২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বড়দিনে যিশুর জন্মস্থান বেথেলহেমে নেই কোনো আনন্দ, নেই উদযাপন

- ছবি : বিবিসি

বেথেলহেমের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে বড়দিনের উৎসব বাতিল করা হয়েছে। যেখানে হাজার হাজার পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীদের শহরের প্রাণকেন্দ্র ম্যাঞ্জার স্কয়ারে দেখা যেতো, তাদের কেউই এখন নেই।

পশ্চিম-তীরের বেথেলহেমের বাসিন্দা ম্যাডেলি বিবিসির সংবাদদাতাকে বলেন, ‘সুখ, আনন্দ, বাচ্চাদের হৈচৈ, সান্তা কোনো কিছুই শহরটিতে নেই। নেই বড়দিনের কোনো আমেজ।’

বড়দিনের বিখ্যাত ক্রিসমাস ট্রি, সাধারণত স্কয়ারের একেবারে মাঝখানে থাকে, এখন সেটাও নেই। নেই কোনো ক্রিসমাসের সমবেত সঙ্গীত বা দোকানের কেনাকাটার ভিড়। গাজার শশুদের প্রতি সম্মান জানাতে সেই স্থানে বড় বড় পাথর আর কাঁটাতারের বেড়ার মাঝে শিশু যিশুর ছবি সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

অস্বাভাবিক ফাঁকা নেটিভিটি চার্চের ফাদার ঈসা থালডিজিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘শহরটিকে এখন মৃতপুরীর মতো মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে এই গির্জায় যাজক ছিলাম। আমি বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছি, এমন পরিবেশ আমি কখনো দেখিনি। এমনকি মহামারী কোভিড-১৯ চলাকালীনও এমন পরিবেশ ছিলে না।’

ফাদার থালডিজিয়া জানান, ‘বড়দিন উদযাপন করা কঠিন, কারণ গাজায় আমাদের ভাই-বোন আছে। কিন্তু প্রার্থনায় আমরা এক হয়েছি এটা ভালো।’

জাওদাত মিখাইল বেথেলহেমে থাকেন, কিন্তু তার পরিবার উত্তর গাজায় আটকে পড়েছে।

ইসরাইলি বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত এলাকা গাজার উত্তরে শেজাইয়া শহরের হলি ফ্যামিলি চার্চে তার মা, বাবা, ভাই এবং অন্যান্য ডজন-খানেক আত্মীয় আশ্রয় নিয়েছে।

যখন এই প্রতিবেদক এবং জাওদাত কথা বলছিলেন, তখন তার বাবা হান্না মিখাইলের ফোন আসে। ফোনের নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল ছিল কিন্তু তারপরও সে বাবাকে একঝলক দেখার জন্য বসে ছিল।

হান্না তাকে জানান, তাদের পরিবারের সদস্যরা ঠিক আছে।

তিনি বলেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় চেষ্টার পর তিনি খাবার খোঁজার জন্য অবশেষে চার্চ থেকে বেরোতে পেরেছেন।

তিনি আরো জানান, চার্চের আশপাশে সব শুধু ধ্বংসস্তূপ। সব দোকান পুড়ে গেছে। সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে এবং এখানে কোনো পানি নেই।

জাওদাতের বাবা বলেন, ‘খাবার খুবই অল্প আছে, যাতে তোমার পেট ভরবে না কিন্তু তোমাকে জীবিত রাখবে।’

গত বছর ক্রিসমাস কতটা আনন্দের ছিল তা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এদিন আমরা হয়তবা চার্চে আলোকসজ্জা করতাম। ক্যারোলস থাকতো কিন্তু এখন আমাদের একমাত্র প্রার্থনা এখান থেকে জীবিত বের হওয়া।’

হান্না জানান, পরিবার ইতোমধ্যেই নিদারুণ দুর্দশা ভোগ করেছে।

এক সপ্তাহ আগে, জাওদাতের দাদী নাহিদা খলিল অ্যান্তন যিনি গাজায় ওই চার্চে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনি বাথরুমে যাওয়ার সময় দু’বার পেটে গুলিবিদ্ধ হন। তার খালা সামার কামাল অ্যান্তন তাকে সাহায্যের জন্য ছুটে গেলে তিনিও মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।

তারপরের ঘটনাবলী এবং জানাজার ছবি জাওদাত এই প্রতিবেদককে দেখান।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তার পরিবার হলি ফ্যামিলি চার্চে আশ্রয় নিয়েছিল। অথচ এখন তারা সেখানে তাদের প্রিয়জনদের সমাহিত করছে।

এই মৃত্যুর জন্য ইসরাইলি স্নাইপারদের তারা দায়ী করেছে।

তবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, তারা এই অভিযোগের তদন্ত করে দেখবে।

অশ্রুসিক্ত হান্না জানায়, তার চোখের সামনে পরিবারের দুই সদস্য মারা গেছে। এটা একটা আঘাত, যা সহ্য করা যায় না।

তিনি প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় কান্না এবং বেশি কথা বলতে না পারার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি খুবই দু:খিত, এটা খুব কঠিন, আমরা অনেক সহ্য করেছি।’

আমরা কথা বলার সময় একটা বিস্ফারণের শব্দ শোনা যায়, তারপর জাওদাত যখন অনীহা সত্ত্বেও তার বাবাকে বিদায় জানাচ্ছিলেন, সেই সময় আরেকটা বিস্ফোরণ শোনা যায়।

সকালে বেথেলেহেমে চার্চে যখন ঘণ্টা বাজছিল, স্থানীয় কিছু লোক যিশুর চারপাশে ধ্বংসস্তূপের সামনে জড়ো হয়।

স্পিকারে তখন আরবি গান বাজছিল, একজন আরেকজনকে সালাম দিচ্ছিল, শিশুদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছিল।

মাঝখানে কয়েক ডজন লোক একটা বড় ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে তা উপরে-নিচে উড়াচ্ছিল।

জেরুসালেমের লাতিন ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পিয়ারবাতিস্তা পিজ্জাবালা বেথেলহেমে তার ঐতিহ্যবাহী পরিচয়ের কারণে। তিনি ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো চেকের স্কার্ফ পরিহিত ছিলেন।

নেটিভিটি চার্চে ঢোকার আগে তিনি বলেন, এটা খুব দুঃখের একটা বড়দিন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ একটা যুদ্ধের মধ্যে আছি। আমাদের ধ্যান-ধারণা শুধুমাত্র গাজার দিকে, গাজায় থাকা আমাদের জনগণের দিকে। দুই মিলিয়ন কষ্ট করছে।’

পিয়ারবাতিস্তা আরো বলেন, ‘একটা যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়। আমাদের এই শত্রুতা বন্ধ করতে হবে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে কারণ সহিংসতা শুধু্‌ই সহিংসতা ডেকে আনে।’

ম্যাঞ্জার স্কয়ারের কিছু দূরে স্টার স্ট্রিটের দুই সাইডেই স্যুভেনিরের দোকানগুলো আছে কিন্তু নেই চিরচেনা সেই কেনা-বেচা, দরকষাকষির দৃশ্য।

ফিলিস্তিনের বিখ্যাত সেলাই করা স্কার্ফগুলো, কুশন কভার এবং প্রত্নবস্তুগুলো দোকানের বাইরে বিক্রেতাদের স্পর্শ ছাড়াই ঝুলে আছে। এই সময় সাধারণত বাজারের জন্য উচ্চ মৌসুম, কিন্তু এই বছর নেই।

ম্যাঞ্জার স্কয়ারের নিকটবর্তী একটি দোকানের মালিক আবুদ সুবাহ বলেন, গাজায় আমাদের অসংখ্য লোক মারা গেছে এমন পরিস্থিতিতে আমরা বড়দিন উদযাপন করতে পারি না।

তিনি প্রতিবেদককে জানান, নিজের ব্যবসা ও এই শহরকে এমন রূপে দেখা খুব দুঃখের।

আবুদ বলেন, এ বছর ক্রিসমাস উদযাপন করা ভুল হবে। আমরা খুশি হতে পারি না কারণ আমরা পৃথিবীর অপর প্রান্তে বাস করি না। আমরা এখনো প্যালেস্টাইনে আছি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সকলেই ন্যায় বিচার পাবেন : মোবারক হোসেন জয়সাওয়ালের রেকর্ড ছক্কার দিনে পার্থে দাপট ভারতের তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি ‘বাবা বলে ডাকতে পারি না’ বিএনপি নির্বাচন চায় দেশকে রক্ষার জন্য : মির্জা ফখরুল জাতীয় ঐক্যের মধ্যদিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে : গোলাম পরওয়ার সাঙ্গু নদীতে নৌকা বাইচের মাধ্যমে শুরু হলো বান্দরবানে সপ্তাহব্যাপী ক্রীড়া মেলা ফার্মগেটে ৭ তলা ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ইউক্রেনের ডনেটস্ক অঞ্চলের গ্রামগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া পর্ণো তারকাকে অর্থ দেয়ার মামলা খারিজের আবেদনের অনুমতি পেলেন ট্রাম্প দোহারে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর নামে ছাত্রলীগ নেতার মামলা

সকল