মা-বাবার হক সম্পর্কে ৬ উপদেশ
- মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম
- ০২ এপ্রিল ২০২১, ০৭:০৫
আমরা একটু বড় হয়ে, যৌবনে পা রাখি; তখন মা-বাবাকে ভুলে যাই। নানা ধরনের কষ্ট দিয়ে থাকি। অনেক সময় বৃদ্ধাশ্রমে পর্যন্তও দিয়ে থাকি। এমন অনেক ঘটনা আছে যে, মাতা-পিতাকে বৃদ্ধ বয়সে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
যারা মাতা-পিতার প্রতি অমনোযোগী, তাদের সাথে কড়া ভাষায় কথা বলে, মাতা-পিতার কথার আওয়াজের ওপর তাদের কথার আওয়াজ থাকে, তাদের জন্য আমার আজকের এই লেখা। আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতার হক সম্পর্কে তাদের সন্তানাদির উদ্দেশে কুরআনি ভাষায় ছয়টি নসিহত করেছেন।
এক. পিতা-মাতার সাথে সদা সদ্ব্যবহার করো (সূরা বনি ইসরাইল)। যে মা ১০ মাস ১০ দিন নিজের গর্ভে ধারণ করে আমাদের এই পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, একদম ছোট থেকে নিয়ে যে অবস্থায় আছি, এই অবস্থায় নিয়ে আসার পেছনে অনেক পরিশ্রম করেছেন।
অবুঝ থাকা অবস্থায় বিছানায় প্রস্রাব করে দিতাম। কিন্তু মা সানন্দের সাথে তা পরিষ্কার করতেন। প্রচণ্ড শীতের সময় যখন প্রস্রাব করে দিতাম, মা ওই প্রস্রাব করা জায়গায় নিজে শুয়ে আমাকে-আপনাকে শুকনো জায়গায় শোয়াতেন। এমন মাতা-পিতার প্রতি সব সময় সর্বাবস্থায় সদ্ব্যবহার করতে বলেছেন। ভালো ব্যবহার করতে বলেছেন।
দুই. তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না (সূরা বনি ইসরাইল)। যখন তারা বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন তারা ছোট শিশুর মতো আচরণ করতে থাকে। বিভিন্ন ধরনের বায়না করে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করে। তখন আমরা তাদের এই দাবি-দাওয়া শুনে, তাদের এই বায়না শুনে উফ শব্দটি বলব না। যাতে তারা উফ শব্দটি শুনে তাদের হৃদয় ব্যথিত না হয়।
কথিত আছে, একবার এক বৃদ্ধ পিতা তার সন্তানের কাছে শিশুদের মতো বায়না করত। সন্তানটি তার পিতার শিশুসুলভ আচরণে বিরক্ত হয়ে যায়। সেটি বৃদ্ধ পিতা উপলব্ধি করতে পারে। সে একবার তার সন্তানকে নিয়ে একটি বলসহ পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায়। বৃদ্ধ লোকটি বলটিকে নিচে নিক্ষেপ করল ছেলেটি গিয়ে বলটিকে নিয়ে আসল। বৃদ্ধ লোকটি বলটি পুনরায় ছুড়ে মারল পাহাড়ের নিচে। সন্তানটি পুনরায় বলটি কুড়িয়ে নিয়ে এলো। এভাবে পুনরায় করতে থাকায় সন্তানটি অগ্নিশর্মা হয়ে যায়। বৃদ্ধ লোকটি ত্রুটি উপলব্ধি করতে পেরে হেসে বলল, যখন তুমি ছোট ছিলে, তখন তুমি এ পাহাড়ের চূড়ায় থেকে বল নিক্ষেপ করতে; আর আমি প্রতিবারের মতো বলটি কুড়িয়ে নিয়ে আসতাম। কিন্তু আমি কখনো বিরক্ত হইনি। (এই গল্পটি আরিফ আজাদ ভাইয়ের লেখিত বইয়ে (মা মা মা ও বাবা) পড়েছি।
তিন. তাদেরকে ধমক দিও না (সূরা বনি ইসরাইল)! যেখানে উফ শব্দটি বলা পর্যন্ত নিষেধ সেখানে ধমক দেয়া তো দূরের কথা। কিছু হতভাগা সন্তান আছে, যারা মাতা-পিতাকে কথায় কথায় ধমক দেয়। পিতা-মাতার প্রতি অসন্তুষ্টি দেখায়। আল্লাহ তায়ালা এটি জানেন। তাই উফ শব্দ বলা বারণ করা সত্ত্বেও পুনরায় ধমক দিয়ে কথা বলার জন্য নিষেধ করেছেন।
কথিত আছে, এক সন্তান তার পিতাকে মারতে মারতে অনেক অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। এরপর লোকটি তার সন্তানকে বলল, তুমি থামো! কেননা আমিও আমার পিতাকে মারতে মারতে এতটুকু পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলাম। আমরা আমাদের মাতা-পিতাকে কখনো ধমক দিয়ে কথা বলব না। আমাদের স্বরকে তাদের স্বরের নিচে রাখব।
চার. এবং বলো তাদেরকে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা (সূরা বানি ইসরাইল)। তাদের সাথে নম্র আচরণ করো। তাদের সামনে কখনো নিজেকে কঠোর করিও না। কেননা তোমার ওপর তোমার পিতা-মাতার সন্তুষ্টি তো আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যদি তোমার ওপর তোমার পিতা-মাতা নারাজ থাকে, তাহলে আল্লাহ তায়ালাও তোমার ওপর নারাজ থাকবে।
পাঁচ. তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও (সূরা বানি ইসরাইল)! মাতা-পিতার সামনে নিজে এমনভাবে উত্থাপন করো, যেন তুমি তাদের কাছে দুর্বল। তাদের কথার ওপর কথা বলার সামর্থ্যটুকু নেই।
ছয়. বলো, হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন (সূরা বনি ইসরাইল)। এটি মাতা-পিতার জন্য দোয়া করতে বলা হয়েছে। কেননা, তারা শৈশবে আমাদের জন্য খুব কষ্ট করেছেন। আমরা তাদের বিন্দুমাত্র ঋণ পরিশোধ করতে পারব না। কিন্তু আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে উভয়ের জন্য দোয়া করতে পারব। তাদের উভয়ের জন্য কল্যাণ কামনা করতে পারব।
হজরত আবদুল্লাহ রা: বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে আমি প্রশ্ন করলাম, সবচেয়ে উত্তম আমল কী? রাসূল সা: বলেন, যথাসময়ে নামাজ আদায় করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কী? রাসূল সা: বললেন, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম অতঃপর কী? রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা (সহিহ বুখারি : ৫৯৮০)।
তাই আমরা মাতা-পিতার সাথে সবসময়ই সদ্ব্যবহার করব। বরং এটি একটি উত্তম আমলও। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা