বৃষ্টির দিনে সাজ
রঙের ঝলক- আলমগীর কবির
- ২৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
মেঘলা আকাশ, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরম, আবহাওয়ার ধরন দেখে বোঝার উপায় নেই সময়টা আসলে গ্রীষ্ম নাকি বর্ষাকাল। রোদের কড়া মেজাজ দেখে সন্দিহান হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই বলে বর্ষাকে উপেক্ষা করার উপায়ও নেই। রোদ যতই থাকুক, বৃষ্টি তো আসবেই। আর সময় যেহেতু বর্ষাকাল, আগাম কোনো জানান না দিয়েই দেখা দেবে বৃষ্টি। প্রকৃতির এই রূপ বদলের সাথে সাথে বদলাবে আমাদের সাজপোশাকের ধরন। ঠিক এ রকম একটা অবস্থায় জেনে নেয়া যাক ২০১৮ সালের তিন লাক্স তারকার নিজস্ব ফ্যাশন ও সাজ ভাবনা।
মিম মানতাশা, সারওয়াত আজাদ বৃষ্টি ও সামিয়া অথৈ। চলতি বছর লাক্স সুপাস্টার প্রতিযোগিতায় তারা হয়েছে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়। তিনজনই এখনো ছাত্রী। দুইজন পড়ছেন পাবলিকে, একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ায় তাদের ফ্যাশন আর সাজ নিয়ে রয়েছে আলাদা আগ্রহ।
সেই আগ্রহের সূত্র ধরেই বর্ষার ফ্যাশন সম্পর্কে বললেন মিম মানতাশা। ‘আমি সব সময় সাধারণ লুকে থাকতে পছন্দ করি। খুব বেশি মেকআপ নিতে আমার ভালো লাগে না। যেহেতু এখন বর্ষাকাল, আমার মনে হয় সবারই হালকা মেকাপে থাকা ভালো।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ¯œাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী তিনি। স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেছেন পাবনায়। তবে সাজে শহুরে মেজাজটাই ফুটে ওঠে বেশি। এ সম্পর্কে মানতাশা বলেন, ‘বাইরে বের হওয়ার সময় কাপড়ের রঙ নির্বাচনে উজ্জ্বল ও গাঢ় রঙগুলো আমার ভালো লাগে। এমনিতে নীল ভালো লাগে। বৃষ্টি হলে নীলের প্রতি দুর্বলতা আরো বেড়ে যায়।’ মানতাশার গ্রামের বাড়ি পাবনায়। শহরে বড় হলেও গ্রামের সাথে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। সাজের ক্ষেত্রেও তিনি সেটা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগিতা ২০১৮-এর চ্যাম্পিয়ন তিনি। তাই প্রশ্ন ছিল প্রতিযোগিতা চলাকালীন সাজের অভিজ্ঞতা নিয়েও। মানতাশাও খুব উৎসাহ নিয়ে জবাব দিলেন, ‘পারসোনার প্রতি আমার দুর্বলতা আগে থেকেই। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কানিজ আলমাস খানের সাথে ফ্যাশন নিয়ে আলাপ করে অনেক ভালো লেগেছে। তা ছাড়া, কোরিওগ্রাফার হিসেবে আজরা মাহমুদকে পাওয়াটা ছিল আমার অনেক বড় প্রাপ্তি।’ ফ্যাশন জগতে তার প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে অনেক ভালো লাগে।’
সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হয়েছেন সারওয়াত আজাদ বৃষ্টি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। ফ্যাশনটাকে তিনি আলাদা অনুষঙ্গ ভাবতে নারাজ। বৃষ্টির ভাষায়, ‘আমার সব কিছুই হবে সময়কে প্রাধান্য দিয়ে। শীত-বর্ষা-গ্রীষ্ম এই সময়গুলোতে সাজ হবে ভিন্ন এটাই তো স্বাভাবিক। গরমের দিনে যেমন ভারী মেকাপ নিতে ভালো লাগে না, শীতে হয় তার উল্টো। বর্ষায় চোখে শুধু কাজল দেই, মাঝে মধ্যে ঠোঁটে দিই লিপস্টিক। এটাই আমার ফ্যাশন।’ ফ্যাশনের ক্ষেত্রে বৃষ্টির কাছে সবচেয়ে বড় আইডল মা শিরিয়া খানম। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাজের বেলায় আমি কখন কী করব তা মা-ই ঠিক করে দেন। এই যেমন বর্ষাকাল এলে মা বলে দেন, তোকে হালকা সাজে ভালো লাগবে। আমি সে রকমভাবেই কপালে ছোট টিপ এবং চোখে নীল, সবুজ বা ছাই রঙের কাজল দেই। চোখের সাজের ক্ষেত্রে ওয়াটারপ্রুফ কাজল, মাশকারা, লাইনার ব্যবহার করি। মাঝেমাধ্যে আইশ্যাডো দিলে হালকা কোনো রঙ বেছে নিই। হালকা ফেস পাউডার লাগানো হয় প্রয়োজন হলে। লিপস্টিকের বেলায় গ্লসি লুক টাই আমার ভালো লাগে। হালকা গোলাপি, বাঙ্গি, হালকা বাদামি ধরনের রঙ বাছাই করি সময়টাকে প্রাধান্য দিয়ে।’ বৃষ্টির গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ছোটবেলা থেকেই গান-নাচ ভালো লাগত। কিন্তু বাবা বলেছিল সব কিছুই করবে তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়ে বাবার সেই কথা তিনি রেখেছেন। বৃষ্টি বলেন, আমার মনে হয় যেকোনো সাজই ফুটে ওঠে যদি ডিসিপ্লিন্ড থাকেন। যারা আমাদের গ্রুমিংয়ে ক্লাস করিয়েছিলেন আফসানা মিমি আপু, আজড়া আপু তাদের সংস্পর্শ পেয়েছি। ওনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
মানতাশা আর বৃষ্টির থেকে একটু অন্যরকম ভাবনা সামিয়া অথৈ-এর। তার কাছে সব সময়ই ওয়েস্টার্ন লুক ভালো লাগে। আবহাওয়া যেমনই থাকুক ওয়েস্টার্ন মেকআপকেই বেশি প্রাধান্য দেন। তিনি লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আগে থেকেই নাটকের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পড়াশোনা করছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ। ইংরেজি বিষয়ে। নিজের ফ্যাশন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার কাছে ছোটবেলা থেকেই ওয়েস্টার্ন সাজটা অনেক ভালো লাগে। মাঝে মধ্যে ওয়েস্টার্নের সাথে দেশী সাজের মিল রাখার চেষ্টা করি। যেমন বর্ষার সময়ে চুলের জন্য বর্ষা উপযোগী বাঁধন। হাতখোঁপা করতে আমার ভালো লাগে। সব চুল একসাথে মাথার নিচের দিকে এনে সেখানে ধরে হাতের সাহায্যে খোঁপা করি। খোঁপা আটকানোর জন্য ব্যবহার করি চুলের কাঁটা। মাঝে মধ্যে ফ্রেঞ্চ বেণী করি। এক্ষেত্রে প্রথমেই চুলগুলো ভালোভাবে গুছিয়ে নিই। এরপর মাথার ওপরের মাঝখানের অল্প কিছু চুল নিয়ে তা তিন ভাগে ভাগ করে নিয়ে সেই চুল দিয়েই কপালের সামনে থেকে বেণী করি। এভাবে বেণী করে নিয়ে ঘাড় পর্যন্ত আসার পরে বাকি চুল দিয়ে সাধারণ বেণী করে বেরিয়ে পড়ি। জিন্স, টপ, ফতুয়া যেকোনো পোশাকের সাথে এ বাঁধন বেশ মানানসই। চুলে বর্ষার কোনো ফুল গুঁজে নিতে পারলে আরো ভালো লাগে।’