বদর যুদ্ধের শিক্ষা
- মুহাম্মাদ মাহদী হাসান
- ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪:৫১, আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৫:০৭
আজ ১৭ই রমজান। ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক বদর দিবস’ হিসেবে অবিহিত করা হয়। এ দিনে সংঘটিত বদর প্রান্তরে যুদ্ধ ছিলো ইসলামের প্রথম সীদ্ধান্তকৃত সামরিক জিহাদ। এ ভাবধারা থেকেই সূচনা হয়েছিলো ইসলাম বিজয়ের।
হিজরি দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান মদিনা থেকে প্রায় ৮০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল আল্লাহর একত্ব ও তার পাঠানো রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী বিশাল সুসজ্জিত বাহিনীর বিপক্ষে বিশ্বাসী ছোট একটি দলের প্রত্যক্ষ সশস্ত্র লড়াই। তাতে মানুষের সব ধারণা নাকচ করে দিয়ে প্রায় উপকরণহীন ছোট দলটিকে জয়ী করেন মহান রাব্বুল আলামিন। সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় বিজয়ী এ কাফেলার এক নতুন অধ্যায়।
মহানবী সা: মদীনায় হিজরত করে যাওয়ার দ্বিতীয় বছরে সশস্ত্র জিহাদের অনুমতি নিয়ে নাজিল হয় কোরআন মজিদের কয়েকটি আয়াত। যেমন সূরা হজের ৩৭ নং আয়াতে বলা হলো- যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো হচ্ছে, তাদেরকে (যুদ্ধের) অনুমতি দেয়া হলো এ জন্য যে, তারা নির্যাতিত হয়েছে। আর আল্লাহ তাদের সাহায্য করতে সক্ষম। তাদেরকে নিজেদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে, তারা বলে আমাদের প্রভু আল্লাহ।
এভাবে সশস্ত্র পন্থায় কাফেরদের প্রতিরোধ করার অনুমতি লাভের পর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রস্তুত হলেন। কুরাইশ কাফেরদের সাথে আল্লাহর নবী ও তার সাথীদের কয়েকটি ছোটোখাট সংঘর্ষের পর প্রথম সরাসরি সশস্ত্র মোকাবেলা হয় মদিনা থেকে বেশ দূরে বদর প্রান্তরে। কিন্তু দুই পক্ষের কোনো দিক দিয়েই সমতা ছিল না। আল্লাহর নবীর সাথে মাত্র ৩১৩ জন মুজাহিদ। তারা প্রায় নিরস্ত্র । অপরপক্ষে আবু জেহেলের নেতৃত্বে রয়েছে এক হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী।
লড়াই শুরুর আগে আল্লাহর নবী দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ, তুমি যদি চাও দুনিয়াতে তোমার ইবাদত করার কেউ না থাকুক, তাহলে এই ক্ষুদ্র দলটিকে নিশ্চিহ্ন হতে দাও। আল্লাহ তা চাননি। আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রায় ছিল বাহ্যিক ও উপকরণগত শক্তির তুচ্ছতা প্রমাণ করা। তাই প্রায় নিরস্ত্র মুষ্টিমেয় মুজাহিদদের কাছে পরাজিত হয় সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী। কুরাইশদের দম্ভ চূর্ণ হলো। তাদের পক্ষে নিহত হলো ৭০ জন। বন্দী হয় আরো ৭০ জন। আর মুসলমানদের মধ্যে শহীদ হন মাত্র ১৪ জন। যুদ্ধের এ ধরনের ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ অভাবনীয়। কিন্তু তা ছিল আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ। তিনি স্বল্পসংখ্যক মানুষকে বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী করে দেখিয়ে দিলেন অবিশ্বাসী লোকদের প্রকৃত দুর্বলতা ও অসহায়তা।
তাই বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ জিহাদ। যুদ্ধবন্ধীদের সাথে আল্লাহর নবী ও মুসলিমরা যে সহমর্মিতা দেখান বিশ্বের ইতিহাসে তার নজির পাওয়া মুশকিল। বদর প্রান্তরে যেমন মক্কার পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা জয়ী হয়েছিলেন, তেমনি একই সময়ে সমকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি পারস্য ও রোমান সাম্র্রাজ্যের মধ্যে চলমান লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিল রোমান শক্তি। অগ্নিপূজারি পারস্য শক্তির বিরুদ্ধে রোমান খ্রিষ্টান শক্তির বিজয়ের খবরও ছিল মুসলমানদের জন্য প্রেরণার বিষয়।
পৌত্তলিকতাসহ বিভিন্ন অসার ভাবধারা মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাতের উন্নত মর্যাদা থেকে নামিয়ে এনেছিল সবচেয়ে নিচু স্তরে। ইসলাম মানবজাতিকে আবার সেই উন্নত মাকামে নেয়ার ঘোষণা দেয়। বদরের প্রান্তর থেকে ইসলামের বিজয় ধারা সূচিত হয়।
তাই প্রতি বছর ১৭ রমজান মুসলিম উম্মাহকে স্মরণ করিয়ে দেয় গৌরবময় বিজয়ের ইতিহাস, নতুনভাবে প্রত্যয় জাগায় খোদায়ী কুদরতের অসীমতার সামনে নিজের সব কামনা বিলীন করে দেয়ার। মুসলিম উন্মাহকে আবারো স্মরণ করিয়ে দেয় এই অন্ধকারচ্ছন্ন ঘুনে ধরা সমাজকে উন্নত মাকামে নিতে হলে প্রয়োজন আল্লাহর নুসরতের। আর আল্লাহর নুসরত পাওয়ার মাপকাঠি হচ্ছে আধ্যাত্মিক শক্তি। যা আমাদের অর্জন করতে হবে।
-লেখক : তরুণ আলেম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা