২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সঠিক উপায়ে ডায়েটিং : রঙের ঝলক

মডেল : শবনম ফারিয়া, ছবি : মুমু মারিয়া -

ডায়েটিং এই সময়ের বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। আধুনিক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ মেদবিহীন, সুন্দর ও স্লিম স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ডায়েটিং করছেন। যদিও ওজন কমাতে বেশির ভাগ মানুষ ডায়েটিং করেন কিন্তু কখনো ওজন বাড়ানো বা ভগ্নস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্যও ডায়েটিং করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যক্তির বয়স ও উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুন্দর, সুস্থ ও সতেজ স্বাস্থ্যর জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা মেনে চলাই ডায়েটিং। তবে ডায়েটিং শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। কারণ সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে ডায়েটিংয়ের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার বদলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ডায়েটিং মানে শুধু না খেয়ে থাকা নয়। বরং দেহের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর পরিমিত খাবার খাওয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডায়েটিং করে ওজন কমলেও সারা বছর এ নিয়ম অনেকেই পালন করতে পারে না। ফলে আবার মোটা হতে শুরু করে। ডায়েটেশিয়ান ফারহানা জান্নাতি বলেন, ডায়েটিং করার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, তাহলে ডায়েটিং করতে হলে প্রথমেই খাওয়ার অভ্যাসে রদবদল করতে হবে।
এটা ঠিক যে, অনেক দিনের অভ্যাস এক দিনেই বদলে ফেলা সম্ভব নয়। তবে সদিচ্ছা থাকলে কোনো কিছু অসম্ভবও নয়। প্রতিদিন অল্প করে আপনার অভ্যাসে বদল আনতে হবে। সাধারণত যেসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকার, যেমন অতিরিক্ত চর্বি ও তৈলাক্ত খাবার, সফটড্রিংকস, চকোলেট এবং অ্যালকোহলসমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া চা, কফি, পনির, ডিপ ফ্রায়েড ফুড, চকলেট কেক, রিচ ডেজার্ট, অতিরিক্ত চিনি ও নোনতা খাবারের পরিমাণও কমিয়ে দিতে হবে। মওসুমের ফল, সবজি ও শাক খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ এসব ফল আবহাওয়া অনুযায়ী আলাদা পুষ্টিগুণ বহন করে। সেগুলো সুস্থ থাকার জন্য খুবই উপকরী। এ ছাড়া সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের সবজি (রান্না করা) হার্বালটি যেমন গ্রিনটি, জিঞ্জারটি, লেমনটি, সবজি বা ফলের সালাদ, স্যুপ, দুধ, ডিম, বাদাম খেতে পারেন। ওট, সয়াবিন, যবের ছাতু, নুডুলস খেতে পারেন।
আমাদের প্রচলিত একটা ধারণা হচ্ছে, ভাত মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু অন্য খাবারের মতো ভাতও পরিমিত পরিমাণে খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। মোটামুটি ১০০ গ্রাম ভাতে রয়েছে ১০০ ক্যালরি। ফ্যাটের পরিমাণও থাকে কম। পরোটা, তেলে ভাজা লুচি ও পুরিতে দেহে চর্বি জমা হওয়ার সুযোগ বেশি। দুই বেলা ভাত খেতেই পারেন তবে আপনার উচ্চতা ও ওজন অনুযায়ী ভাতের পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখুন। আটা বা ময়দার তৈরি রুটিও পরিমাণ মতো খান। অফিসে বসে অতিরিক্ত মসলাদার খাবার না খেয়ে হালকা খাবার, তাজা ফল ও ফলের রস, শুকনো খাবার বিস্কুট, কেক, লেবু বা আদা চা খেলে বেশি ভালো হয়। হজমের সমস্যা হবে এমন খাওয়া না খাওয়াই ভালো। খাবারে অতিরিক্ত লবণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকার, বিশেষ করে যাদের হাইব্লাড প্রেসার আছে। বেশি লবণ খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে কখনোই পাঁচ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
অনেকেরই জানা নেই, বিভিন্ন রকম প্রসেসড ফুড, যেমন ব্রেকফাস্ট, সিরিয়াল, চিজ, সস, আচার ও বিস্কুটে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এ ধরনের খাবার কম খাওয়াই ভালো। অনেকেই লো ফ্যাট খাবার খান। লো ফ্যাট খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। লবণ বেশি খাওয়া খারাপ। রান্নায় যতটুকু লবণ না দিলেই নয়, ততটুকুই দিন। চিনির বদলে মধু খেতে পারেন। দুধ হলো এক কথায় সুষম খাদ্য। রাতে ঘুমানোর আগে কিংবা সকাল বেলায় নাশতার সময় এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন। দুধ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম আর ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে বলে দুধ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ৩৫ বছরের পর থেকে মাঠা তোলা দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ মাঠা তোলা দুধ পুরোপুরি ফ্যাটবিহীন। প্রচুর পানি পান করুন। ব্যায়াম বা অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটির পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফলের রস ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
বেয়ারবিজ ফিটনেস ক্লাবের কর্ণধার শারমিন সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, কঠিন ডায়েটিং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকার জন্য মানুষের শরীরে যে পরিমাণ ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন অর্থাৎ বিভিন্ন খাদ্য উপাদান প্রয়োজন; দিনের পর দিন সেগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকলে এর ক্ষতিকর প্রভাব দেহের ওপর পড়বেই। এর থেকে স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ডায়েটিংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিশোর ও তরুণ বয়সীরা। কারণ এ সময়টা হচ্ছে শরীর গঠনের সময়। এ সময়ে কার্বোহাইড্রেটের স্বল্পতা, স্নেহজাতীয় খাবারের অভাব মাঝে মধ্যে শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়। এরা পরে নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভোগে। কিশোর ও তরুণ বয়সীদের সব রকম খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এতে তাদের শরীর প্রয়োজনীয় সব খাদ্যগুণ গ্রহণ করতে পারবে। আধুনিক অনেক নারী ডায়েটিং মানে বোঝেনÑ না খেয়ে থাকা বা জিমে যাওয়া। কিন্তু এটি মোটেও সঠিক পদ্ধতি নয়। খাবারের পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলুন, যেমন প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। বেশি রাত জাগবেন না। প্রতিদিন সকালে-বিকেলে ৪৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন। দুপুরের খাবারের পরে ঘুমানের অভ্যাস করবেন না। রাতে খাবার তাড়াতাড়ি খাওয়ার অভ্যাস করুন। ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। বেশি স্ট্রেস নেবেন না। যতটা সম্ভব মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। সবসময় পজিটিভ চিন্তা করুন। অল্প করে বারবার খাবার খান। পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করুন। এতে ব্লাড সুগার লেভেল এবং এনার্জি ঠিক থাকে। ইয়োগা ও এরোবিকস এখন তরুণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আধুনিক জীবনযাত্রায় যা ভালোই আসন করে নিয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে জিম, ইয়োগা ও এরোবিক্স ওজন নিয়ন্ত্রণ ও সুস্থ জীবনযাপনে সাহায্য করে।


আরো সংবাদ



premium cement
১৯ দিন পরেও অঘোষিত ক্যালিফর্নিয়ার ফলাফল! হারেৎসের ওপর ইসরাইল সরকারের নিষেধাজ্ঞা, সকল সম্পর্ক ছিন্ন নিজ্জর-হত্যায় অভিযুক্ত ৪ ভারতীয়ের বিচার শুরু কানাডায় ফলোঅন এড়ালেও ভালো নেই বাংলাদেশ আইপিএল নিলামের প্রথম দিনে ব্যয় ৪৬৭.৯৫ কোটি রুপি : কে কোন দলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে ট্রাম্প 'ভীষণ চিন্তিত' নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত

সকল