায় মাওয়ার মধ্যে গড়িয়ে নিন, আর তৈরি হয়ে গেল বালুসাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল