ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প
ফিচার- শওকত আলী রতন
- ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। সে ঐতিহ্য বাঙালি বুকে লালন ও পালন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। তেমনি বাংলার এক শিল্প মৃৎশিল্প। এই শিল্পের অতীত ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধশালী। হাঁড়িপাতিল থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হতো মৃৎশিল্পের নানা তৈজসপত্র। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের ব্যবহার কমে গেছে অনেকাংশে, আর এ শিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য সামগ্রী। এগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। তবু এগুলো ব্যবহার হচ্ছে অবলীলায়।
জীবন-জীবিকার তাগিদে আমাদের দেশের মৃৎশিল্পীরা প্রাচীন এ পেশাকে ধরে রেখে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে যাচ্ছেন। আগের মতো বিক্রি না হলেও একেবারে যে বিক্রি নেই মাটির জিনিসপত্রের, সে কথাও বলা যাবে না। মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে মৃৎশিল্পীরা তৈরি করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য। পণ্য সামগ্রীতেও আনছেন বৈচিত্র্য। এসব পণ্যসামগ্রী কেউ ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করছেন, আবার কেউ পয়লা বৈশাখ কিংবা বাংলা সং¯ৃ‹তির লোকজ উৎসবে মাটির তৈরি পণ্যের ব্যবহার করেন। তবে আসল বাঙালিয়ানায় বিশ^াসীরা এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন মাটির পণ্যসামগ্রী।
মৃৎশিল্প একসময়ে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বাঙালির জীবন থেকে এই শিল্প একেবার মুছে যাবে না। হাজার বছর ধরে এসব পণ্য কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে আমাদের সংস্কৃতির সাথে। এখনো আমাদের দেশের মৃৎশিল্পীরা অতীত ঐতিহ্যকে ধরে সগৌরবে তৈরি করছেন মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলস, থালা, বাসন, জগ, পেয়ালা, বাটি, ফুলদানি, গ্লাস, কাপ, লবণদানি, ফিরনি সেট ইত্যাদি। এসব পণ্যের ক্রেতাও রয়েছে আমাদের দেশে।
মৃৎশিল্প তৈরিতে এসেছে নান্দনিকতা ও ডিজাইন। অন্যান্য শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতা না থাকলেও গ্রাহকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে করা হয় লতাপাতা আর ফুলের নকশা। নকশায় আকৃষ্ট হয়ে এগুলো শৌখিন মানুষেরা সংগ্রহ করে থাকেন অনেক ক্ষেত্রে। বাংলা বর্ষবরণকে টার্গেট করে মৃৎশিল্পের নান্দনিক ডিজাইনের পসরা সাজায় বিক্রেতারা। মাটির পণ্যের রঙে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। একসময়ে এক রঙের ব্যবহার হলেও এমন ব্যবহার হচ্ছে অনেক রঙের। বাংলা নতুন বছরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষেরা মাটির জিনিসপত্র কিনে থাকেন। ফলে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় নতুন বছরে বিক্রি বেশি হয়ে থাকে। এ বিষয়ে রাজধানীর দোয়েল চত্বরে শোভা হ্যান্ডিক্রাফটের একজন বিক্রেতা জানান, মাটির তৈরি নানা ধরনের তৈজসপত্র সারা বছর কমবেশি বিক্রি হলেও বৈশাখ উপলক্ষে বিক্রি বেড়ে যায়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। তখন অনেকেই শখের পণ্যটি কিনে নিয়ে যান। এ ছাড়া প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন এসে মাটির জিনিসপত্র সংগ্রহ করে থাকেন। তবে আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষই যদি নিজের তাগিদে এসব পণ্য ব্যবহার করত, তাহলে বিক্রি বেড়ে যেত অনেক। মৃৎশিল্পের বিপুল সমাহার রয়েছে রাজধানীর শিশু একাডেমির সামনে দোয়েল চত্বরসংলগ্ন রাস্তার দু’পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে। এ ছাড়া নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনে, ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়কের ফুটপাথ, কলাবাগান এবং শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটসহ নামীদামি সব শপিংমলে পাওয়া যাবে মাটির জিনিসপত্র।