জামদানি উৎসব ২০১৯
- সাতরঙ প্রতিবেদক
- ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
জামদানি বয়নশিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্যের মৌলিক, উৎকৃষ্ট ও অন্যতম অংশ। অসাধারণ নকশায় সমৃদ্ধ জামদানি বস্তুত মসলিনেরই একটি প্রকার, যা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের বয়নশিল্পীদের হাতে অনবদ্য শিল্পকর্মে রূপ নিয়েছে। ষষ্ঠদশ শতকে মুঘল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার নন্দিত মসলিন হয়ে ওঠে সৃজন সৌকর্যে উৎকৃষ্ট নকশাদার জামদানি। পারসিক মোটিফের সাথে বাংলার নিসর্গের ফুল-ফলের নকশা সংযোজন করে বয়নশিল্পীরা জামদানিকে করে তোলেন অনিন্দ্য সুন্দর।
ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে এই অঞ্চলে এবং ইউরোপ ও ইংল্যান্ডে পুরুষ ও মহিলাদের শৌখিন বস্ত্র হিসেবে জামদানি অত্যন্ত আদরণীয় ছিল। বর্তমানেও মর্যাদাপূর্ণ পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জামদানি বস্ত্র অপরিহার্য পরিধেয়। উনিশ শতকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে শুরু হয় জামদানি শিল্পের ক্রমাবনতি। ক্ষয়িষ্ণু মুঘল রাজশক্তির প্রেক্ষাপটে জামদানি বয়নশিল্পীরা বঞ্চিত হন জরুরি পৃষ্ঠপোষক থেকে। এ ছাড়া ইংল্যান্ডে বয়নশিল্পে প্রযুক্তিগত উন্নতি ও মেশিনারি সংযোজন এবং স্থানীয় বাজারে ইউরোপের তুলনামূলক সস্তা অথচ নিম্নমানের সুতার অনুপ্রবেশ জামদানি শিল্পকে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বর্তমান সময়ে উন্নতমানের সুতার অভাব এবং উৎপাদনের অত্যধিক ব্যয় জামদানি বয়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদি জামদানির অভূতপূর্ব মূলানুগ অনুকরণে সমর্থ এ দেশের বর্তমান প্রজন্মের বয়নশিল্পীদের অসামান্য কুশলতা তুলে ধরতেই বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে জামদানি উৎসব।
জামদানি উৎসবের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওকে ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফটস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট সিটি’র মর্যাদা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বেঙ্গল শিল্পালয়ে ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত।