ব্যক্তিত্বের বিকাশ রঙের ফিচার
- নিপা আহমেদ
- ১৯ জুন ২০১৮, ০০:০০
মানুষের জীবনে ব্যক্তিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে আপনি কিভাবে অন্যের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করছেন। আপনার আচার-আচরণ বা মনমানসিকতার বহিঃপ্রকাশও নির্ভর করে ব্যক্তিত্বের ওপরই। ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’ভাবেই একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তির জীবনে ব্যক্তিত্বের এই দুটো বৈশিষ্ট্যই গুরুত্বপূর্ণ। একেকজন মানুষ একেক রকমের বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে ওঠে। এই বেড়ে ওঠার সময় পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ থেকে তার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য জন্ম নেয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ই হচ্ছে ব্যক্তিত্ব। কাদামাটিতে যেভাবে ছাপ ফেলা হয়, শিশুকাল থেকে সেভাবেই মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। শিশুরা যা দেখবে সেভাবেই গড়ে উঠবে।
শিশুরা প্রথম শেখে তার পরিবার থেকে। বাবা-মা বা পরিবারের বড়দের যদি তারা উগ্র-উদ্ধত আচরণ করতে দেখে, তাহলে তারাও সে রকম আচরণ করা শেখে। কারণ এর একটা প্রভাব তাদের মধ্যে পড়ে। বড় হয়ে তারাও উগ্র মেজাজের হতে পারে। কারণ শিশুকাল থেকেই অর্থাৎ দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে থাকে।
যেহেতু এ সময় শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটতে থাকে, তাই এ সময় তাদের আচরণের দিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। এই বয়সী শিশুদের সামনে বড়দের আচরণ সুন্দর ও সংযত হওয়া জরুরি। খেলাধুলা ও সমবয়সী শিশুদের সাথে খেলামেশার সুযোগ করে দেয়া প্রয়োজন। তাদের জন্য শিক্ষামূলক কিছু ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। বাসার সাথে সাথে স্কুলেও শিক্ষকেরা আদর, স্নেহ ও জ্ঞান দিয়ে তাদের নীতিগত আদর্শ গড়ে দিতে পারেন, যা পরবর্তী জীবনে তাদের কল্যাণকর ও নীতিসম্পন্ন কাজ করতে শিক্ষা দেবে। সত্যনিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, সংযত আচরণ, উদারতা এগুলো মানুষের ব্যক্তিত্বে থাকা খুবই জরুরি। অন্য দিকে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ, উদ্ধত আচরণÑ এসব দেখে বড় হলে শিশুর মধ্যেও এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ব্যক্তিজীবনের শুরু থেকে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে নিজেকে উন্নত করা ও নিজেকে জানার প্রচেষ্টা তার পরিবার থেকেই শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। এটাই হচ্ছে মানুষের মূল চালিকাশক্তি। যাদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস ভালো হয়, তারা পরবর্তী জীবনে উন্নতির শিখরে উঠতে পারে। তাদের জীবন হয় সফল। অন্য দিকে যারা এই সময় বিভিন্ন ভয় উৎকণ্ঠা ও অপ্রাপ্তিতে ভোগে, এই অতৃপ্তি তাদের পরবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। অস্থিরতা, অল্পতেই টেনশন করা, অল্পতে রেগে যাওয়া ইত্যাদি নেতিবাচক আচরণের বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে। সুতরাং ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
জীবনে সাফল্য পেতে হলে ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। ইতিবাচক ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হলে অবশ্যই নিজেকে ইতিবাচক গুণের অধিকারী করে তুলতে হবে। ইতিবাচক গুণ ব্যক্তিকে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন করতে শেখায়। তার পড়াশোনা, চাকরি, সামাজিকতা, পারিবারিক অবস্থা সব কিছুই একটি শৃঙ্খল সাফল্যময় জীবনের পথে এগোবে। অন্য দিকে যে ব্যক্তি টেনশন, মানসিক চাপ, অস্থিরতা অর্থাৎ নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বড় হয়, তার দক্ষতা, সৃজনশীলতা, সামাজিকতা, পড়াশোনা, চাকরি যেকোনো ক্ষেত্রেই এই গুণগুলোর যথাযথ বহিঃপ্রকাশ হয় না। মেধা ও মননের বিকাশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর নির্ভর করে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব।