মনের মতো ছোট্ট বাসা
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ঢাকার মতো ঘনবসতি শহরে আজকাল বড় এবং খোলামেলা একটি বাসা বেশির ভাগ মানুষেরই সাধ্যের বাইরে। তাই বলে কি সুন্দর ও মনোরম একটি বাসায় থাকা হবে না? বিশাল ফ্ল্যাটে না হয় নাই বা থাকলাম, তাই বলে কি বাসা ছোট্ট মানেই তা অসুন্দর? মোটেই নয়। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে সাঁজালে ছোট্ট বাসাও অনেক সুন্দর ও মনোরম হতে পারে। ভাববেন না ঘর সাজানো খুব কঠিন বা খরচসাধ্য ব্যাপার। শুধু একটু বুদ্ধি খাটাতে হবে, কারণ ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে কখনো কখনো খুব ছোট ছোট জিনিসই সবচেয়ে বোশ প্রভাব ফেলতে পারে। সেটি হতে পারে একটি ছোট গাছ, একটি টেবিল ল্যাম্প, একটি আয়না, একটি পেইন্টিং বা একটি ছোট্ট শোপিস। কখনো দেয়ালের রঙটা বদলে দিলেই ঘরের সৌন্দর্য বেড়ে যায়। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা অতি সহজ কিছু বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে থাকেন যা সহজসাধ্য ও সাশ্রয়ী। সে রকমই কিছু টিপস নিয়ে লিখেছেন
কাজী তানজিলা মেহনাজ
ছোট ঘরে হালকা রঙ
ঘরের আকার ছোট হলে দেয়াল ও মেঝের রঙ হওয়া উচিত হালকা ও নরম শেডের। হালকা রঙের দেয়ালে আলো প্রতিফলিত হওয়ার কারণে ঘর বেশি আলোকিত ও বড় দেখায়। অন্য দিকে একটি ঘর যত বড়ই হোক না কেন, বা সেই ঘরে যত বড় জানালা এবং যত বেশি আলো-বাতাসই থাকুক না কেন, গাঢ় রঙের দেয়ালের কারণে ঘরটিকে ছোট ও গুমোট মনে হয়।
বড় জানালা
ঘর যত ছোটই হোক না কেন, সেই ঘরে বড় একটি বা দু’টি জানালা থাকলে ঘরটিকে বাক্স মনে হবে না, দমবন্ধ ভাব আসবে না। বড় জানালা দেখতে যেমন সুন্দর, বড় জানালার কারণে ঘরে আলো বাতাসও বেশি আসে।
আয়না ব্যবহার করুন
ছোট জায়গা বড় দেখাতে আয়নার ব্যবহার অপরিহার্য। দেয়ালে বড় বা মাঝারি আয়না লাগানোর ফলে ছোট জায়গাকেও বড় বলে মনে হয়, ঘরের আয়তন দ্বিগুণ দেখায়। প্রাকৃতিক আলো বাড়াতেও আয়নার জুড়ি নেই। জানালার ঠিক অপর পাশের দেয়ালে আয়না লাগাতে হবে। আয়নাটি জানালার দিকে মুখ করে থাকবে। এতে আয়নায় জানালার প্রতিবিম্ব পড়বে, তাই আয়নাকেও জানালা মনে হবে। ফলে ঘরটি বেশ খোলামেলা দেখাবে এবং আয়না থেকে প্রাকৃতিক আলো প্রতিফলিত হয়ে ঘর থাকবে উজ্জ্বল ও আলোকিত। এ ছাড়াও সুন্দর কারুকাজ করা ছোট ছোট আয়না আপনার ঘরে এনে দেয় রুচির ছোঁয়া।
মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজান
মডার্ন আসবাবপত্রের পাশাপাশি আপনার নিজের হাতের তৈরি করা কিছু, বা দেশীয় ঐতিহ্যবাহী কোনো শোপিস রাখতে পারেন। বড় ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা ঘর সাজাতে গেলে একটি কথাই বলেন, আপনার বাড়ি যেন আপনাকে তুলে ধরে। এর মানে হলোÑ আপনার বাসার সাজসজ্জায় আপনার ছোঁয়া থাকা উচিত। বিদেশী আসবাবপত্র কিনেছেন বলে যে দেশীয় শোপিস কিনতে পারবেন না, তা কিন্তু নয়। আবার পরিবারের অনেক পুরনো ঐতিহ্যবাহী কিছু, যেমনÑ আপনার নানী বা দাদীর ব্যবহার করা পিতলের কোনো ছোট্ট তৈজসপত্র শোপিস হিসেবে সাজাতে পারেন।
গাছের সৌন্দর্যকে কাজে লাগান
বাসাভর্তি গাছ রাখুন, যতগুলো গাছ রাখলে চলাফেরা বা কাজকর্মে অসুবিধা হবে না ততগুলোই রাখুন। প্রতিটি রুম গাছ দিয়ে সাজান, গাছের সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে আপনার বাসার সৌন্দর্য বাড়ান। শোবার ঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর সব জায়গায় ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের গাছ রাখুন। গাছ আপনার ঘরে রঙের ছোঁয়া এনে দেবে। তা ছাড়া গাছ কিন্তু দামেও বেশ সস্তা। পরিবেশের জন্য গাছের উপকারিতা তো জানাই আছে সবার। গাছ আপনার ঘরের বাতাস থেকে দূষিত পদার্থ শুষে নিয়ে বাতাস পরিষ্কার করে, আপনার ঘরের তাপ ও আর্দ্রতা কমায়।
বিল্ট ইন শোকেস বা বুককেস ও করিডোর সাজান
বাসায় যদি কোনো বিল্ট ইন শোকেস বা বুককেস থেকে থাকে, তাহলে এটি আপনার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। বিল্ট ইন শোকেস বা বুককেসের পেছনে কাঠের বদলে দেয়াল থাকে। এই দেয়ালটুকুতে ভিন্ন উজ্জ্বল কোনো রঙ করে ঘরের চেহারাই পাল্টে ফেলতে পারেন, পুরো দেয়াল রঙ করানোর প্রয়োজন নেই। যেমন ঘরের রঙ হালকা সবুজ হলে শোকেস বা বুককেসের পেছনের অংশটুকু নীল রঙ করানো যেতে পারে। বাসায় করিডোর থাকলে সেটিও আলাদা কোনো একটি উজ্জ্বল রঙে রাঙিয়ে নিতে পারেন।
কার্পেট ব্যবহার করুন
ঘরে আলাদা আভিজাত্য এনে দেয় একটি রুচিশীল কার্পেট। প্রতি ঘরেই কার্পেট রাখুন। সম্ভব না হলে অন্তত বসার ঘরে সুন্দর একটি কার্পেট রাখুন। কার্পেট হতে হবে বড় আকারের। ছোট কার্পেটের কারণে ঘর ছোট দেখায়। আজকাল বাজারে বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালে তৈরি ভিন্ন ভিন্ন আকার-আকৃতি ও নকশার কার্পেট পাওয়া যায়। আপনার ঘরের সাথে মানানসই কার্পেটটি বেছে নিন। দেখুন একটি কার্পেট কী করে আপনার বাসার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে লক্ষগুণে। বাসায় ছোট ছেলেমেয়ে থাকলে এমন কার্পেট বাছুন যেটি ওয়াশেবল। যাতে করে ময়লা হলেই ধুয়ে নিতে পারেন।
পেইন্টিং বা ওয়াল আর্ট অপরিহার্য
