২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গরমে নিজের যতœ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন কাভার স্টোরি

-

আষাঢ়ের শেষ লগ্নে এসেও সেভাবে বৃষ্টির দেখা নেই। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলেও গরম কমে না। কেমন যেন একটা ভ্যাপসা গরম। এই আবহাওয়ায় খুবই সতর্ক থাকা প্রয়োজন, তা না হলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের বিপদ। ডা: এম মনিরুজ্জামান খান বলেন, আবহাওয়াটা এমন মাঝে মধ্যেই প্যাচপ্যাচে বৃষ্টি আর বাতাসে চরম আর্দ্রতা ত্বকের নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই সময়ের সরাসরি রোদের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচণ্ড গরমে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। ত্বক স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায়। এ সময় প্রচুর ঘাম হয়, যা ত্বকের নানা সংক্রমণ, বিশেষত ছত্রাকজনিত সংক্রমণের হার বাড়িয়ে দিতে পারে। রোদে যারা কাজ করেন তাদের ত্বকে পোড়াভাব দেখা যাওয়া, ছোট ছোট সাদা ফুটকির মতো দাগ এবং মেছতার কালো দাগ দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় ত্বকের যতেœর বিষয়ে সচেতন থাকুন।
তিনি বলেন, প্রচণ্ড রোদ ও গরমে ত্বক পানি হারায়। তাই ত্বক আর্দ্র ও সুস্থ রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন লিটার পানি পান করুন। রোদে বা সূর্যালোকে বের হওয়ায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে ত্বকে সানস্ক্রিন বা সানব্লক লাগিয়ে নিন।
এসব সতর্কতার বাইরে কিছু খাবার গরমে এনে দিতে পারে তৃপ্তি। এসব খাবার যেমন পুষ্টিকর, তেমনি গরমে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে। এ ধরনের সহজলভ্য কয়েকটি খাবার সম্পর্কে জেনে নিন :
পুদিনাপাতা
ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার ক্ষমতা আছে পুদিনাপাতার। ইংরেজিতে যার নাম মিন্ট। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ‘এ’ দ্বারা পরিপূর্ণ পুদিনাপাতা। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এমন একটি উপকরণ, যা অতিরিক্ত গরমে ত্বকের ক্ষতি দূর করে। গরমের ঘাম জমে যে ঠাণ্ডা লেগে যায়, তা প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া বয়সের ভারে বৃদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করে। ত্বক ও চুলকে সতেজ রাখে। অতিরিক্ত গরমে ছোট-বড় প্রায় সবারই বদহজম বা ফুড পয়জনিংয়ের সমস্যা দেখা যায়। এই পাতা পেটের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে খাবার হজমে সাহায্য করে। পিষে, ধনেপাতার মতো তরকারিতে ছিটিয়ে বা কাঁচা সালাদের সাথে খাওয়া যায়।
কলা
দিনের খাদ্য তালিকায় কলা কমবেশি সবারই থাকে, তা কাঁচা আর পাকা হোক। উপাদেয়, সস্তা, সারা বছর মেলে এমন সবজি বা ফলের মধ্যে কলায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’র গুরুত্বপূর্ণ উৎসও কলা। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, লৌহ ও অন্য কিছু খনিজ উপাদান। কলা পাকা বা কাঁচা দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়। অতিরিক্ত ঘামের শরীর থেকে যে তরল বের হয়ে যায়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে পটাশিয়াম। গরমের সময় কলা খেতে পারেন। এ ছাড়া পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আছে সবুজ শাকসবজি, শুষ্ক ফল ও শস্য।
টমেটো
টমেটোতে রয়েছে শতকরা ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ পানি। এ ছাড়া এতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, লাইকোপেন, ক্যারোটিন, রিবোফ্লোবিন, ক্যালসিয়াম ও লোহা থাকে। টমেটোর জুস কিংবা সালাদ দুই সুস্বাদু। এ ছাড়া রান্নার পরও টমেটোর পুষ্টিগুণ কমে না। তাই গরমের সময় টমেটোর স্যুপ কিংবা ঝোল খেতে পারেন।
শসা বা ক্ষীরা
শসায় রয়েছে ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ পানি। এই গরমে শসার সালাদ রাখুন প্রতিবেলায়। শসার সাথে ধনেপাতা মেশালে স্বাদ বাড়বে। পাশাপাশি ননিবিহীন দুধের তৈরি দই, পুদিনাপাতা আর বরফ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস তৈরি করতে পারেন। এই জুস আপনার শরীর সতেজ রাখবে এবং তৃষ্ণাও মেটাবে।
তরমুজ
গরমে যখন প্রাণ আইঢাই, এক ফালি তরমুজ খেয়ে নিন। বরফ দেয়া শরবতও খেতে পারেন তরমুজের। হাঁপিয়ে যাওয়া প্রাণটা জুড়িয়ে যাবে। তরমুজ গরমেরই ফল। হাটবাজার বা ফলের দোকানে এখন থরে থরে সাজানো থাকে সুমিষ্ট পানিতে ভরপুর তরমুজ। তরমুজে রয়েছ শতকরা ৯১ দশমিক ৫ ভাগ পানি। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান লাইকোপেন। প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণেসমৃদ্ধ এই ফল গরমে স্বস্তি দেয়।
ঘৃতকুমারী
ঘৃতকুমারী শুনে অনেকে ভুরু কোঁচকালেও কিন্তু একে সবাই অ্যালোভেরা নামে ভালোই চেনেন। ঔষধি এই ভেষজের নানা গুণের কথা পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলের মানুষের জানা। শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয়। এই উদ্ভিদ খাদ্য-পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর, তেমনি তা বাহ্যিকভাবেও ব্যবহারযোগ্য। ঘৃতকুমারীর রস পান করে, সালাদ হিসেবে খেয়ে এবং ত্বক ও চুলে ব্যবহার করে গরমে দারুণ উপকৃত হতে পারেন।
পেঁয়াজ
গরমে পেঁয়াজ, বিশেষ করে লাল পেঁয়াজ দারুণ উপকারী। কোয়ারসেটিন নামের এক রাসায়নিক উপাদান আছে এতে, যার অ্যান্টিহিস্টামিন প্রভাব রয়েছে। গরমে হিট র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। পেঁয়াজ এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফাইটোকেমিক্যালস নামের একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে পেঁয়াজে, যা শরীরে ভিটামিন ‘সি’র কার্যকারিতা বাড়ায়। এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়। পেঁয়াজে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও ‘ই’র মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর। এতে ত্বক সুস্থ থাকে। ত্বক ভালো রাখতে বেশি করে খাবারে পেঁয়াজ রাখা উচিত।
লাল মরিচ
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লুক লাবোর্ড বলেন, ঝালযুক্ত খাবার রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে বেশি ঘাম সৃষ্টি করে। ঘাম শুকালে তখন শরীর ঠাণ্ডা হয়। লাল মরিচে যে ক্যাপসিসিন থাকে, তা শরীরের তাপমাত্রা না বাড়িয়ে বেশি ঘাম সৃষ্টি করে। নতুন এক গবেষণার বরাত দিয়ে জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিদিন লাল মরিচ খেলে মৃত্যুর হার হ্রাস করে। হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও ১৩ শতাংশ কমে যায়। যারা নিয়মিত লাল মরিচ খান, তাদের কোলেস্টেরল কম থাকে। ষ

 


আরো সংবাদ



premium cement