ক্ষণস্থায়ী জীবনের উদ্দেশ্য
- মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:৩৬
যদি কোনো ছাত্রকে প্রশ্ন করেন, জানতে চান- তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কী? উত্তরে সে হয়তো বলবে- ডাক্তার হওয়া, প্রকৌশলী হওয়া বা আইনজীবী হওয়া ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে হতে পারে, যার মধ্যে সে তার জ্ঞাতসারে সর্বোচ্চ সফলতা প্রাপ্তির স্বপ্ন খুঁজে ফেরে।
শিক্ষা সমাপনী কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কি? সে উত্তর দেবে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, জনসেবক হওয়া। কিন্তু মুমিন-মুসলিমদের মধ্যে কেউই এরূপ উচিৎ জবাব দেবে না, যে “আমার জীবনের উদ্দেশ্য সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং মৃত্যুর পর পরিণামে তার অসীম দয়ায় জান্নাত লাভ করা এবং অবর্ননীয় মহাকঠিন শাস্তির স্থান জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়া।”
অথচ আখেরাতের দৃষ্টিকোন থেকে একজন মানুষের জন্য তার মূল উদ্দেশ্যে কী নির্ধারণ করা উচিৎ ছিল? এবং সর্বোচ্চ সফলতা প্রাপ্তি কোথায় নিহিত আছে। তা মহান আল্লাহ পাক সুস্পষ্ট করেছেন।
কারণ, সাধারণত সকলের ধ্যান-ধারণা ক্রিয়াকলাপ চিন্তা-ভাবনা সবকিছু অস্থায়ী পৃথিবীর অত্যন্ত স্বল্পকালীন আয়ুর ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়।পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের ধ্যান-ধারণারভিত্তিতে পরিচালিত জীবনের সংখ্যা অতি নগণ্য।যার প্রমাণ জীবনের উদ্দেশ্য জাগতিক ভিত্তিক। পরলৌকিক ভিত্তিক নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমের প্রত্যেকটি কার্যকলাপ, ধ্যান-ধারণা হওয়া উচিত চিরস্থায়ী জীবনকে সামনে রেখে। সে ক্ষেত্রে ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ, অসৎ কাজগুলি থেকে সরে থাকা বাঞ্ছনীয়, অথচ সে অবস্থান কতো দূরে? কিংবা বহু দূরে।
পক্ষান্তরে, সে যদি আগ্রহী ও আকৃষ্ট হতো আল্লাহতা’য়ালা ও তার রাসূলের (স.) আদেশকৃত বা সৎকাজগুলোর প্রতি, তাহলে তার জন্য খুব ভালো হতো। কারণ, পরকালমুখী হওয়া বা স্মরণে রাখা মানে আল্লাহতা’য়ালাকে ভয় করা এবং আযাব, গজব ইত্যাদি আল্লাহর নির্দেশই হচ্ছে, তা কুরআনের আলোকে দৃঢ় বিশ্বাস করতে হবে, ফলে এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ মতে আল্লাহকে ভয় করতে হবে, তওবা ও ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহকে ভয় করার মাধ্যমে একজন মানুষ মহান আল্লাহর কছে মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত হতে পারেন মর্মে পবিত্র কুরআনে তিনি ঘোষণা করেছেন “ইন্না আকরা মাকুম ইন্দাল্লাহি আতক্বাকুম” অর্থ্যাৎ আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে হতে সর্বাধিক সম্মানিত সে ব্যক্তি, যিনি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন। সূরা-হুজরাত, আয়াত-১৩।
