২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বারিতে ফল পাকানোর নিরাপদ প্রযুক্তি 'রাইপিং চেম্বার’ উদ্ভাবন

- ছবি - বাসস

ক্ষতিকর কেমিক্যাল ছাড়াই ইচ্ছে মতো নিরাপদ ও বাণিজ্যিকভাবে ফল পাকানোর জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) একজন গবেষক আধুনিক ‘রাইপিং চেম্বার’ নামের একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।

বারি’র পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি ডিভিশন বা ফলনোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী এ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন।

এর ফলে বিভিন্ন ফল পাকানোর জন্য দেশে যেসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তার যথেচ্ছ ব্যবহার কমে যাবে। অন্যদিকে ফল উৎপাদনকারী চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন উদ্ভাবক।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, দেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন হয়। দেশের বিভিন্ন গাছের উৎপাদিত ফল একসাথে পাকে না। গাছে পর্যায়ক্রমে ফল পাকার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু ফল কাঁচা থাকার কারণে সবগুলো ফল খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করা যায় না। তাই অনেকে এগুলো কাঁচা সংগ্রহ করে বিকল্প পদ্ধতিতে নানা ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল প্রয়োগ করে পাকানোর চেষ্টা করেন। আবার মৌসুমীর প্রথমে কোনো কোনো ফলের ব্যাপক চাহিদার কারণে কিছু অসাধু লোক অপরিপক্ষ ফলগাছ থেকে পেড়ে সেগুলোতেও কেমিক্যাল ব্যবহার করে ভোক্তার কাছে বিক্রি করে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মানবদেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য যে সমস্ত ফল খাওয়া হয়, এসব ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকায় উল্টো বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এসব সমস্যার কথা চিন্তা করেই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে লো কস্ট রাইপিং চেম্বার বা স্বল্প মূল্যে ফল পাকানোর কক্ষ পদ্ধতি।

এ পদ্ধতিতে ফলের মধ্যে সরাসরি কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল প্রয়োগ করা হয় না। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী ইচ্ছেমতো যেকোনো পরিমাণ ফল পাকানো সম্ভব হবে। এতে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবেন চাষিরা। অন্যদিকে ফল রফতানিতেও এ পদ্ধতির ব্যবহার ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকগণও।

গবেষকদের দাবি, ফলের মধ্যে ব্যাপকভাবে কেমিক্যালের ব্যবহাররোধ করতে এ পদ্ধতিটি কৃষক, ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত করার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। পদ্ধতিটি ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

এ পদ্ধতির উদ্ভাবক ড. ফেরদৌস জানান, এটি একটি নিরাপদ ও আধুনিক পদ্ধতি। এর মাধ্যমে পরিপুষ্ট ফলগাছ থেকে পেড়ে প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী পাকানো যাবে। এতে ফলের মধ্যে সরাসরি কোনো কেমিক্যাল স্প্রে করা হয় না বলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। এ পদ্ধতিতে ফল পাকানোর কারণে ফলের পুষ্টিমান ও স্বাদে কোন তারতম্য হয় না।

পদ্ধতিটি সম্পর্কে তিনি জানান, সব ফলেই প্রাকৃতিকভাবে ইথিলিন উৎপন্ন হয়। এই ইথিলিন যখন একটি নির্দিষ্ট অপটিমাম বা পরিমিত অবস্থায় পৌঁছে তখন ফলের পরিপুষ্টতা চলে আসে এবং ফল ধীরে-ধীরে পাকতে শুরু করে। আমরা অনেক সময় গাছ থেকে পরিপুষ্ট অবস্থায় ফল পেড়ে রেখে দেই এবং পরে ধীরে-ধীরে এতে ইথিলিন উৎপন্ন হয় এবং তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পেকে যায় এবং আমরা খেতে পারি।

কিন্তু আমাদের প্রতিদিন ফল প্রয়োজন এবং আমাদের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে ফল খাওয়ানোর দরকার। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ইচ্ছে করলেই আমরা আম, কলা, আনারস বা পেঁপে গাছ থেকে পাকা পেতে পারি না। এক্ষেত্রে আমরা রাইপিং চেম্বারের মাধ্যমে ইচ্ছে করলে একদিনেই ফল পাকাতে পারব এবং চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ করতে পারব। ফল রফতানির ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement