প্রসাধনীতে লুকিয়ে থাকা শত্রু
- তাসফিয়া তাজিন
- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
বাজারে পাওয়া যায়, এমন কিছু প্রসাধনী বা সৌন্দর্যবর্ধক পণ্যে লুকিয়ে আছে এমন উপাদান, যার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানলে আপনি কখনোই সেগুলো আপনার ত্বকের ধারে কাছে আসতে দেবেন না। এসব ক্ষতিকর কেমিক্যালের ভয়েই হয়তো দিন দিন তরুণসমাজ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। চলুন, দেখে নেয়া যাক সেই ক্ষতিকর উপাদানগুলো কী এবং কী করে প্রচলিত অনেক মেকআপ, প্রসাধনী, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যবর্ধক পণ্য আমাদের শারীরিক ক্ষতি করছে এবং ইকোসিস্টেমে প্রভাব ফেলে আমাদের পরিবেশেরও বারোটা বাজাচ্ছে। উপাদানগুলোর নাম ডায়েরিতে টুকে রাখতে ভুলবেন না যেন পরবর্তীকালে প্রসাধনী কেনাকাটার সময় বুঝেশুনে ভালো পণ্য কিনতে পারেন।
গবেষকেরা কসমেটিক্স তৈরিতে ব্যবহৃত কিছু উপাদানকে অতিমাত্রায় আমাদের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সৌভাগ্যবশত কিছু উপায় আমাদের হাতে আছে, যার মাধ্যমে আমরা এসব ক্ষতিকর উপাদান সম্পর্কে তথ্য পেতে পারি। ইকোহলিক বডি বইয়ের লেখক আড্রিয়া ভাসিল আমাদের জানিয়েছেন কয়েকটি উপাদান সম্পর্কে, যা মানবদেহ ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
বিএইচএ এবং বিএইচটি
দ্য ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারÑ এ দু’টি উপাদানকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের তালিকাভুক্ত করেছে। উপাদান দু’টির পুরো নাম বিউটাইলেটেড হাইড্রো-অক্সাইড (বিএইচএ) এবং বিউটাইলেটেড হাইড্রোক্সিটলিউন (বিএইচটি)। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় আইন করা হয়েছে যেসব পণ্য তৈরিতে বিএইচএ উপাদানটি ব্যবহার করা হবে, সেসব পণ্যের গায়ের লেবেলে অবশ্যই সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কথাটি লিখতে হবে।
কোল টার ডাই বা পিপিডি
প্রসাধনী শিল্পে এ উপাদানটি খুবই জনপ্রিয়। চুলের জন্য সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী রঙ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এটি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এ উপাদানটির সংস্পর্শে এলে, তা হোক অল্প পরিমাণ বা বেশি, স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি দীর্ঘদিন ব্যবহারে নন-হজকিন্স লিম্ফোমা রোগের কারণ হতে পারে।
সাইক্লোমেথিকোন এবং সিলোক্সেন্স
মসৃণ মেকআপ বেজের জন্য, হাতের নিচে ঘাম হওয়া কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এ পদার্থটি। এটি শরীরের হরমোন ফাংশন ব্যাহত করে ও লিভার নষ্ট করে ফেলে। গাড়ির উইন্ডশিল্ড পরিষ্কার করার জন্য যে তরল ব্যবহার করা হয় তাতেও এ উপাদানটি বিদ্যমান, যা পরিবেশেরও ক্ষতি করে।
দ্য ইথানোল্যামাইন্স
এ উপাদানটি তিন রকম হতে পারেÑ ডাইথানোলামাইন (ডিইএ), মনোথানোলামাইন (এমইএ), ট্রাইথানোলামাইন (টিইএ)। এ উপাদানগুলো মানবদেহ ও পরিবেশ দুটোর জন্যই ক্ষতিকর। এগুলো সাধারণত ব্যবহার করা হয় সানস্ক্রিন, সাবান, শ্যাম্পু, ময়েশ্চারাইজার প্রভৃতি তৈরিতে। এ উপাদানগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী নাইট্রোসামাইন সৃষ্টি করে।
ডাইবিউটাল ফ্যালেট
এ উপাদানটি পাওয়া যায় নেইলপলিশ, চুলের রঙ ও সুগন্ধিতে। এটি স্বাভাবিক হরমোন প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়, বিশেষ করে গর্ভবতীদের হরমোনের সমস্যা করে।
ফরমাল্ডিহাইড রিলিজিং প্রিজারভেটিভস
এ ধরনের প্রিজারভেটিভের মধ্যে আছে ডিএমডিএম হাইডেনটইন, ডায়াজোলিডিনাইল ইউরিয়া, ইমিডাজোলিডিনাইল ইউরিয়া, মিথিনামাইন বা কোয়ারটেনিয়াম ১৫। এ উপাদানগুলো প্রচুর ব্যবহৃত হয় চুল ও নখের প্রসাধনী তৈরিতে। ময়েশ্চারাইজারেও এর উপস্থিতি লক্ষণীয়। এটিও ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
প্যারাবেন
মেকআপ এবং ময়েশ্চারাইজার তৈরিতে খুব প্রচলিত একটি নাম প্যারাবেন। এটি হরমোন সম্পর্কিত জটিলতা সৃষ্টি করে, যা নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার ও পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন সমস্যার কারণ হয়।
পারফিউম
পারফিউম কিসে নেই? সাবান, শ্যাম্পু, লিপস্টিক, ময়েশ্চারাইজার সব জায়গায় আছে পারফিউম। পারফিউম আসলে এটি উপাদান নয়, বেশ কিছু উপাদান মিলে সুগন্ধি সৃষ্টি করে পারফিউম। এটি কেমিক্যাল সেনসেটিভ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন, মাইগ্রেন ও শ্বাসকষ্টের মতো রোগের কারণ ঘটায়।
পলিইথাইলিন গ্লাইকোস বা পিইজি
এটি ময়েশ্চারাইজার, কন্ডিশনার ও ডিওডোরেন্ট তৈরিতে প্রচুর ব্যবহৃত হয়, যে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম। একদম খাঁটি অবস্থায় এটি নিরাপদ; কিন্তু যদি ইথাইলিন অক্সাইডের সাথে এর মিশ্রণ ঘটে, তখন তা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
পেট্রোলিয়াম বা পেট্রোলিয়াম জেলি
এটি অনেকের কাছে ভেসলিন নামে পরিচিত। এটি ত্বক ও চুল পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয়। ভেসলিন ত্বক, চুল ও ঠোঁট সুন্দর ও টানটান রাখে। কিন্তু এটি খুব সহজেই কার্সিনোজেন দ্বারা দূষিত হয়ে যায়, যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
সোডিয়াম লরেথ সালফেট (এসএলইএস) এবং সোডিয়াম লরাইল সালফেট (এসএলএস)
এগুলো হলো ফোমিং এজেন্ট যা শ্যাম্পু, ক্লিনজার, বডি ওয়াশ প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি সহজেই ১৪ ডাই-অক্সিনের সাথে মিশে দূষিত হয়ে লিভারের ক্ষতি করে, ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এটি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।
ট্রাইক্লোসান
প্রসাধনী শিল্পের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপাদানগুলোর একটি। এটি মানবদেহের ক্ষতি করে না; কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটি পাওয়া যায় টুথপেস্ট, কাপড় কাচার ডিটারজেন্ট, ফেসিয়াল টিস্যু প্রভৃতিতে।
রেটিনাইল পালমিটেট এবং ভিটামিন ‘এ’
অ্যান্টিএজিং ক্রিম, ব্রণের ক্রিম প্রভৃতিতে এগুলো পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করে সূর্যের আলোতে বের হলে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক বেড়ে যায়।
অক্সিবেনজোন (বিপি ৩/বেনজোফেনোন) এবং অক্টিনোক্সেট (অক্টিল মিথক্সিনামেট)
এ দু’টি কেমিক্যাল মূলত সানস্ক্রিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এ ছাড়াও এরা এলার্জি সৃষ্টি করে। যেসব সানস্ক্রিনে জিঙ্ক অক্সাইড, টাইটানিয়াম অক্সাইড ও এভবেনজোন আছে; সেগুলো তুলনামূলক বেশ নিরাপদ।