২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ত্বকের জন্য স্কিন ফাস্টিং

-

দিনের পর দিন মেকআপের ভারে ক্লান্ত ত্বকের প্রয়োজন কিছু দিনের জন্য মেকআপ থেকে বিরতি।
এরই পোশাকী নাম স্কিন ফাস্টিং। কিভাবে করবেন? সেটা জানাবেন রেড বিউটি স্যালনের
প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভিন

স্কিন ফাস্টিং কী
বেশ কয়েক দিন ভরপেটে খাওয়া দাওয়া করলে কয়েক দিনের জন্য পাচনযন্ত্রটিকে একটু বিশ্রাম দিতে হয়। যাতে সে আবার তার পুরনো কর্মদ্যোম ফিরে পায়। ঠিক তেমনি সপ্তাহভর অনুষ্ঠান, পার্টি ইত্যাদির পরে ত্বকের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। কয়েক দিন সে মেকআপ ছেড়ে শান্তিতে বিশ্রাম নিতে চায়। এই নো মেকআপ ফেজটাই ত্বকের পুরনো জেল্লা আবার ফিরিয়ে আনে। অর্থাৎ, কোনো কিছুর ‘ওভারলোড’ মোটেও ভালো নয়। ঠিক এখান থেকেই ‘স্কিন ফাস্টিং’য়ের অবতারণা। কয়েক দিনের জন্য মেকআপ আর বিউটি প্রডাক্টকে ছুটি দিয়ে দিন। এতে ত্বকের উপকারই হবে! অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মেকআপ না করলে বা হালকা মেকআপ করলে ত্বক আরো তরুণ ও প্রাণবন্ত দেখায়। প্রতিদিন ভারী মেকআপ করলে ত্বকের কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যায়। ফলে ত্বক বুড়িয়ে যায় দ্রুত। আবার মেকআপে থাকা কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভের ফলে ত্বকে অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে। ত্বকের ওপেন পোর ব্লক করে দেয় মেকআপ প্রডাক্টে থাকা নানা রাসায়নিক। সপ্তাহে দু’দিন মেকআপ কম করলে ত্বকে নতুন কোষ জন্মায়। এই কোষগুলো স্বাস্থ্যকর। ডিটক্সিফিকেশনের মূল উপায় এটাই। তবে আপনি যদি আরো ইনটেন্স ডিটক্সিফিকেশন চান, তাহলে বছরে দু’বার টানা তিন সপ্তাহ করে ফাস্টিং করুন। মানে, আপনার ত্বককে সপ্তাহ দুয়েকের জন্য মেকআপ থেকে দূরে রাখুন। শুধু মেকআপ নয়, অন্য বিউটি প্রডাক্টের জন্যও এই নিয়ম মেনে চলতে পারেন। শুধু এই ক’দিনে অ্যাসেনশিয়াল কয়েকটি জিনিস ব্যবহার করতে পারেন। ক্লেনজার আর সানস্ক্রিন কিন্তু বাদ দেবেন না। ত্বক পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত ক্লেনজিং খুব জরুরি। মেকআপ না করে থাকা মানেই একেবারে কোনো প্রডাক্ট ব্যবহার করবেন না, তা নয় মোটেও। এই ক’দিন ত্বকের ডিটক্সিফিকেশনের জন্য ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন। ডিটক্সিফায়িং ক্লে মাস্ক খুব উপযোগী। মুখে বা সারা শরীরে এই মাস্ক লাগিয়ে রাখুন অন্তত ১৫ মিনিট। তারপর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক-দু’বার ব্যবহার করতেই পারেন এ ধরনের মাস্ক। বি বি ক্রিম বা ফাউন্ডেশন না হয় নাই লাগালেন, কিন্তু তার বদলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকবে। সপ্তাহে দু’দিন এরকম মেকআপ ফ্রি রুটিন মেনে চললে কয়েক মাস পরে ফলাফল স্পষ্ট দেখতে পাবেন। ডিটক্সিফিকেশনের প্রক্রিয়া শুরু করার পর ত্বকে দাগ ছোপ দেখা দিতে পারে। এতে ঘাবড়ে যাবেন না। এই চিহ্ন দেখলে বুঝতে পারবেন, ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া কাজ করতে শুরু করেছে।

ত্বকের স্বাস্থ্য ফেরাতে
বাতাসে ধুলোবালি আপনার ত্বকের ক্ষতি করছে অহরহ! এতে ত্বকের পোরস বা ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ত্বক হয়ে পড়ে নির্জীব। এর ওপরে যদি নিয়মিত চড়া মেকআপ করেন, তাহলে সমস্যা আরো বাড়বে বই কী! তাই, ত্বককে মাঝেমধ্যে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে দিন। কয়েকটি সাধারণ জিনিস ট্রাই করতে পারেন :
ড্রাই ব্রাশিং : গোসলের ঠিক আগে সাধারণ ব্রাশ দিয়ে ত্বককে শুকনো অবস্থায় একবার ব্রাশ করে নিন। পায়ের নিচ থেকে শুরু করুন। ধীরে ধীরে সার্কুলার মোশনে ব্রাশ করুন। উপরের দিকে উঠুন। একে একে হাত, পিঠ, স্টমাক এরিয়ায় ব্রাশ করুন। এতে ডেড স্কিন সেল ঝরে যাবে। রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। এমনকি এ ধরনের ড্রাই ব্রাশিং মাংসপেশিকে টোন করতেও সাহায্য করে। ড্রাই ব্রাশিংয়ের পরে পুরো শরীরে একবার অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। খুব ভালো হয় যদি তিল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। কয়েক মিনিট রেখে দিন। তারপরে স্নান করে নিন। রিফ্রেশিং লাগবে। এই পদ্ধতি ত্বকের ক্লান্তি অনেকটাই কাটিয়ে দিতে পারবে।
গোসলের মাধ্যমে ডিটক্সিফিকেশন : হালকা গরম পানিতে ২০ মিনিট নিজেকে ডুবিয়ে রাখুন। খুব ভালো হয় যদি গোসলের পানিতে বা বাথটবে ১ কাপ এপসম সল্ট, ১ কাপ সি সল্ট ও ১ কাপ তিল তেল মিশিয়ে নেন। এই পুরো পদ্ধতিটি ডিটক্সিফিকেশনের জন্য আদর্শ। সপ্তাহে দু’বার রিপিট করুন এই পদ্ধতি। ত্বকে জমে থাকা ধুলোবালি বা ময়লা পরিষ্কার করতে এই গোসলের বিকল্প নেই। এছাড়া কুসুম গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে গোসল করতে পারেন। এতে যেমন রিফ্রেশিং লাগবে, তেমনি সারা দিন একটা সুগন্ধ আপনাকে ঘিরে থাকবে।
প্রডাক্ট থেকে বিরতি : আগেই বলা হয়েছে, ত্বককে রোজকার মেকআপ প্রডাক্ট থেকে অন্তত তিন সপ্তাহের বিরতি দিন। তবে অনেকের পক্ষেই এতদিন ধরে মেকআপ না করে থাকা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ বা সপ্তাহে দু-তিন দিনের জন্য এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি দিয়ে মুখ ধুবেন। কোনো ফেসওয়াশ ব্যবহার না করেই দেখুন না! ফেস সেরাম ব্যবহার করতে পারেন। ক্লেনজিংয়ের পরে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগে সেরাম ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে সেরাম খুব উপযোগী। সেরাম এক ধরনের ময়েশ্চারাইজার। তবে এটির কাজ পুরোপুরি ময়েশ্চারাইজারের মতো নয়। আপনার ত্বকের প্রকৃতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেরাম বেছে নিতে পারেন। রোদে বাইরে বেরুনোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাবেন। তবে ওয়াটার বেসড সানস্ক্রিন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এটি প্রকারান্তরে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখবে। রাতে ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এমন কোনো ক্লেনজার বেছে নিন যেটি কেমিক্যালমুক্ত ও পিএইচ ব্যালেন্সড। সাবান, ফোমিং ক্লেনজার বা কড়া স্ক্রাব ব্যবহার করবেন না। ত্বক খুব ড্রাই হলে মাইল্ড ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। সারা দিন যখনই সময় পাবেন পানি দিয়ে মুখ ধোবেন। প্রয়োজনে ওয়েট ওয়াইপস ব্যবহার করতে পারেন।

অনুলিখন : সাকিবুল হাসান


আরো সংবাদ



premium cement