নববী যুগে ঈদ উদযাপন
- আবু সাঈদ
- ১১ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:২৭
ঈদ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মুসলমানরা এই দিনটি দারুণ আনন্দে উদযাপন করে। এর প্রবর্তন ঘটে মদীনায়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদের বছরে দুটি দিন উৎসব করতে দেখেন। জিজ্ঞেস করেন, এই দিনদুটিতে উৎসবের কারণ কী? সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুম জানালেন, জাহেলী যুগে তারা দিনদুটিতে উৎসব করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই আনন্দ উদযাপন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে উৎসবের জন্য এরচেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। একটি হলো, কুরবানীর দিন। অন্যটি হলো, ফিতর (রোজা ভাঙ্গার) দিন। (আবু দাউদ)
তখন থেকেই সাহাবায়ে কেরাম এই দুই দিনে আনন্দ উদযাপন করতেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাতে অংশ নিতেন। ইমাম শাফেয়ি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘কিতাবুল উম্ম’ গ্ৰন্থে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনকে বেশ আয়োজন করে উদযাপন করতেন। ইমাম ওয়াকেদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাবশার বাদশা নাজাসী একবার যুবায়ের ইবনুল আওয়াম রাদিআল্লাহু আনহুকে একটি মূল্যবান বর্শা হাদিয়া দেন। তিনি সেটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাদিয়া দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্শাটি ঈদের সময় নিজের সঙ্গে রাখতেন (সামহুদি প্রণীত ওয়াফাউল ওয়াফা)।
ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন বর্শাটি সঙ্গে নেওয়ার জন্য বলতেন। ঈদগাহে যখন নামাজে দাঁড়াতেন, বর্শাটি (সুতরা হিসেবে) সামনে রাখতেন (বুখারী)।
এভাবে ঈদগাহে বর্শা নেওয়ার রীতি চালু হয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর খোলাফায়ে রাশেদীনও তা সঙ্গে রাখতেন। পরবর্তীতে দীর্ঘকাল পর্যন্ত খলীফাদের মাঝে এই রীতি চালু থাকে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বলেন, হযরত সাআদ কুরাযী রাদিআল্লাহু আনহু নববী যুগে মসজিদে কুবার মুআজ্জিন ছিলেন। হযরত উমর রাদিআল্লাহু আনহু যখন খেলাফতের মসনদে সমাসীন হন, তিনি সাআদ কুরাযী রাদিআল্লাহু আনহুকে মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই দায়িত্ব তার বংশের লোকজনের উপরই ন্যাস্ত থাকে। তিনি হযরত আবু বকর, ওমর ও আলী রাদিআল্লাহু আনহুমের যুগে খলিফার জন্য ঈদগাহে বর্শা নিয়ে যেতেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন সাহাবীদেরকে উত্তম পোষাক পরিধানের জন্য উদ্ধুদ্ধ করতেন। ইমাম হাকেম রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুস্তাদরাক গ্ৰন্থে উল্লেখ করেন, হাসান ইবনে আলী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন আমাদেরকে উত্তম পোষাক পরিধানের জন্য বলতেন। বলতেন উত্তম সুগন্ধি ব্যবহারের জন্য। এবং মোটা পশু জবেহ করার জন্য।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গিয়ে খুতবা দিতেন। ঈদ সংক্রান্ত নানা মাসায়েল বর্ণনা করতেন। এজন্য নারী-পুরুষ সকলেই ঈদগাহে যেতো। ইমাম তিরমিজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত উম্মে আতিয়া রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ধরনের মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিতেন। তবে ঋতুবতী নারীরা ঈদগাহে প্রবেশ করতো না। তারা বাইরে অবস্থান করতো। দুআতে অংশ নিতো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের পর ঈদের খুতবা দিতেন। কিন্তু উমাইয়াদের শাসনামলে এর ব্যতিক্রম রীতি চালু হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত নানা বিরূপ আলোচনার কারণে মানুষজন তাদের খুতবা শুনতে চাইতো না। সেজন্য তারা নামাজের আগে খুতবা দেওয়ার প্রচলন শুরু করে। ইমাম মুসলিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ভাষ্যমতে, মারওয়ান ইবনে হাকাম সর্বপ্রথম এর প্রচলন শুরু করেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঈদের দিন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক বিনোদনও অনুষ্ঠিত হতো। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একবার ঈদের দিন হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার ঘরে এলেন। আমার কাছে দুজন আনসারী মেয়ে ছিলো। তারা দুজন বুআছ যুদ্ধের গান গাইছিলো। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এটা দেখে অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। বললেন, রাসূলের ঘরেই শয়তানের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এলে? তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকর, প্রত্যেক সম্প্রদায়েরই উৎসবের দিন আছে। আজ আমাদের উৎসবের দিন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এক ঈদের দিন দুজন হাবশী ঢাল-তলোয়ারের খেলা প্রদর্শন করছিলো। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে খেলা দেখার আগ্রহ প্রকাশ করি। (কিংবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই প্রস্তাব দিলেন।) তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে দাঁড়ালেন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাঁধের উপর থুতনি রেখে খেলা দেখতে লাগলাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা