এ সময়ে শিশুর যতœ
রঙের ফিচার- নিপা আহমেদ
- ২৬ জুন ২০১৮, ০০:০০
শিশুরা যেন অতিরিক্ত না ঘামে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে অনেক সময় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশু অতিরিক্ত ঘেমে গেলে কাপড় পাল্টে শরীর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে দিন। ঠাণ্ডা ও শীতল জায়গায় শিশুকে রাখুন। নিয়মিত গোসল করাবেন
যদিও বর্ষাকাল শুরু হয়েছে, তারপরও গরমের প্রকোপ একটুও কমেনি। আর প্রচণ্ড গরমে শিশুদের মধ্যে খাবারে অরুচি ক্লান্তিসহ নানা রকম অসুখ বিসুখ দেখা দেয়। গরমে শিশুদের অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করতে তাদের খাবারদাবার ও পরিচর্যার বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে।
প্রথমেই শিশুর খাবারের দিকে বিশেষ যতœ নিতে হবে। অনেক শিশুই খেতে চায় না। তাই তাদের হাসিমুখে বা খেলার ছলে খাওয়াতে হবে। শিশুদের সুষম খাবার খেতে দিন, বাইরের খাবার না দিয়ে ঘরে বানানো খাবার শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শিশুকে শাকসবজি, মাছ, গোশত, দুধ, ডিম, ফলমূল দিতে হবে। শিশুদের দুধের তৈরি খাবার যেমনÑ কাস্টার্ড, ফিরনি, পুডিং ইত্যাদি খেতে দিতে পারেন। সবজি ও মুরগির স্যুপ এবং বিভিন্ন মওসুমি ফল শিশুকে খেতে দিন। এতে শিশুর শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকবে। বাইরের কেমিক্যালে তৈরি জুস না দিয়ে বাড়িতেই জুস তৈরি করে দেবেন। তবে সরাসরি ফল খাওয়াই ভালো। এখন বাজারে নানা ধরনের ফল পাওয়া যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সেটা বেশ ভালো।
অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করাবেন। স্কুলগামী শিশুদের ব্যাগে ছোট বোতলে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে দেবেন যাতে সে অপরিচ্ছন্ন পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে পারে। শিশুকে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি, আইসক্রিম, কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। শিশু স্কুল থেকে ফেরার পর চিনি, লেবুর শরবত অথবা দইয়ের ল্যাসি দিতে পারেন। স্যালাইনও দিতে পারেন। শিশুরা অনেক সময় পানি কম খেয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে খেলার ফাঁকে ফাঁকে তাকে পানি খাওয়ানো প্রয়োজন। শিশুদের টাটকা রান্না করা খাবার খেতে দিন। বাসি, পচা, অপরিচ্ছন্ন খাবার শিশুর জন্য ক্ষতিকর। সঠিক নিয়মে খাওয়া দাওয়া করালে শিশুদের অনেক ধরণের অসুস্থতা থেকে রক্ষা করা যায়।
পোশাক ও প্রসাধনী
গরমে শিশুরা বেশ ঘামে। তাই তাদের ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক পরানো উচিত। সুতির ফ্রক, ফতুয়া ও বিভিন্ন ধরনের হাতকাটা গেঞ্জি বেশ আরামদায়ক হয়ে থাকে। শিশুরা যেন অতিরিক্ত না ঘামে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে অনেক সময় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশু অতিরিক্ত ঘেমে ে গলে কাপড় পাল্টে শরীর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে দিন। ঠাণ্ডা ও শীতল জায়গায় শিশুকে রাখুন। নিয়মিত গোসল করাবেন। শিশুর ত্বকের ধরন বুঝে ক্রিম, লোশন ও পাউডার ব্যবহার করুন। ঘামযুক্ত জামা কাপড় বা ভেজা জামা বেশিক্ষণ পরিয়ে রাখবেন না। তাতে শিশুর ঠাণ্ডা লাগার ভয় থাকে।
রোদে বের হতে হলে শিশুদের মাথায় ক্যাপ, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন লোশন পরিয়ে নেবেন, তাতে রোদের তাপ সরাসরি গায়ে লাগবে না। শিশুদের এবং নিজেরা বাইরে বের হতে হলে সবসময় ছাতা ব্যবহার করবেন। এ গরমে শিশুদের চুল বড় না রাখাই ভালো। মেয়েদের পরিষ্কার ও ছোট চুল আটকে রাখতে সুবিধা হয়। গরমও খুব একটা লাগে না। শিশুদের বেড়ানো বা কোনো অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জামা কাপড় ও মেকআপ ব্যবহার করাবেন না। এতে শিশুদের অস্বস্তি বাড়ে। পোশাক ও সাজের সঙ্গে জুতার ব্যাপারটিও মাথায় রাখবেন। জুতা যেন আঁটসাঁট না হয়, আরামদায়ক জুতা পরানোর চেষ্টা করবেন।
প্রচণ্ড গরমে শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। প্রচণ্ড গরমে ঘেমে ঠাণ্ডা লাগা, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, জ্বরের সাথে কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, বমি, অরুচি, মাথা ঘোরালে ও মাথা ও চোখ ব্যথা, গায়ে র্যাশ ও ঘামাচি, ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসায় শিশু ভাইরাসে আক্রান্তসহ ইত্যাদি অসুস্থতা দেখা দেয়। এ সব অসুস্থতার কোনো উপসর্গ দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক শিশুকে দেবেন না। জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সারা শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। ঠাণ্ডাপানি দিয়ে নয়। শিশুদের জ্বর থাকা অবস্থায় পানি ও পানিজাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে।
শিশু যখন সহজে কিছু খেতে চায় না তখন শরবত, ফলের রস, দুধ, স্যুপ, ইত্যাদি তরল খাবার কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। নাক দিয়ে সর্দি পড়তে থাকলে, শিশুটির নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। এ জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। বমি ও ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, তাজা ফলের রস, দই চিঁড়া, নরম ভাত, পাতলা ডাল, সবজি, মাছসহ স্বাভাবিক খাবার শিশুকে খেতে দিন। ঘর, বাথরুম, রান্নাঘর, বারান্দা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখুন। শিশুকে সুস্থ রাখতে চাই পরিমিত ঘুম, সরাসরি ফ্যানের নিচে শিশুকে না শোয়ানোই ভালো। সঠিক পরিচর্যায় এ প্রচণ্ড গরমেও আপনার শিশু থাকবে সুন্দর, সুস্থ ও প্রাণচঞ্চল।