২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হয়ে উঠুন সবার প্রিয়

-

মাঝে মধ্যে কী কষ্ট হয় কেন সুন্দর একটি মন থাকার পরেও আপনি সবার প্রিয় নন? খুব রাগ হয় সেসব মানুষের ওপর যারা খুব জনপ্রিয় ও সব আসরের মধ্যমণি?
তাহলে আপনার জন্য থাকছে কিছু পরামর্শ। সবার প্রিয় হওয়ার বা আসরের মধ্যমণি হওয়ার সুবিধা কিন্তু অনেকÑ সবাই আপনার সাথে হাসিমুখে কথা বলবে, আপনার অনেক বন্ধু থাকবে, আপনি বাড়তি সুযোগ-সুবিধাও পেতে পারেন, সবাই আপনাকে ভালোবাসবে। তবে সুন্দর ব্যবহার করে সবার মন জয় করা এবং সবার ভালোবাসা পাওয়া কিন্তু
একটি আর্ট, এটিকে আয়ত্তে আনতে হবে। লিখেছেন কাজী তানজিলা মেহনাজ

কিভাবে করবেন সবার মন জয়?
কখনো কি এমন কোনো ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়েছে যার সাথে পরিচয়ের পর মুহূর্তের মাঝেই তাকে খুব আপন মনে হয়েছে? প্রথমে আপনি হয়তো খুব সহজে মিশতে পারছিলেন না; কিন্তু সেই ব্যক্তিটি কয়েকটি বাক্য বলার পরই খুব সহজ বোধ হয়েছে, মনে হয়েছে যেন কতকালের পরিচিত। সদ্য পরিচিত কারো বন্ধুসুলভ আচরণে মুগ্ধ হয়েছেন? কখনো কি মনে মনে ভেবেছেন কী সেই গুণ যার দ্বারা একজন মানুষ সবার চোখের মণি হয়ে ওঠে আর অন্য একজন ‘বোরিং’ উপাধি পায়?
হাসুন এবং আন্তরিক হন
সবার প্রিয় হওয়ার পথের সঠিক যাত্রা এখান থেকেই শুরু। কখনোই মুখ গোমড়া করে থাকবেন না। সব কিছুকে ইতিবাচকভাবে দেখুন। জীবনের গ্লাসকে অর্ধেক খালি না ভেবে অর্ধেক পূর্ণ ভাবুন। আপনার সদাহাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে সবাই আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করবে।
আলাপচারিতায় পারদর্শী হন
সবার সাথে হাসিগল্পে মেতে উঠুন। কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক না গলিয়ে বা কাউকে বোর না করে আলাপচারিতায় পারদর্শী হতে পারা একটি বড় গুণ। খুব বেশি কাছের মানুষ বা কাছের বন্ধু না হলে কাউকে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি যে বিষয়ে কথা বলতে চান শুধু সে বিষয়েই কথা বলবেন না, অন্যরা কী বিষয়ে কথা বলতে চায় সেটাও প্রাধান্য দিন।
ভালো শ্রোতা হন
সারাক্ষণ শুধু নিজেই কথা বলে যাবেন না। অন্যদেরও বলতে সুযোগ দিন। তারা যা বলে, মন দিয়ে শোনার ইচ্ছা রাখুন। অন্যদের কথায় সাড়া দিন যাতে তারা বুঝতে পারে আপনি তাদের কথা মন দিয়ে শুনছেন। তাদের হাসির কথায় হাসুন, দুঃখের গল্পে দুঃখ প্রকাশ করুন, অবাক হবার মতো কিছু শুনলে অবাক হন। চেহারার অভিব্যক্তি দেখে যেন কখনো মনে না হয় আপনি শুধু তাকিয়ে আছেন তাদের দিকে, কিন্তু মনে মনে অন্য কিছু ভাবছেন।
অন্যদের দৃষ্টিকোণ থেকেও ভাবুন
সবসময় নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীটা দেখলে আপনি সবার প্রিয় হতে পারবেন না। অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবী দেখলে তবেই আপনি সবার কাছের মানুষ হতে পারবেন। যাদের সাথে মিশছেন তাদের সবার আর্থিক অবস্থা আপনার মতো ভালো নাও হতে পারে। তাই বন্ধু বা কলিগ সবাই মিলে কোথাও খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা করার আগে সবার মতামত নিন কোন রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে ভালো হয়। এমন একটি রেস্তোরাঁ বেছে নিন যেখানে খাবার খাওয়ার সামর্থ্য সবার আছে।
সহমর্মী হন
ধরুন কোনো বন্ধুর সাথে রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেন। সেই বন্ধুটি ছুরি ও চামচ দিয়ে খাবার খেতে অভ্যস্ত না হওয়ায় খাবার খেতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে গেল। সেই বন্ধুকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন না বা আপনি ও আপনার পরিবারের সদস্যরা ছুরি ও কাঁটা চামচ দিয়ে খাবার খেতে কতটা অভ্যস্ত সেই গল্প তাকে আকার ইঙ্গিতে শোনাবেন না। বরং প্রথমবার ছুরি ও চামচ দিয়ে খাবার খেতে গিয়ে আপনি কী করে টেবিলে খাবার ফেলে দিয়েছিলেন সেই গল্প করুন। এতে তারা লজ্জিত বোধ করা থেকে বাঁচবে ও তাদের মনে আপনার প্রতি ভালো একটি ধারণা জন্মাবে।
রূঢ় আচরণ বর্জন করুন
কারো সাথে রূঢ় ব্যবহার করবেন না, কারো কথার জবাব রূঢ়ভাবে দেবেন না। আপনি অফিসে অনেকের বস হতে পারেন, বাসায়ও আপনি আপনার গৃহকর্মী, দারোয়ান ও ড্রাইভারের বস। চাইলেই আপনি তাদের ধমক দিতে পারেন, বকাঝকা করতে পারেন, তাদের কটু কথা বলতে পারেন। কিন্তু পারেন বলেই কি এরকম আচরণ করা উচিত? নিজেকে প্রশ্ন করুন এমন আচরণ কেউ আপনার সাথে করলে আপনার কেমন লাগত? অনেক মানুষ আছে যারা অন্যকে অপমান করে বা অন্যকে ছোট করে আনন্দ পায়, আপনি সেই দলের মানুষ হবেন না।
লোকদেখানো মানসিকতা ত্যাগ করুন
নিজেকে নিয়ে আপনার গর্ব হতেই পারে। তাই বলে নিজেকে জাহির করে বেড়ানোর মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। যখন কারো সাথে কথা বলবেন, কখনোই নিজে কত বেতন পান, কীরকম ‘হাইফাই’ জীবনযাপন করেন, আপনার গাড়ির দাম কত, কী রকম দামি ঘড়ি বা ব্যাগ ব্যবহার করেন সেসব কথা না বলাই ভালো। এরকম গল্প করলে আপনার সম্পর্কে সবার মনে নিচু ধারণা জন্মাবে। যারা আর্থিকভাবে আপনার চেয়ে তুলনামূলক কম ভালো আছে তাদের মনে কষ্ট হবে, আর যাদের আর্থিক অবস্থা আপনার চেয়ে ভালো কিন্তু প্রকাশ করে না তাদের সামনে আপনার লোকদেখানো মানসিকতা উন্মোচিত হয়ে যাবে। আপনি বড় না ছোট সবাই এমনিতেই জেনে যাবে, নিজ মুখে বলে বেড়ানো পরিহার করুন। মনে রাখবেন, নিজেকে বড় দেখাতে গিয়ে আমরা অন্যের চোখে শুধু ছোটই হই।
সবসময় ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রাখুন
জীবনে ঘটে যাওয়া খারাপ ঘটনা বা মুহূর্তগুলোর কথা ভেবে অযথা নিজের সুখ শান্তি নষ্ট করবেন না। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করুন, সুন্দর মুহূর্তগুলো আশপাশের সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিন। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের চোখে অন্য রকম ঝিলিক থাকে, যার কারণে সবাই তাদের পছন্দ করে।
সবাইকে সম্মান দিন
অন্যকে সম্মান দিলে নিজের সম্মান বাড়ে। মনে রাখতে হবে জীবনের বেশির ভাগ মুহূর্তেই কোনো না কোনো মানুষ আমাদের দেখছে। আপনি যদি সবাইকে সম্মান করেন, আপনার এই মানসিকতা দেখে সবাই আপনাকেও শ্রদ্ধা করবে। এমন যেন না হয় যে, আপনি শুধু হাতেগোনা কিছু মানুষকে সম্মান দিচ্ছেন কিন্তু অন্যদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে ভুলে যাচ্ছেন। একজন মানুষ যত ছোট কাজই করুক না কেন, মানুষ হিসেবে সম্মান এবং ভালো ব্যবহার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। ছোট কাজ করে বলে বয়সে বড়দের কখনো তুমি বা তুই বলে সম্বোধন করবেন না।
মতামতের ক্ষেত্রে ন্যায়বান হন
দু’জন ব্যক্তির মধ্যে বিবাদ মেটানোর দায়িত্ব যদি আপনার ওপর পরে তাহলে ন্যায়ের পথে হাঁটুন। আপনার কাছের মানুষ ভুল কাজ করলে কখনোই তার পক্ষ নেবেন না। দু’জনকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন কার কী ভুল। এক দিকে স্বজনপ্রীতি যেমন আপনার জনপ্রিয়তাকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে, অন্য দিকে তেমনি ন্যায়সঙ্গত কথা বলা আপনাকে সবার চোখে সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র করে তুলবে।
অন্যকে যথাসম্ভব সাহায্য করুন
কাউকে সাহায্য করার সুযোগ পেলে এগিয়ে যান, সাহায্য করুন। কেউ যদি আপনার কাছে সাহায্য চায় তাহলে তো সাহায্য করবেনই, নিজে থেকেও মাঝে মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। যেমন ধরুন, কেউ একজন অফিসে নতুন এসেছে বা আপনার পাশের ফ্ল্যাটে নতুন কোনো প্রতিবেশী এসেছে, যারা নতুন পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছে, তাদের সাহায্য করুন নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বা দোকানপাট কোথায় আছে দেখিয়ে দিন।
ধৈর্যের সাথে সবাইকে সামলান
হতে পারেন আপনি খুব জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান, কিন্তু সবার তো আপনার মতো জ্ঞান বা বুদ্ধি নাও থাকতে পারে। কারও অজ্ঞতা বা বোকামি দেখলে রেগে যাবেন না, তাদের বুঝতে দেবেন না যে আপনি তাদের আচরণে বিরক্ত। ধরে নিন তারা দুর্ভাগা যে আপনার মতো জ্ঞান বা বুদ্ধি তাদের নেই। তাদের সাথে সবসময় সুন্দর আচরণ করুন।
মজা করার সীমা নির্ধারণ করুন
সফল রসিকতা সেটাই যেটা সবার কাছে হাসির মনে হয়, কারো কাছে অপমানের বা কষ্টের না হয়। একটি দলের মধ্যে একজনকে হাসির ছলে অপমান করে বা ছোট দেখিয়ে কয়েকজন মিলে হাসাহাসি করলে হয়তো গুটিকয়েক মানুষের চোখে আপনাকে রসিক মনে হতে পারে, কিন্তু বাকি সবার চোখে আপনি হবেন সেই ব্যক্তি যে অন্যের দুর্বলতায় আঘাত করে আনন্দ পায়। অন্যকে সূক্ষ্মভাবে অপমান করে কেউ কখনো রসিক উপাধি পেতে পারে না, সবার প্রিয় হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন
সবার মন জয় করতে চান তার মানে এই নয় যে, অন্যকে খুশি করার জন্য নিজের ইচ্ছা ও নীতির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করবেন। নিজের মতামত প্রকাশ করুন। যে নিজের মত প্রকাশ করতে পারে না, সবসময় অন্যের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে, অন্যের ন্যায় অন্যায় সব কথা মেনে নেয়, তাকে কেউ শ্রদ্ধা করে না। যে যা করতে বলে তাই করবেন না, প্রয়োজনে সুন্দর করে ‘না’ বলতে শিখুন। এতে সবাই বুঝবে যে, আপনি নীতির বিষয়ে আপসহীন। ফলে আপনি সবার শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব ধারণ করুন
শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি কথা হলো এই যে, আপনার গায়ে ঘামের গন্ধ বা মুখে দুর্গন্ধ থাকলে তা আপনার জনপ্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন, দুর্গন্ধমুক্ত থাকুন যেন আপনার পাশে বসতে কারও অস্বস্তি না হয়। মন থেকে ভালো মানুষ হওয়া অবশ্যই জরুরি, কিন্তু সবার প্রিয় হতে গেলে বাইরে থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়াও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement