২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শবে বরাতে কি বিশেষ কোনো আমল আছে?

শবে বরাতে কি বিশেষ কোনো আমল আছে? - প্রতীকী ছবি।

আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাত আমাদের কাছে ‘শবে বরাত’ নামে প্রসিদ্ধ। এ রাতের বিশেষ ফজিলত পবিত্র হাদিস দ্বারা প্রামাণিত। নবী করিম সা: বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধশাবানের রাতে (শবে বরাত) সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/১৭৬)

একাধিক হাদিসে রাতটিকে বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে উদ্ধুব্ধ করা হয়েছে। এক হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিনগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও...।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮)

কিন্তু আমাদের সমাজে এ রাতের ইবাদতকে কেন্দ্র করে কিছু অপ্রমাণিত বিষয়াদিরও প্রচলন রয়েছে। যেমন–শবে বরাতের বিশেষ নামাজ। যে নামাজে নির্দিষ্ট কিছু সূরা ও দোয়াই পড়তে হবে, নির্ধারিত কিছু সূরাই একাধিকবার পড়তে হবে এবং এ রাতের রোজাকে আবশ্যক মনে করা ইত্যাদি। যেগুলোর কোনোটিই সহি হাদিস দ্বারা প্রামাণিত নয়।

শবে বরাতের নামাজ সম্পর্কিত হাদিস
এ রাতের নামাজে নির্দিষ্ট কিছু সূরা ও দোয়াই পড়তে হবে কিংবা নির্ধারিত কিছু সূরাই একাধিকবার পড়তে হবে–এমন কোনও নির্দেশনা হাদিসে নেই; বরং দীর্ঘ কেরাতে নফল আদায়ের কথা হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে। আম্মাজান আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার রাসূল সা: রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে–আমার ধারণা হলো–তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা, তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে–আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি জবাবে বললাম, না, হে আল্লাহর রাসূল, আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন! নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। রাসূল সা: ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধশাবানের রাত (শাবানের ১৪ তারিখের দিনগত রাত)। আল্লাহতায়ালা অর্ধশাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থায়।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৫৫৪) এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে নফল নামাজে দীর্ঘ কিরাত পড়া এবং লম্বা সিজদা করা এ রাতের বিশেষ একটি আমল।

শবে বরাতে রোজা রাখা
শবে বরাতে রোজা রাখার ব্যাপারেও নানা মত চালু আছে আমাদের সমাজে। এদিন রোজা রাখার হুকুম সম্পর্কে কাতার ইউনিভার্সিটির শরিয়াহ অনুষদের প্রধান শায়খ নুরুদ্দীন আল খাদেমী আলজাজিরাকে বলেছেন, এ দিনে রোজা পালন আবশ্যক মনে করা একটি ইখতিলাফপূর্ণ (বিতর্কিত) বিষয়।

তার মতে–শবে বরাতের রোজাকে হয়তো আইয়ামে বীজের অন্তর্ভুক্ত নফল ইবাদত গণ্য করা উচিৎ (আইয়ামে বীজ হচ্ছে–প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা। যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত) অথবা অন্যান্য দিনের রোজার মতো এটিকেও একটি সাধারণ নফল রোজাই মনে করা।

একইসাথে তিনি বলেন, রাসূল সা: রমজানের প্রস্তুতি স্বরূপ শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। সেটির অনুসরণে কেউ শবে বরাতের রোজাকে শাবানের সুন্নাত রোজারও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

মোটকথা আইয়ামে বীজ, সাধারণ দিনের মতো নফল রোজা ও শাবানের নফল রোজা—শবে বরাতে এই তিনটি বিষয় অনুসরণ করে রোজা রাখতে উদ্ধুব্ধ করেন শায়খ নুরুদ্দীন আল খাদেমী। (আলজাজিরা মুবাশির)

শবে বরাতের রোজা রাখার বিয়য়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু হাদিসটি জঈফ (বর্ণনাকারী দুর্বল) হওয়ায় উপরোল্লিখিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন কাতারের এই ইসলামি স্কলার। তবে বেশিরভাগ আলেম হাদিসটিকে আমলযোগ্য মনে করেন। কারণ, হাদিস বিশারদদের মতে–ফজিলতপূর্ণ বিষয়ে জঈফ হাদিস গ্রহণযোগ্য।

হাদিসটি হলো–হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: বলেছেন, ১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিনগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮)

শবে বরাতে ক্ষমা প্রার্থনা
এই রাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করা। কারণ বরকতময় এই রাতে আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে নেমে বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। তাদের গুনাহ মাফ করেন। এই প্রসাথে আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত আগমন করে তখন আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে অবস্থান করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া অন্যদের ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ৮০) আল্লাহ আমাদের সবাইকে ফজিলতপূর্ণ এ রাতকে যথাযথভাবে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করেন। আমিন।


আরো সংবাদ



premium cement
যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের সাথে বসতে চান পুতিন মাদকের টাকার জন্য মাকে হত্যা! আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভারতীয় অর্থনীতি-রাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলবে বিচ্ছেদে খুশি নন সায়রা-রহমান কেউই! তবুও কেন হলো অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের সাথে বর্ণবৈষম্য, আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ মণিপুরে আরো ১০ হাজার জওয়ান পাঠাচ্ছে ভারত সরকার এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি-আমেরিকান কিশোর হামাসের প্রতি 'সহানুভূতিসম্পন্ন' সব সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে ৬৫.৯ ভাগ মানুষ সোনার দেশ- এটিই হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ জুলাই বিপ্লবে আহত বাবুকে নেয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড সৈন্যের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে রাশিয়া!

সকল