২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গামছার বুননে ফ্যাশন : রঙের ঝলক

-

গামছাকে যদি আপনি স্বল্পগণ্ডিতে বেঁধে ফেলেন, তাহলে ভুল হবে। কারণ গামছাকে এত হেলাফেলা করার দিন আর নেই।
এমনিতে গামছা হলো গিয়ে এক্কেবারে খাঁটি মাল্টিটাস্কার। গা মোছে বলে তার নাম গামছা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হিসাব এত সহজ নয়। বাঙালির জুতা সেলাই থেকে মাথার টুপি পর্যন্ত সব কিছুতেই স্বমহিমায় বিরাজমান। জেলে গামছা দিয়েই কুঁচো মাছ ধরে, মুটের মাথায় গামছার বিঁড়ে। মোটকথা আমরা তেমন গুরুত্ব না দিলেও গামছা ছাড়া কিন্তু বাঙালির জীবন অচল।
সদ্যই গামছার দর একটু হলেও বেড়েছে। বাড়ির বারান্দায় তারে ঝোলানো হেলাফেলার গামছা কিন্তু এখন ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের হাত ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হাজির। গামছা ঢুকে পড়েছে এক্কেবারে সাজঘরে। একফালি গামছা দিয়ে এখন কী না হচ্ছে। বহুদিন ধরেই চলছে গামছা ফ্যাশন। তবু নিত্যনতুন রূপে ধরা দিচ্ছে গামছার ফেব্রিক্স। প্রথমত সুতির কাপড় বলে গরমে খুবই আরামদায়ক। দ্বিতীয়ত ইউনিক। আর এতেই গামছা হয়ে উঠেছে অনন্য।
আদিকথা
গামছার ইতিহাস যদি দেখা যায় তাহলে বলা যায় গামছা একটি পাতলা অমসৃণ সুতির তোয়ালে, যা ভারতের পূর্বাঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা) এবং বাংলাদেশের বহুলব্যবহৃত পোশাকসামগ্রী। গোসলের পর শরীর বা গা মুছতে এটি ব্যবহৃত হয়। গামছা শব্দটি এসেছে বাংলা গা মোছা শব্দ থেকে। অধিকাংশ গামছাতেই চেকের ব্যবহার দেখা যায়। গামছা সাধারণত লাল, কমলা, সবুজ ইত্যাদি রঙের হয়। সেলাই করা বা ছাপা পাড়ের। শুধু সাদা গামছা উড়িষ্যাতে রুমাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং কখনো গলায় জড়িয়ে রাখা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে তোয়ালের তুলনায় গামছা জনপ্রিয়। কেননা এটি ইউরোপীয় ঘরানার তোয়ালের মতো মোটা নয়, পাতলাÑ যা এই উপমহাদেশের আর্দ্র আবহাওয়ার সাথে মানানসই।
আভিধানিকভাবে গামছার নাম ও উৎপত্তি সম্পর্কে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। এর অর্থ হচ্ছে কোনো বস্তু দিয়ে শরীর মোছার কথা (গা-শরীর+মচ্)। ফলে অসমীয়া সংস্কৃতিতে গামছা বস্তুটিকে গা-মোছা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
ফ্যাশনে গামছার ডিজাইন
সমাজের সাধারণ শ্রেণীর মানুষ গামছাকে পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেও এখন এটি সর্বত্র ই ফ্যাশনেবল পোশাকে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গামছা তৈরি হলেও মনিপুরী, সাঁওতাল ও চাকমা আদিবাসী সম্প্রদায় এসব গামছা তৈরি করে থাকে। তবে দেশের সেরা গামছা তৈরি হয় নওগাঁর রানীনগরের তাঁতিপাড়ায়। এ ছাড়াও খুলনার ফুলতলা আর ঝালকাঠির বাসণ্ডায় তৈরী গামছার চাহিদাও রয়েছে। ঝালকাঠি জেলার তাঁতের গামছা বিশ্বজুড়ে বেশ সমাদৃত।
অনেকেই গামছা দিয়ে তৈরি করছে নিজের পরিধেয়। ফলে বৈশাখের ফ্যাশনে গামছা অন্যতম অনুষঙ্গ। বিভিন্ন রঙের চেক প্যাটার্নের গামছা দিয়ে এখন তৈরি হচ্ছে শাড়ি, ফতুয়া, টপস এমনকি পাঞ্জাবিও। এর নেপথ্য কারণ হলো, গামছার কাপড় অনেক নরম, পাতলা ও পানি শোষণে সহায়ক। গরমে বেশ আরামদায়কও বটে। ফ্যাশন হাউজগুলোতেও গামছা দিয়ে নানা ধরনের পোশাক দেখা যায়। গামছা কম্বিনেশনে পাঞ্জাবি, প্যান্ট, শার্ট ও ফতুয়াতেও আনা হয় নতুনত্ব। আবার কোথাও কোথাও গামছা ফ্যাশনের দুনিয়া ছাড়িয়ে চলে গেছে জুয়েলারি বক্স, কপালের টিপ, মাথার ব্যান্ড ও ফিতার মধ্যে। ঘরের লাম্পশেড, কুইল্ট, ডাইনিং টেবিলের রানার, প্লেসমেট, টিস্যুবক্স, কুশনকভার ও জানালার পর্দাও তৈরি হচ্ছে গামছা দিয়ে। শুধু কি তাই? গামছা কেটে বানানো হয় জুতা, গলার মালা, কানের দুল, চুড়ি, ফেন্সি ব্যাগ।
এক কথায় এটি এখন সুতি ও তাঁতের কাপড় বা ফেব্রিক হিসেবে যা যা করা যায়, তার সবই করা হচ্ছে। এখন আর গা মোছা থেকে গামছা নয়, সময় বদলেছে। আড়াই হাত গামছা এখন জায়গা করে নিয়েছে ১২ হাত শাড়ির ফ্যাশনেও। সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাকে এখন রঙিন গামছার উজ্জ্বল উপস্থিতি। ফ্যাশনে গামছা নিয়ে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন ভাবনা।
গামছা শাড়ি
প্রথমে আসা যাক শাড়িতে। গামছা চেকের শাড়ি এখন দারুণ ট্রেন্ডি। একটু ভালো বুটিক কালেকশনে চোখ রাখলেই একটা গামছা চেকের শাড়ি পেয়ে যাবেন হাতের কাছে। সকালে আদি সাদা-লাল গামছা চেকের শাড়ি পরুন, যেকোনো উৎসবে কপালে ছোট্ট লাল টিপ আর গাঢ় কাজল। শুধু শাড়িতে পড়ে থাকলে চলবে না, রয়েছে সালোয়ার-কামিজসহ আরো অনেক কালেকশন। কিনতে পারবেন নিজের পছন্দমতো।
দরদাম : দোকানভেদে গামছা দিয়ে তৈরি সামগ্রীর দামে পার্থক্য থাকবে। একটি গামছার দাম হয় ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। গামছার তৈরি শাড়ি এক হাজার-তিন হাজার টাকা, সালোয়ার-কামিজ এক হাজার ৩০০-দুই হাজার ৮০০ টাকা, ফতুয়া বা টপস মিলবে ৬০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়াও জানালার পর্দা ৬০০-এক হাজার ৩০০, বিভিন্ন জুয়েলারি ২০০-এক হাজার, কুশনকভার ৪০০-৮০০, বিছানার চাদর কিনতে খরচ করতে হবে ৮০০-এক হাজার ৫০০ টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’ গুমের ঘটনা তদন্তে কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি : কমিশন প্রধান দায়মুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশেষ তদারকি শুরু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস ও অভিজ্ঞতা আমার আছে ইমরানের দলের বিক্ষোভ ঠেকাতে ইসলামাবাদ লকডাউন ডেঙ্গুতে ১ দিনে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল