ডেঙ্গু প্রতিরোধে জরুরি সচেতনতা : রঙের ফিচার
- শওকত আলী রতন
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আতঙ্কের নাম ডেঙ্গুজ্বর। প্রতি বছর বর্ষা মওসুম এলেই রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়তে থাকে এ রোগের প্রকোপ। এডিস মশাবাহিত এই রোগে সাধারণত সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রত্যেকটি বাড়িতে কোনো-না-কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়। এ বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় এক হাজার ৫০০ রোগী।
জুলাই থেকে অক্টোবর এ পাঁচ মাস ডেঙ্গুর প্রকোপ কিংবা উপদ্রব বেড়ে যায় বহলাংশে। যে কারণে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ সময়টাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। বলাবাহুল্য, যেহেতু ডেঙ্গুজ্বরের এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই কিংবা কার্যকর কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি, সে জন্য আক্রান্ত হওয়ার আগেই এ রোগের প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। একমাত্র সচেতনতাই পারে এ রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে। ব্যক্তি থেকে সরকার প্রত্যেকেই কিছু পদক্ষেপ নিতে পারলে অনেকাংশে কমে যাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিশনারদের নেতৃত্বে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। বাড়িতে ফুলের টব, ড্রাম, ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার, পাতিল বা বালতি অথবা অন্য যেকোনো পাত্রের পানিতে যাতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে তার জন্য জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বাড়ির কোনো একটি অংশে নর্দমা জমে আছে আর সেই নর্দমায় জন্ম নিচ্ছে লাখ লাখ এডিস মশা। সেখান থেকে চার পাশে ছড়িয়ে পড়ছে জীবাণুবাহী এই মশা।
সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রকোপের সময়গুলোতে প্রতিদিন অথবা এক দিন পরপর ফগিং মেশিনে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে এডিস মশা বংশ বিস্তারের সুযোগ না পায়। এ ছাড়াও প্রতিটি বাসায় প্রতিদিন মশার কামড় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো জনসাধারণকে জানানো। ডেঙ্গু হলে কী করণীয় সে সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। রাজধানী ও জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথাও বিবেচনা করা দরকার।
একটি সূত্রের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। মশকনিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার হয় বেশি। এ মশা যত বেশি হবে, ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। ডেঙ্গুর উৎস বন্ধ করতে না পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর সাধারণ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ১০৪-১০৬ ডিগ্রির জ্বর ও প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে প্রতিটি হাড়ের জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা থাকে, বমি বমি ভাব, শরীরের চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ, দাঁতে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ এবং চোখ ও ত্বক লালবর্ণ ধারণ করাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া, মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। এ জ্বরে অনেক ক্ষেত্রে বুক বা পেটে পানি আসা, যকৃতে আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিসসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল ভিন্ন কোনো ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ সেবনে রোগী আরো বেশি সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে প্রচুর পানি, তরল খাবার ও বিশ্রাম এ রোগের নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। জ্বর হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।