হিজাবে নারী
কাভার ষ্টোরি- কাজী তানজিলা মেহনাজ
- ২৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
আজ থেকে ১৫-২০ আগেও বাংলাদেশের হিজাব পরা নারীরা ছিল ফ্যাশন থেকে বহু দূরে। ফ্যাশন ও হিজাব যেন ছিল দু’টি আলাদা আলাদা পৃথিবীর বস্তু, যার একটির সাথে অন্যটির দেখা হওয়া ছিল অসম্ভব। এই চিত্রটি বদলাতে শুরু করে আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে যখন অনেক হিজাব পরা নারীই ধর্মীয় বিধান পালনের পাশাপাশি নিজেদের সুন্দর করে উপস্থাপনের জন্য পরনীয় হিজাবটিকে নতুনভাবে পরতে শুরু করে। এক সময় হিজাব মানেই ছিল কালো রঙ, সেই ধারণাও পাল্টে দিতে শুরু করে হিজাবি নারীরা। একটা সময় দেখা যায় হিজাবি নারীদের এতটাই সুন্দর ও ফ্যাশনেবল লাগছে যে, এমন অনেক নারী যারা আগে হিজাব পরত না, তারাও হিজাবের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে। আজকাল তো দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত ফ্যাশন ব্লগার পর্যন্ত হিজাব পরে।
হিজাব কী
হিজাব মূলত একটি চারকোণা কাপড়। এটি ওড়নার মতো লম্বাও হতে পারে, আবার বর্গাকৃতিরও হতে পারে। এমনকি কিছু কিছু হিজাব ত্রিকোণাকৃতিরও হয়ে থাকে। হিজাব ব্যবহার করা হয় মুসলিম নারীদের মাথা, চুল, কান, মাথার আশপাশের অংশ, গলা ও ঘাড় ঢেকে রাখার জন্য। হিজাব সাধারণত মুখ ঢাকতে ব্যবহৃত হয় না। তবে কিছু কিছু নারী হিজাব দিয়ে চোখের নিচ থেকে থুতনি পর্যন্ত ঢেকে থাকে।
ইসলামিক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি
মুসলিম নারী পুরুষের পরিধেয় পোশাকের যে বিশাল বাজার রয়েছে সারা বিশ্বে, তাকেই বলা হয় ইসলামিক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। সারা পৃথিবীর পোশাক ব্যবসায়ীরা এখন খুব গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে মুসলমানদের পোশাককে। উদাহরণস্বরূপ আমেরিকার বিখ্যাত স্পোর্টস ব্র্যান্ড নাইকি বাজারজাত করেছে স্পোর্টস হিজাব। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষক ফায়িজেহ সিরাজী ক্রমবর্ধমান মুসলিম ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে বলেন, এক্ষেত্রে নাইকিই কিন্তু প্রথম ব্র্যান্ড নয়। ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ড দখল করে রেখেছে মুসলিম ফ্যাশনের লোভনীয় বিলিয়ন ডলারের বাজারটি। তিনি আরো ধারণা করেন যে, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে শুধু হিজাবের বাজারই হবে ৪৮৮ বিলিয়ন ডলারের।
হিজাব পরার কিছু সুবিধা
যদিও হিজাব পরা হয় ধর্মীয় বিধান মেনে চলার লক্ষ্যে, হিজাব কিন্তু কিছু বাড়তি সুবিধাও দেয়। প্রথম সুবিধাটি হলো, হিজাব পরলে চুল, গলা, ও ঘাড় রোদ ও ধুলাবালুর হাত থেকে বাঁচে, এমনকি মুখমণ্ডলও কিছুটা রক্ষা পায় গ্রীষ্মের সূর্যের আক্রোশ থেকে। এতে এক দিকে যেমন রোদে পুড়ে রঙ কালো হয় না, অন্য দিকে চুলও থাকে পরিষ্কার, ধুলাবালু থেকে সুরক্ষিত। দ্বিতীয় সুবিধাটি হলো, হিজাব পরলে রোজ রোজ ভিন্ন ভিন্নভাবে চুল বাঁধার ঝামেলা নেই। রোজ অফিসে বা ক্লাসে একইভাবে চুল বেঁধে যেতে নিজের কাছেই বোরিং লাগে। আবার বিভিন্ন স্টাইল করে চুল বাঁধতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হয়। যারা হিজাব পরে, তারা এই ঝামেলা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।
হিজাবি ত্বকের যতœ
হিজাব পরলে শরীরের অনেক অংশ ঢাকা থাকার কারণে রোদে পোড়ার হাত থেকে বাঁচলেও মুখমণ্ডল দুই হাতের কব্জি এবং দুই পায়ের পাতা কিন্তু বাঁচতে পারে না। এর ফলস্বরূপ গায়ের রঙে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। তাই বাইরে বের হওয়ার সময় শরীরের এসব অংশে সানস্ক্রিন লাগানো এবং রোদচশমা পরা অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া সপ্তাহে দুই দিন এসব অংশে টমেটোর রস বা শসার রস ও বেসনের প্যাক লাগাতে হবে। হিজাব পরার কারণে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে যার প্রভাব ত্বক ও সারা শরীরে পড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করা আবশ্যক।
হিজাবের সাথে মানানসই পোশাক
এ যুগের নারীরা সব ধরনের পোশাকের সাথেই হিজাব পরছে, হোক সেটা পশ্চিমা পোশাক কিংবা শাড়ি, সবকিছুর সাথেই হিজাব মানিয়ে যায়। আজকালকার বিয়েবাড়িগুলোতে গেলে যেমন চোখে পড়ে শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে হিজাব পরা বেশকিছু অতিথি, তেমনি অফিস আদালতেও চোখে পড়ে শাড়ি, সালওয়ার কামিজ, বোরকা ও পশ্চিমা পোশাকের সাথে মিলিয়ে পরিপাটি করে হিজাব পরা নারী। হিজাব যে শুধু বোরকার সাথেই পরা যায় এই ধারণাটি এখন সেকেলে হয়ে এসেছে। হিজাব পরলে যে মেক-আপ করা যাবে না সেই ধারণা থেকেও প্রগতিশীল নারীরা বের হয়ে এসেছে।
গয়না ও মেক-আপ
হিজাবের সাথে মোটামুটি সব ধরনের মেক-আপই মানানসই। তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে জায়গা ও উপলক্ষের সাথে। বিয়ের দাওয়াতে বা জমকালো কোনো পার্টিতে জমকালো হিজাব, ব্রোচ ও গয়নার সাথে জমকালো সাজ সাজতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু অফিসে বা অন্যান্য জায়গায় তো আর জমকালো সাজ মানাবে না। তাই অফিসে বা অন্যান্য জায়গায় উপলক্ষ বুঝে হিজাব বেছে নিন, সাথে সাজটাও যেন হয় ছিমছাম ও পরিপাটি। গয়নার বেলায়ও আপনি আপনার রুচি অনুযায়ী গয়না বেছে নিতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো হিজাব দিয়ে দু’টি কানই ঢেকে থাকে। তাই হিজাব পরা নারীরা কানের দুল পরতে পারে না। এ ছাড়া হিজাবের সাথে মোটামুটি সব গয়নাই পরা যায় পোশাক ও উপলক্ষের সাথে মিল রেখে।