বাসার দেয়াল খালি ফেলে রাখবেন না। প্রতিটি ঘরের অন্তত একটি দেয়ালে একটি পেইন্টিং বা ওয়াল আর্ট রাখার চেষ্টা করুন। সেগুলো যে নামী-দামি শিল্পীর আঁকা হতে হবে তা নয়, হতে পারে অনেকগুলো পারিবারিক ছবি দিয়ে বসার ঘরের একটি দেয়াল সাজালেন। আপনার পরিবারের কারো আঁকা ছবি থাকল কোনো একটি ঘরে। কিছু পেইন্টিং কিনলেন, না হয় সিরামিকের বিভিন্ন আকারের প্লেট দিয়েই একটি দেয়াল সাজিয়ে নিলেন। এখন খুব কম দামে পুরো দেয়ালজুড়ে বিশাল একটি ঘড়ি লাগানোর ফ্যাশন চলছে। সেটিও করতে পারেন কোনো একটি দেয়ালে।
স্লিপ কভার ব্যবহার করুন
আজকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর স্লিপ কভার পাওয়া যায়। আসবাবপত্র বিশেষ করে সোফা ঢেকে রাখার জন্য স্লিপ কভার অত্যন্ত জরুরি। বাসায় ছোট শিশু থাকলে আসবাবপত্রের রঙ নষ্ট হয়ে যায় বা ময়লা হয়ে যায়। স্লিপ কভার দিয়ে ঢেকে রাখলে আসবাবপত্র নতুনের মতো থাকে বহুদিন। হালকা রঙের স্লিপ কভার ব্যবহারে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। চাইলে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রঙের স্লিপ কভার ব্যবহার করতে পারেন।
বেতের তৈরি পণ্য
বেতের আসবাবপত্র দেখতে খুব আকর্ষণীয় ও রুচিশীল। বেতের ঝুড়ি খুব সহজেই সব জায়গায় মানিয়ে যায়। শিশুদের খেলনা, কিংবা ফলমূল ও শাকসবজি রাখতে; ম্যাগাজিন, বই ইত্যাদি সাজিয়ে রাখতে বেতের ঝুড়ি ব্যবহার করুন। এতে জায়গা বাঁচবে, আপনার বাসা ছিমছাম, পরিপাটি ও রুচিশীল দেখাবে।
ঘরে কি কি আছে খুঁজে দেখুন
আমাদের ঘরে এমন অনেক জিনিস আছে যা দিয়ে কত সুন্দর করে পুরো বাসা সাজিয়ে ফেলতে পারেন, ভাবলে অবাক হয়ে যাবেন। বাড়তি তেমন কিছুই কিনতে হবে না। ঘর সাজাতে কাজে লাগবে এমন অনেক জিনিস হয়তো বাক্সবন্দী করে রেখে দিয়েছেন, অনেক দিন চোখ বুলিয়ে দেখা হয়নি। বাড়তি কিছু কাঠের বা মেটালের ট্রে হয়তো বাক্সে বা ড্রয়ারে বন্দী করে রেখে দিয়েছেন। ট্রাঙ্ক, টি-কার্ট, কফি টেবিল, লাগেজ র্যাক ইত্যাদির ওপর সেই ট্রে সাজিয়ে রাখতে পারেন। তার ওপর মোমসহ মোমদানি রাখুন। দেখতেও সুন্দর লাগবে, নতুন করে কিছু কেনার জন্য টাকা নষ্ট করার প্রয়োজন হবে না। দেয়ালে ফাঁকা জায়গা থাকলে বাহারি র্যাক বানিয়ে তাতে বই রাখুন। শোপিসই রাখতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। শিশুদের ঘর সাজাতে তাদের নিজেদের আঁকা ছবি ফ্রেম করে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। একটু খুঁজেই দেখুন কি কি আছে আপনার বাক্সে বন্দী।
রান্নাঘরে পট হোল্ডার
রান্নাঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে পট হোল্ডার লাগান। এতে করে একটি ঘরোয়া অনুভূতি আসে, শেলফে কিছু জায়গা বাঁচে, কাজকর্মে সুবিধাও হয়। চোখের সামনে প্রয়োজনীয় মসলার কৌটা থাকলে রান্না করতে সময় কম লাগে।