উপরোক্ত আল্লাহর আদেশ ও ঘোষণার ব্যাপারে প্রত্যেক মুমিন মুসলিমের সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। যে পন্থা অবলম্বন করলে আল্লাহর ভীতি ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে সে পথে চলা। সত্যিকার মুমিন হওয়ার পূর্বশর্ত হলো সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ভীরু হওয়া। যার প্রমাণ কুরআনের শুরুতেই বিদ্যমান। যথা : আল্লাহ বলেছেন ‘জালিকাল কিতাবুল ‘হুদাল্লিল মুত্তাকিন” অর্থাৎ এ গ্রন্থে কোনো সন্দেহ বা ভ্রান্তি নেই। এটি সঠিক পথপ্রদর্শক আল্লাহ ভীরুদের জন্য। লক্ষ্য করুন, বলা হয়নি সঠিক পথপ্রদর্শক মুমিন-মুসলিমদের জন্য। কারণ আল্লাহ ভীরুরা সঠিক পথ পাওয়ার পর হয়ে যাবেন সত্যিকার মুমিন ও সত্যিকার মুসলিম। একটু চিন্তা করে দেখুন কেউ যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে ভয় করে, ভয় করে তার আযাব গজবকে, উদাহরণ স্বরূপ কোভিড-১৯, যা আল্লাহর গজব ও আযাব, যা অচল করে দিয়েছে সারা বিশ্ব বিশ্ববাসীকে, তারাই হলো সত্যিকার সফল মানুষ এবং ইনশাআল্লাহ তারাই জান্নাতবাসী, কারণ কোনো অবস্থাতেই তারা আল্লাহ ও তার রসূলের (স.) দেয়া বিধান লঙ্ঘন করবেন না।
বিশ্ব কাঁপছে থর থর করে, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি, চারদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন অনিশ্চিত এ আযাব গজবের অবসান কবে হবে? একমাত্র আযাব গজবের স্রাষ্টাই জানেন; অন্য কেউ নয়। এ আযাব গজব শুধু স্বাস্থ্য খাতেই হুমকি নয় এটা বিশ্ব অর্থনীতির ব্যাপারে অভাবনীয় বা অচিন্তনীয় হুমকি।
কর্ম হারানোর আশঙ্কায় কোটি কোটি লোক। তারা অভাব অনটনে জর্জরিত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এক অনভিপ্রেত ভয়াবহ পরিস্থিতি বিশ্ব ও বিশ্ববাসীকে গ্রাস করেছে এবং করেছে তাদেরকে দিশেহারা, মৃত্যুমুখে ঢলে পড়েছে অসংখ্য অগণিত প্রাণ। তারা স্থান পাচ্ছে গণকবরে অথবা অগ্নিদাহে জ্বালিয়ে ফেলা হয় একসাথে অনেক মানবদেহ। কী মর্মান্তিক ও বীভৎস দৃশ্য!
হে সৃষ্টিকর্তা! আমরা আমাদের সীমাহীন সীমা লঙ্ঘন দ্বারা তোমার কতখানি রোষানলে নিপতিত হলে আমাদেরকে এহেন অভূতপূর্ব আযাব গজবের শিকারে পরিণত করলে।করোনায় মৃত্যুর পর জানাজায় বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় না বরং পরিলক্ষিত হয় শুধু মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনকে। মৃতের জানাজা হয় অল্পসংখ্যক উপস্থিতির মধ্যে, কবরস্থ হয় হয়তোবা জনকল্যাণে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বা পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এই করুণ ও নিদারুণ অবস্থা সত্যিকার বর্ণনাতীত।
হে আল্লাহ! বিশ্ববাসীকে এ শিক্ষা দানের জন্য তুমি আযাব গজব প্রেরণ করেছ, তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছো অর্থ্যাৎ তারা যেন তোমার সীমাহীন ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ বুঝতে পারে। এ শাস্তির ফলে অসৎ বা ভ্রান্ত পথ পরিহার করে সৎ ও সঠিক পথে প্রত্যাবর্তন করে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠিত করে, যা বর্তমানে অসহনীয়, অশান্তি, অরাজকতায় ভরপুর। কারণ অত্যাচার, অবিচার বা ব্যভিচার দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি আগ্রাসন এক কথায় সকল পাপাচার সীমা ছাড়িয়ে এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদের সম্পদের প্রাচুর্য আছে কিন্তু স্বস্তি, শান্তি, মানসিক সুস্থতা, মানবাধিকার, নিরাপত্তা, সৎকর্ম সাধনের পরিবেশ সত্যিকার অর্থে পরিপূর্ণভাবে না হলেও অনেকাংশে বিলীন বা বিলুপ্ত। ফলে বিশ্ববাসীর জীবন যাপন সত্যিকার অর্থে মূল্যহীন এবং সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য অর্থহীন হয়ে পড়েছে তাদের দ্বারা ।
সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তার প্রদত্ত বিধান পুরোপুরি মেনে সর্বক্ষণএকমাত্র তারই দাসত্ব আনুগত্য করার জন্য, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। কাজেই আমরা বিশ্ববাসীরা স্রষ্টার এই উদ্দেশ্য কতটুকু সাধন করছি? উত্তর আসবে নগণ্য বা যৎসামান্য। যদি তা-ই হয় তাহলে কেন অবাধ্য বিশ্ববাসীরা তাদের সৃষ্টিকর্তার রোষানলে পড়বে না? কোনো নিয়োগকর্তা অবাধ্য কর্মচারীকে কি শাস্তি বা চাকরিচ্যুত ব্যবস্থা করবে না? নিশ্চয় করবে।
আমরা আল্লাহর গোলাম বা কৃতদাস। আমরা যদি তার অবাধ্য হই বা অনুগত না হইবা তার উদ্দেশ্য সাধন না করি তাহলে আমরা অপরাধী যথাযথ শাস্তি হতে কি নিষ্কৃতি পাবো? নিশ্চয়ই নয়। শাস্তি পেতে হবে, লাঞ্ছিত হবে হবে ইহজগতে এবং চিরস্থায়ী জীবনে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবো।
মূলকথায় আসি, আল্লাহ তা’য়ালাকে যথাযথ ভয় করতে হবে, ভয়ের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়াতে হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার অবিরাম চেষ্টা করেযেতে হবে। আল্লাহভীতির ফলে আমাদের ঈমান যত বাড়তে থাকবে আমরা ততই আল্লাহর নিকট সম্মানিত হতে থাকবো। ইহা কি অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ সুসংবাদ নয়। স্রষ্টার কাছে সম্মান লাভমহাসৌভাগ্যের বিষয় নয় কি? নিশ্চয় মহাসৌভাগ্যের বিষয়। তাছাড়া আল্লাহর ভীতির পরিমান যতই বাড়তে থাকবে ততই ঈমানের দৃঢ়তা ও ইসলামের পূর্ণতা আমাদের দ্বারা সাধিত হতে থাকবে। ফলে আমাদের দ্বারা পালন করা সহজ হবে আল্লাহর আদেশ । আল্লাহ বলেছেন “ইয়া আইয়ু হাল্লা জিনা আমানু আমিনু বিল্লাহ ওয়া রাসূলিই“ সূরা –নিসা, আয়াত-১৩৬।
এখানে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন মুমিনগনকে ঈমানের পরিপূর্ণতা অর্জন করার জন্য, অপরদিকে আল্লাহ আদেশ করেছেন “ইয়া আইয়ু হাল্লা জিনা আমানু উদখুলু ফিচ্ছলমী কাফ্ফাহ”। হে মুমিনরা তোমরা প্রবেশ করো ইসলামের বিধান পালনের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করে (আংশিকভাবে নয়) সূরা-বাকারা, আয়াত-২০৮।
উপরোক্তআল্লাহর বাণী দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রামাণিত হলো যে, সরাসরি জান্নাতবাসী হতে হলে প্রত্যেক মুমিন মুসলিমকে যথাযথভাবেই হতে হবে পরিপূর্ণ মুত্তাকিন, পরিপূর্ণ মুমিন, পরিপূর্ণ মুসলিম, যথাসাধ্য সম্ভব আন্তরিক প্রচেষ্টার সাধনার মাধ্যমে।
