নারী দিবস ভাবনা : রঙের ঝলক
- তাহাসিনা শাহীন
- ০৫ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
স্বত্বাধিকারী, ফ্যাশন হাউজ সাদাকালো
ফ্যাশন হাউজ সাদাকালো প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী তাহাসিনা শাহীন বলেন, আমি আসলে নারী দিবসের পক্ষে নই। এ দিবসের পরিবর্তে মানুষ দিবস পালন করলে ভালো হতো। পুরুষ করতে পারেন এমন সবকাজ নারীরাও সমানভাবেই করতে পারেন। পাহাড়ি এলাকায় গেলে দেখা যায়, নারীরা চাষাবাদ পর্যন্ত করছেন। এই জায়গা থেকেই বলব, সমাজে নারীর যে বৈষম্য, সেটি দূর করতে হলে মানুষ হওয়ার বিকল্প নেই। আমাদের সমাজে একজন মেয়েকে মানুষ হয়ে উঠতে হলে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। অথচ একজন ছেলেমানুষ যদি সারা জীবন ‘ছেলেমানুষী’ স্বভাব নিয়ে থাকে, তবে এ নিয়ে সমাজে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। এ অবস্থা থেকে বের হতে না পারলে সমাজ পরিবর্তন হবে না।
এত কিছুর পরও নারী দিবস পালনের কিছুটা ইতিবাচক দিক রয়েছে বলেও মন্তব্য তাহাসিনা শাহীনের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারী দিবস পালনের ফলে সমাজের চলমান বৈষম্যের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ে। তা ছাড়া এই দিবস মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে ছেলেরা, তারা নিজেরাই যদি এ অবস্থা ভাঙার চেষ্টা করে, তাহলে অবস্থা অনেক দ্রুত পরিবর্তন হবে।
সবশেষে বর্তমান নারীদের আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, যেকোনো প্রতিকূলতা ভাঙতে হলে নিজেদের সচেতনতার বিকল্প নেই। যেমন আমি একটা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। আমার ইনকাম দিয়ে সংসার খুব ভালোভাবেই চালাতে পারি। এখন যদি আমার স্বামীকে বলি, তোমার কিছু করার দরকার নেই, বাসায় বসে বসে খাবা; তাহলে মানুষ এ নিয়ে সমালোচনা করবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমার স্বামী আমার এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। অথচ একজন নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামী ভালো আয় করছে তাই সে অনেক পড়াশোনা জানা সত্ত্বেও গৃহস্থালির কাজের বাইরে আলাদা কোনো কাজ করার চিন্তাই করছে না। এতে করে নারীদের মনে পুরুষনির্ভরতা বাড়তে থাকে। নারীদের নিজের চেষ্টায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
মেহজাবীন চৌধুরী
মডেল, অভিনেত্রী
সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েই আলোচনায় এসেছিলেন মেহজাবীন চৌধুরী। তবে ‘বড় ছেলে’ নাটকে অভিনয় করার পর থেকে এই অভিনেত্রীর পরিচয় আরো বেশি শক্ত হয়েছে। এখন তো জনপ্রিয়তার বিচারে বাংলাদেশী নাটকের রানী বলা হচ্ছে তাকে। প্রায় প্রতিদিনই থাকে তার একাধিক নাটকের শুটিং। এর ফাঁকেই তিনি নারী দিবস নিয়ে কথা বলেছেন। মেহজাবীন বলেন, অনেকেই বলেনÑ নারী দিবস পালন করা ঠিক নয় বা এটা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমার মনে হয়, প্রতিটি বিষয়ের একটা উদযাপন তো হওয়া দরকার। আমার তো মনে হয়, প্রতি বছর নারী দিবস পালন করা উচিত। এটি আরো জাঁকজমকপূর্ণ হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়, কেন নারী দিবসের প্রয়োজন হয়েছিল। মানুষ কিন্তু একবারে সব কিছু বুঝতে পারে না বা একবারই উদ্বুদ্ধ হয় না। কাজেই এ দিবসটি আমাদের এ দিবসের প্রয়োজনীয়তা বারবার মনে করিয়ে দেয়। শুধু গ্রাম নয়, শহরেও অসংখ্য বঞ্চিত নারী আছেন। আসলে নারীদের উচিত, নিজেরাই নিজেদের উৎসাহিত করা। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রধান শর্ত নয়। আমি মনে করি, একটি মেয়ে কিন্তু একজন মা। আমি সন্তান জন্ম দিতে পারি। আমার হাতে অনেক কিছুই আছে, বলতে গেলে আমার হাতে পুরো জাতি। এই বিশ্বাস যদি নিজেদের মধ্যে থাকে, তাহলে নারীরা অনেকখানি এগিয়ে যাবেন। বাংলা নাটকের জনপ্রিয় এই নায়িকা বলেন, নারীরাই যে এই জগতের শক্তির উৎস আর প্রেরণা, তা ৮ মার্চ বিশ্ব আলাদা করে মনে করে দেয়। কিন্তু নারীসমাজ আজো তাদের কাক্সিক্ষত দাবি অর্জন করতে পারেনি। সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুদীর্ঘকাল ধরে নারীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিনটি আসলে নারীদের অধিকার এবং সম্মানের বিষয়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয়। সমাজের প্রতিটি স্তরেই নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রত্যেকেই নিজের অবস্থান থেকে যদি সচেষ্ট থাকেন এবং নিজের কাজ দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন কতটুকু বুঝিয়ে দেন, তাহলেই আসবে নারী দিবসের সার্থকতা।
তানজিন তিশা
মডেল, অভিনেত্রী
এক বছর ধরে বাংলাদেশী নাটকের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীর তালিকায় রয়েছেন তানজিন তিশা। তিনি বলেন, নারী পরিচয় আমার গর্ব। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশ্বের সব নারীর মঙ্গল কামনা করছি। আমি মনে করি, নারী ও পুরুষ আলাদা সত্তা নয়, সবাই মানুষ। তার পরও একজন নারীর জীবনে প্রতিবন্ধকতার সীমা নেই। সামাজিক অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজের অধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত। এ অবস্থা থেকে নারীকে নিজ চেষ্টায় সব বাধা অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি দিনই সংগ্রামের। তাই নারী দিবস উদযাপনের পাশাপাশি নারীর এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম যেন অব্যাহত থাকে, এ কামনা করি। তিশা বলেন, আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই। যেমনÑ আমরা কী করছি? আমরা কী চাই? আমরা কি সম-অধিকার চাই? নাকি মানুষ হিসেবে পূর্ণ মর্যাদা চাই? আমরা সেজেগুজে ‘শোপিস’ হয়েই খুশি থাকতে চাই না, সৃষ্টিশীলতা আর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সম্মান অর্জন করতে চাই। ‘লোকে কী বলবে?’ ‘সমাজ মানবে না’ ভেবে অপমান সহ্য করেও বন্দী হয়ে থাকতে চাই না। সমাজ বদলের জন্য হাতে হাত ধরে দৃপ্ত পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক ক্ষেত্রেই একজন নারী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। যে নারী নিজে বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন, তিনিই কঠিন রক্ষণশীলতা দেখাচ্ছেন তার পুত্রবধূর সাথে। কোনো নারী অত্যাচার করছেন তার নারী গৃহকর্মীকে। কেবলই ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে এগিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছেন তার সম্ভাবনাময়ী নারী সহকর্মীকে। এই জায়গাগুলোতে আমাদের অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে।