রঙিন চুলে সাজি
রঙের ঝলক- জারীন তাসনিম
- ০২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
রূপকথার স্বর্ণকেশী রাজকন্যাদের গল্প শুনতে কতই ভালো লাগত। এসব গল্পে রাজকন্যাদের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতেই আসত সোনালি চুলের কথা। আমাদের দেশে অবশ্য সোনালি চুল কারো হয় না। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে চুল সোনালি রঙের করে নেয়া এখন আর কঠিন কিছু নয়। সোনালি কেন লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি যেকোনো রঙে আজকাল চুল রাঙিয়ে নেয়া যায়। আর এই কাজটি যেভাবে করা হয় তাকে বলা হয় ডাই করা অর্থাৎ রাঙিয়ে নেয়া। এখন এটি খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। অনেকেই এখন চুল রাঙিয়ে নেন। কেউ কয়েকগুচ্ছ আবার কেউ পুরোটাই রাঙিয়ে নেন। কিন্তু রাঙালে তো হবে নাÑ ডাই করা চুলের জন্য প্রয়োজন যতœ। যতœ না নিলে চুলের ক্ষতি হতে পারে। চুল হয়ে পড়বে রুক্ষ, চুল পড়া, র্যাশসহ বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই ডাই করা চুলের নিয়মিত পরিচর্যায় প্রয়োজন। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন নভীনসের বিউটি কনসালটেন্ট আমিনা হক।
চুল দুইভাবে কালার করা হয়। একটি পার্লামেন্ট কালার অন্যটি টেম্পোরারি। চুল কালার করতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলোর বেশির ভাগ মূলত কেমিক্যাল মিশ্রিত থাকে। তাই কালার দীর্ঘস্থায়ী করার সাথে সাথে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে।
কালারফ্রেন্ডলি শ্যাম্পু : কালার করা চুলের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এতে কালার যেমন দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, তেমনি চুলের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। অন্য দিকে ভেষজ বা হালকা কোনো শ্যাম্পুও ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পুর সাথে কন্ডিশনার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
বেশি ধোয়া যাবে না : সপ্তাহে তিন চার দিন অনেকে চুল শ্যাম্পু করে থাকেন। চুলে কালার করা থাকলে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। বেশি ধোয়ার ফলে চুলের কালার হালকা হয়ে যায়। তাই সপ্তাহে দু’দিন শ্যাম্পু করলেই যথেষ্ট। যাদের বেশি শ্যাম্পু করার প্রয়োজন হয় তারা ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
আর্দ্রতা জোগানো : কালার করা চুল অনেকটাই শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে যায়। এই ক্ষতি থেকে চুল রক্ষা করতে প্রয়োজন চুলে আর্দ্রতা জোগানো। ঘরোয়া হেয়ার মাস্ক এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। তবে ঘরোয়া মাস্ক তৈরির সময় এর উপকরণ যেন কালারবান্ধব হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। লেবু, টকদই এ-জাতীয় উপকরণগুলো বাদ দেয়াই ভালো। কলা, মধুর মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
তাপ থেকে চুল রক্ষা করুন : হেয়ার ড্রায়ার বা হেয়ার আয়রনিং কালারড চুলের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর তাপ চুলকে সহজেই করে তুলতে পারে ভঙ্গুর। তাই যতটা সম্ভব চুল তাপের হাত থেকে রক্ষা করুন। এমনকি রোদ থেকে বাঁচাতে ছাতা ব্যবহার করুন।
ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন : অনেকেই চুলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে শীতের সময়। গরম পানি চুলের কিউটিকল খুলে দেয়। এর কারণে চুলের রঙ উঠে যেতে পারে। তাই চুলে ঠাণ্ডা অর্থাৎ স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করুন।
সুইমিংপুলে সতর্কতা : সুইমিংপুলে নামতে চাইলে প্রথমে চুল স্বাভাবিক পানিতে ভিজিয়ে নিন। কারণ ভেজা চুল লবণ ও ক্লোরিন কম শোষণ করে। একই সাথে সুইমিংপুল থেকে উঠে আবারো চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলের কালার ধরে রাখতে এই বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি।
প্রস্তুতি : চুল কালার করার কমপক্ষে দুই মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। নিয়মিত চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করুন শ্যাম্পু করার আগে। একই সাথে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করবেন। নিয়মিত ট্রিম করবেন। হিটিং টুলস যতটা পারেন বাদ দিন।
সঠিক কালার নির্বাচন : সঠিক কালার নির্বাচন করা খুবই জরুরি। চুলের ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে কালার ও ডেভেলপার নির্বাচন করুন। এর জন্য একজন বিউটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। অন্তত প্রথমবার কালার করার সময় অবশ্যই পার্লার থেকে করে নেয়াই ভালো।
নির্দেশনা মানুন : প্যাকেটের গায়ের নির্দেশনা ভালোভাবে বুঝে নিয়ে তারপর ব্যবহার করুন।
ষ কালার করার অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে চুল শ্যাম্পু করুন।
ষ ব্যবহৃত প্রোডাক্টের অ্যালার্জি টেস্ট করে তবেই ব্যবহার করবেন।
ষ কালার ব্যবহার করার আগে চুলের লাইন ধরে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন। তাহলে কালার ত্বকে লাগবে না।
নির্দেশনায় যে সময় দেয়া আছে ঠিক ততখানি সময় চুলে কালার রাখুন।
সঠিক পরিচর্যা একদিকে যেমন আপনার চুলের রঙ বজায় রাখবে দীর্ঘ দিন, অন্য দিকে তেমনি চুল থাকবে ঘন ও ঝলমলে।