হলুদের জাদু
কাভার স্টোরি- কাজী তানজিলা মেহনাজ
- ২৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
হলুদ খেলে ত্বকের রঙ ফর্সা হয়। হলুদের মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান কারকিউমিন। এটি কেবল হলুদেই পাওয়া যায়। এটিকে জাদুকরী উপাদান বলা হয়। এটি ত্বকের বেশির ভাগ সমস্যা সমাধান করতে পারে। কারকিউমিন রঙ ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। কারকিউমিন ত্বককে পাতলা করতে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া দূর করে; ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়ায়। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে ধীরে ধীরে ত্বকের রঙ ফর্সা হয়। তা ছাড়া রক্ত পরিষ্কার করে, ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে। লিখেছেন কাজী তানজিলা মেহনাজ
হলুদকে অনেক সময় ‘মিরাকল হার্ব’ বা অলৌকিক ভেষজ বলা হয়ে থাকে। হলুদ আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটা মসলা, রোজকার রান্নায় হলুদ না দিলে রান্নাই যেন কেমন অসম্পূর্ণ মনে হয়। রান্নায় হলুদ সাধারণত গুঁড়ো মসলা আকারেই ব্যবহার করা হলেও কাঁচা হলুদও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। আর কাঁচা হলুদের উপকারিতাও মারাত্মক। কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ইত্যাদি নানা গুণ থাকায় হলুদ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়, বিশেষত আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র তৈরিতে কাজে লাগে। চলুন দেখে নিই কাঁচা হলুদের গুণাগুণগুলো কি কিÑ
১ আউন্স বা প্রায় ২৮ গ্রাম হলুদ আমাদের শরীরে দৈনিক যে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন হয়, তার প্রায় ২৬ শতাংশই জোগান দেয়। এ ছাড়া রোজকার চাহিদার প্রায় ১৬ শতাংশ লোহা বা আয়রনের জোগানও ওই মাত্র ২৮ গ্রাম হলুদ থেকেই আসে।
হলুদ খেলে ত্বকের রঙ ফর্সা হয়। হলুদের মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান কারকিউমিন। এটি কেবল হলুদেই পাওয়া যায়। এটিকে জাদুকরী উপাদান বলা হয়। এটি ত্বকের বেশির ভাগ সমস্যা সমাধান করতে পারে। কারকিউমিন রঙ ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। কারকিউমিন ত্বককে পাতলা করতে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া দূর করে; ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়ায়। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে ধীরে ধীরে ত্বকের রঙ ফর্সা হয়। তা ছাড়া রক্ত পরিষ্কার করে, ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে। তা ছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদের রস খেলেও সমান উপকারিতা পাওয়া যায়। যারা কাঁচা হলুদ শুধু খেতে পারবেন না, তারা চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে নিতে পারেন।
কাঁচা হলুদ ত্বকের বয়স কমায়। তাই বিভিন্ন ক্রিমের প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়। ত্বকের বিভিন্ন দাগ, রিঙ্কল ও সান ট্যান থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক ঘরেই তৈরি করে মুখে লাগানো যেতে পারে। হলুদে থাকা কারকিউমিনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ ত্বককে বয়সের ছাপ থেকে বাঁচায়। ১-৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, চালের গুঁড়া, টমেটো রস, কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে মুখে মাস্ক হিসেবে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ফাইন লাইন্স এবং ঝুলে পড়া ত্বককে স্বাভাবিক করতে, ত্বককে ফর্সা করতে অত্যন্ত কার্যকরী। অথবা ১ টেবিল চামচ টক দইয়ের সাথে ১-৪ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে পাতলা পেস্ট তৈরি করে পুরো মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই-তিন দিন লাগালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ মুখে ব্রণকে কমায়। ব্রণ সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মুখে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে মাখুন ও খান, দেখবেন তাড়াতাড়ি উপকার পাচ্ছেন। কাঁচা হলুদ শুধু ব্রণই দূর করে না, তার সাথে ব্রণের দাগ এবং লোমকূপ থেকে তেল বের হওয়ার পরিমাণও কমিয়ে দেয়। কাঁচা হলুদ বাটা, বেসন, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও পানি মিশিয়ে একটি মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কাঁচা হলুদ অ্যান্টি-অ্যালার্জিক হিসেবে কাজ করে। ফলে ত্বক ও খাবারের থেকে অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে কাঁচা হলুদ সাহায্য করতে পারে। হলুদে আছে জীবাণুনাশক ও পরিষ্কারক গুণাগুণ। আর তাই খুশকি মোকাবেলায় এটি দারুণ কার্যকর। খুশকি থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা হলুদ বাটার সাথে সমপরিমাণ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর তা মাথার ত্বকে মেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শিগগিরই খুশকি কমে যাবে।
কাঁচা হলুদ চুল পড়ার সমস্যা থেকেও আমাদের মুক্তি দেয়। চুল পড়া কমাতে নারকেল তেলের সাথে হলুদ বাটা মিশিয়ে ভালোভাবে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে পারেন। চাইলে দুধ, মধু এবং কাঁচা হলুদ বাটা ভালোভাবে পেস্ট করে ব্যবহার করতে পারেন। কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ আমাদের বিষণœ মনমরা ভাব, বদমেজাজ, ডিপ্রেশন কাটিয়ে মনকে চনমনে করে তুলতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদের মধ্যে গ্যাস্ট্রো-প্রটেক্টিভ কিছু গুণ থাকে যা খাবার পরিপাকে সাহায্য করে। ফলে হজমের গোলমাল, গ্যাসের সমস্যার ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ খুবই উপকার দেয়। কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন হাড়ের ক্ষয় ও হাড়ের গঠনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখে ও হাড়কে সুস্থ ও মজবুত রাখে। মেনোপজের সময় মহিলাদের যে হাড়ের ক্ষয় হয়, তা থেকেও কাঁচা হলুদ আমাদের বাঁচায়। হলুদ ও হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যান্টি-ডায়াবেটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কাঁচা হলুদ ইনসুলিন হরমোনের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখে।
সতর্কতা : মনে রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। যারা গলব্লাডারের কোনো রোগে ভুগছেন তারা সরাসরি হলুদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। এটি আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং লিভারে যাদের সমস্যা আছে বা লিভারের রোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হলুদ খাবেন। দুরারোগ্য কোনো লিভারের অসুখ হলে হলুদ যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ত্বকে সহ্য না হলে হলুদের ব্যবহার বাদ দিন। ত্বকে কখনো সরাসরি হলুদ দেয়া যাবে না। কিছুর সাথে যেমন চন্দন গুঁড়া, বেসন, চালের গুঁড়া, ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেক মানুষের ত্বক ভিন্ন। তাই আগে মুখে না দিয়ে, হাতে অথবা ঘাড়ে অ্যালার্জি টেস্ট করে নিতে পারেন। এতে বুঝতে পারবেন প্যাকটি আপনাকে সুট করছে কি না। তা ছাড়া মুখের জন্য কোনো প্যাক বানালে তাতে খুব অল্প পরিমাণে হলুদ দিতে হবে, উল্টোদিকে হাত পা, বা ঘাড়ের জন্য প্যাক বানালে হলুদের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি দিতে হয়। তাই শরীরের অন্য অংশের জন্য বানানো প্যাক মুখে লাগানো যাবে না। আজ থেকেই অভ্যাস করুন, সকালে উঠে খালি পেটে বেশ খানিকটা করে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খান। দেখবেন অনেক সমস্যা ও রোগের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অনেক রোগের সম্ভাবনাকেও কমাতে পেরেছেন। সুস্থ থাকতে ও সুস্থভাবে বাঁচতে রোজ কাঁচা হলুদ খান।