আমরা বিশ্ববাসীরা অস্থায়ী পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনের সুখ-শান্তি ভোগ বিলাসিতা, সম্মান ও খ্যাতি ভোগ, প্রভাব প্রতিপত্তি, সম্পদ বা জ্ঞান আহরণ, নেতৃত্ব কর্তৃত্ব ইত্যাদির জন্য উদয়াস্ত কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত থাকি। উদভ্রান্তের মতো আমরা ছুটে চলছি, সময় নেই আল্লাহকে স্মরণ বা দাসত্ব করার বা বিশ্রাম নেয়ার এককথায় আরাম হারাম করে আহার নিদ্রা বিশ্রাম ত্যাগ করে অবিরাম ছুটছে বিভিন্ন শ্রেণীর শীর্ষস্থান বা অন্যতম শীর্ষস্থানসমূহ অধিকার করার জন্য যথা রাজনীতি, ব্যবসা-বানিজ্য, খ্যাতি অর্জন, বিশ্ববরেন্য, দেশবরেন্য, আঞ্চলিক বরেন্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে সংগত কারণে, প্রশ্ন উঠে আমাদের এহেন চিন্তাধারা কর্মকাণ্ড ন্যায় অন্যায় কর্তা আমাদেরকে কয়েক ফোটা নাপাক পানি থেকে অত্যন্ত সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টির সেরা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন যখন আমরা ছিলাম সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন, তাহলে সেই উদ্দেশ্য অর্থাৎ আল্লাহর সর্বক্ষনিক দাসত্ব ও অনুগত হতে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে এই ধোকাবাজ পৃথিবীর মরীচিকার মোহে নেশাগ্রস্ত হয়ে আলোচ্য উপায়ে জীবনের মহামূল্যবান সময়গুলো কাটিয়ে দিচ্ছি এটা কি আমাদের বুদ্ধিমত্তা বা বোকামির পরিচয় নয়? তা আপনার সুবিবেচনার উপর ছেড়ে দিলাম ঊর্ধ্বগতিতে সচল পৃথিবীকে আজ কে অচল করে দিলেন, উদভ্রান্তের মতো ছোটা বিশ্ববাসীকে কে আজ ঘরবন্দী করল, কে মানুষকে মানুষের জন্য হিংস্র প্রাণীর চেয়েও ভয়াবহ করলেন?
আমাদের এ প্রশ্নগুলো গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার কারণ এ কাজগুলো একমাত্র কল্যাণকামী স্রষ্টারই কাজ আমাদের কল্যাণের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রত্যকের জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর এ অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত কোভিড-১৯। তিনি সৃষ্টি করেছেন উদাহরণ স্বরূপ জাগতিক নিয়মে একজন অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয় যথা জেল জরিমানা বা মৃত্যুদণ্ড। জেল জরিমানার পেছনে উদ্দেশ্য হলো আলোচ্য ব্যক্তির কল্যাণ সাধন বা সংশোধন।
সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট অপরাধ থেকে যেন সকল মানুষ বিরত থাকে যাতে করে কাউকে এ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে না হয় । দেখুন, যে কথাটি আল্লাহ কুরআনেও উল্লেখ করেছেন এবং আমাদের মধ্যে বহুল আলোচিত ও প্রচলিত যথা : যেমন কর্ম, তেমন ফল। ভালো কাজ ভালো, ফল আর মন্দ কাজ মন্দ ফল। এ ব্যাপারে একজন কবি বলেছেন যে যেমন কর্ম করে সে তেমন ফল পায়। যে চাষা আলস্য ভয়ে বীজ না বপন করে, শস্য পাবে সে কোথায়। যদি তব শক্তি থাকে হস্তে দেখিনি যাকে হাত ধরে তুলে নাও তারে, তা না হলে তুমি জবে ভূতলে পতিত হবে কে তখন তুলিবে তোমায়।
লক্ষ্য করুন, কত চমৎকার বাণী! হ্যাঁ যেমন কর্ম তেমন কর্মের ইঙ্গিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী আদেশ করেছেন বিশ্ববাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে যিনি আকাশে আছেন, তিনি তোমার প্রতি সদয় হবেন। কত বড় সুসংবাদ যেমন কর্ম তেমন ফলের ব্যাপারে তিনি আরো বলেছেন যে দয়া করবে না সে দয়াপ্রাপ্তও হবে না এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যায় কোরআন হাদিস থেকে, জ্ঞানী লোকের বাণী থেকে, আর আমরা চার দিকে তাকালে আমরা প্রচুর উদাহরণ দেখতে পাই যে, অসৎ অর্জন বা দুর্নীতির দায়ে অনেক লোক শাস্তি প্রাপ্ত লাঞ্ছিত সম্পদহারা বা বঞ্চিত কিন্তু তা না আমরা দৃষ্টান্ত হিসাবে গ্রহণ করি ধ্রুব সত্য কথাটি যেমন কর্ম, তেমন ফল আজকের দিনে সর্বশেষ নবীর যুগে যিনি প্রকৃত মুত্তাকিন মুমিন মুসলিম এক কথায় সৎ কর্মশীল (সালেহীন) হয়ে মৃত্যুবরন করবে। তার জন্য ইনশা-আল্লাহ চিরস্থায়ী জান্নাতবাস, ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশ যা চাওয়া তা পাওয়া, আল্লাহর মেহমান হিসেবে পক্ষান্তরে যে মুমিন মুসলিম না হয়ে অর্থাৎ আল্লাহর ও তাঁর রাসূলকে (স.) অবিশ্বাস করে অথবা নিষিদ্ধ কাজের মাঝে ডুবে থেকে মৃত্যুবরণ করলো, আল্লাহর ঘোষণা মতে সে হবে অবর্ননীয় কঠিন শাস্তিময় জাহান্নামের অধিবাসী চিরকালের জন্য ঐ একই কথা যেমন কর্ম তেমন ফল সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতা এবং তাঁর ঘোষণা কঠিন শাস্তি চিরস্থায়ী জীবনের।
হে অবাধ্য মানবজাতি তোমরা ভয় কর সেই অগ্নিকুণ্ডকে যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। এবং তা নির্ধারিত আছে অবাধ্য বা কাফিরদের জন্য সূরা- বাকারা, আয়াত-২৪।
প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা ধ্রুব সত্য কথাটি আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে অস্থায়ী পৃথিবীতে ক্ষনস্থায়ী জীবন ধারন করে চিরস্থায়ী জগতের চিরস্থায়ী বা অনন্ত জীবনকে আমরা যেন ভুলে না যাই। রাসূলের (সা.) বাণী পার্থিব জীবন কাফেরদের জন্য জান্নাত পক্ষান্তরে মুমিনদের জন্য জেলখানা অর্থ্যৎ কাফেরদের অবাধ বিচরণে শতভাগ স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতা। পক্ষান্তরে মুমিনগণের জীবন, ধর্মীয় বিধানে আবর্তিত ও সীমিত যেমনি জেলখানায় কয়েদিদের জীবন নির্ধারিত পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ ও স্বাধীনতাহীন। জেলখানায় কয়েদিরা সুখশান্তির বা ভোগবিলাসের আশা করে না তেমনি করে ঈমানদাররাও এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে ভোগবিলাস সুখশান্তি বড় একটা ধারণা বা আশাও করে না। তাদের মৌলিক প্রয়োজনটুকু মিটে গেলেই তারা সন্তুষ্ট। তাদের চলা ফেরা উঠা বসায় কাজে কর্মে তাদের জ্ঞান-মন একমাত্র আল্লাহর ও তার সন্তুষ্টির প্রতি। কী শারীরিক, কী মানসিক প্রচণ্ড অভাব। কোনো জ্ঞানীলোক ক্ষণস্থায়ী জীবানের ভোগ বিলাস ও স্বেচ্ছাচারিতার জীবন-যাপনের বিনিময়ে চিরস্থায়ী জীবনে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভোগ করার পক্ষে কিছুতেই মত দেবেন না বা সিদ্ধান্ত নিবেন না। যেমন কোনো জ্ঞানী লোক তার পরিবার পরিজনকে নিয়ে বাসস্থানের অশান্তি বা দুর্ভোগের বিনিময়ে ট্রেন স্টেশনের ভোগবিলাস আরাম আয়েশ স্বেচ্ছাচারিতা জীবনকে প্রধান্য কিছুতেই দিবেন না। কাজেই, আসুন আমরা ক্ষণস্থায়ী জীবনের সীমাহীন আশা আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করে সীমিত আশা আকাক্ষার মাধ্যমে সর্বশেষ এবং একমাত্র ধর্ম ইসলাম যথাযথভাবে পালন করে আল্লাহর ঘোষণা মতে চিরশান্তির নিবাস জান্নাতবাসী হওয়ার সুযোগ লাভ করি, ইনশা-আল্লাহ এবং মুক্তি লাভ করি অকলপনীয় মহা কঠিন শাস্তির স্থল জাহান্নাম হতে, যা থেকে সর্বদা আমাদেরকে আল্লাহর আশ্রয় পাওয়ার প্রার্থনা করতে থাকতেই হবে।
প্রসঙ্গক্রমে সূরা- আছর (সূরা নং-১০৩) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সূরাটি অতি ছোট আয়াত সংখ্যা মাত্র তিনটি কিন্তু অর্থ ও বিষয়াবলীর দিক থেকে অসাধারণ ব্যাপক।
বাংলা অর্থ
১ নং আয়াত; শপথ সময়ের
২ নং আয়াত; নিশ্চয় (সকল) মানুষ অত্যান্ত ক্ষতিগ্রস্ত অর্থাৎ ব্যর্থ এবং জাহান্নামবাসী
৩ নং আয়াত; কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং যারা পরস্পরকে (কুরআন হাদীস অবলম্বনে) সত্যের উপদেশ দেয় এবং উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের (সকল পরিস্থিতিতে)।
৩ নং আয়াতে শুরুতে উল্লেখিত মুমিনের পরিচয়। ৭টি বিষয় দৃঢ়ভাবে বিশ্ববাসীরাই মুমিন। ৭টি বিষয় যথা (বিশ্বাস করা) ১. আল্লাহকে ২. ফিরিস্তাগণকে ৩. আল্লাহর তরফ থেকে রসূল ও নবীগণের উপর অবতীর্ণ কিতাবসমূহকে ৪. সকল নবী ও রসূলদেরকে ৫. পরকালকে ৬. তাকদিরকে (যার ভালো মন্দ আল্লাহর তরফ থেকে) ৭. মৃত্যুর পর যথাসময়ে হাশরের মাঠে পুনুরুত্থানকে।
৫ নম্বরে পরকাল বলতে জ্ঞাত করে কঠিন হাশরের মাঠে সুদীর্ঘকাল দণ্ডায়মান থাকা অর্থাৎ আল্লাহর দরবারে হিসাব নিকাশ প্রদান, মিজান সৎ ও অসৎ কর্ম ওজনের দাঁড়ি-পাল্লা, ডান-হাত বা বা-হাতে আমলনামা গ্রহন, পুলসিরাত অতিক্রম জান্নাত লাভ, জাহান্নামে প্রবেশ ইত্যাদি।
৩ নং আয়াতে উল্লেখিত আমলে সালেহা বা সৎ কাজসমূহ বলতে যা আল্লাহ ও রসূল (স.) প্রদত্ত আদেশ ও নিষেধ যথাক্রমে বাস্তবায়ন ও বর্জন অবশ্যই করতে হবে।
আলোচ্য সূরা আছরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে জাহান্নামবাসীর সংখ্যাহবে অনেক অনেক বেশি পক্ষান্তরে জান্নাতবাসীর সংখ্যা হবে স্বল্প সংখ্যক যেহেতু এটি গোটা মানব সমাজ থেকে ব্যতিক্রম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
হে আল্লাহ! দয়া করে আপনি আমাদেরকে সূরা আসরের ব্যতিক্রমদলের অন্তর্ভুক্ত করুন।
লেখক :
ম্যানেজিং পার্টনার ও চেয়ারম্যান, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস,
সাবেক প্রেসিডেন্ট, দি ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অফ বাংলাদেশ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা