ওমরাহর প্রস্তুতি শুরু : ভিসা পাওয়া যাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে
- ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া
- ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:০৪, আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৭:৩৭
পবিত্র হজের পর এবার ওমরাহর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ওমরাহ এজেন্সিগুলো তাদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। যাচাই বাছাই শেষে দুয়েক দিনের মধ্যেই বৈধ ওমরাহ এজেন্সির নাম প্রকাশ করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ এজেন্সিগুলো সৌদি ওমরাহ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করবে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এজেন্সিগুলো ওমরাহর ভিসাপ্রক্রিয়া শুরু করার আশা করছে।
তবে ইতোমধ্যে সৌদি আরবে ওমরাহযাত্রী যেতে শুরু করেছেন। গত রোববার হজ-পরবর্তী শুরু হওয়া ওমরাহ মওসুমের প্রথম ওমরাহযাত্রীরা সৌদি আরব পৌঁছান। ওই ওমরাহযাত্রীরা মালয়েশিয়ান। সৌদি সরকার এ বছর থেকে ওমরাহর জন্য আবেদনের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছে। এ জন্য বিশেষ অনলাইন সাইট স্থাপন করা হয়েছে। ওমরাহ ভিসার জন্য দূতাবাস বা কনসুলেটে যাওয়া এবং ভিসা স্ট্যাম্পলিংয়েরও কোনো প্রয়োজন হবে না।
চলতি বছরের বৈধ ওমরাহ লাইসেন্সের তালিকা প্রকাশের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় গত ২৬ আগস্ট এক চিঠিতে এজেন্সিগুলোকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলে। ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী এজেন্সিগুলোর বেশির ভাগই ইতোমধ্যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এখন সেগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সি সূত্র জানিয়েছে, হজের মতো ওমরাহ কার্যক্রমে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ অফিসের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই। ওমরাহর লাইসেন্স নবায়ন করে বৈধ ওমরাহ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ, লাইসেন্স প্রতি ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ ও মনিটর করা ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজ নেই। তবে মাঝে ওমরাহর নামে মানবপাচারের ঘটনার কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় এখন ওমরাহ কার্যক্রমের প্রতি নজর রাখে। সৌদি দূতাবাস থেকে ওমরাহযাত্রী ও হজ এজেন্সির তথ্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওমরাহযাত্রীরা যথাসময়ে দেশে ফিরছেন কি না তা নজরদারি করা হয়। অভিযুক্ত ওমরাহ এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তি আরোপ করে থাকে। জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিতে এই ক্ষমতা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের তবে চলতি বছরের নীতিতে ওমরাহযাত্রীদেরও প্রাক-নিবন্ধনের বিষয়ে একটি ধারা যুক্ত করা হলেও সেটি সহসা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ইতঃপূর্বে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বিষয়গুলো আস্তে আস্তে নিয়মের মধ্যে আনা হবে। তবে বিশেষ করে সৌদি সরকার ওমরাহর ভিসাপ্রাপ্তি অতি দ্রুত সহজ করার কারণে এই প্রাক- নিবন্ধনের আদৌ প্রয়োজনীয় নেই বলেও সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ।
হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমও এ ব্যাপারে ইতঃপূর্বে নয়া দিগন্তকে বলেন, সারা বিশে^র ৩০ লাখের বেশি মানুষ একই সাথে একই সময়ে হজ পালন করে বলে এটি একটি বিশাল ঘটনা। ওমরাহ সারা বছর করা যায় এবং ওমরাহর ভিসা অনলাইনে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় সরাসরি দিয়ে থাকে। ফলে এখানে প্রাক-নিবন্ধনের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেটা বিবেচনার বিষয় রয়েছে।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর সারা বিশে^র এক কোটি লোক ওমরাহ পালন করবেন এমন টার্গেট নিয়ে সৌদি সরকার গত ১৬ আগস্ট থেকে ওমরাহকার্যক্রম শুরু করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৩ কোটিতে পরিণত করার টার্গেটও রয়েছে দেশটির। এর আগে হজ মওসুম শুরু হওয়ায় গত ১৭ জুন থেকে সৌদি সরকার দুই মাসের জন্য ওমরাহ ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছিল। সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ওমরাহ মওসুমে সর্বমোট সৌদি সরকার ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৭৩৪টি ওমরাহ ভিসা ইস্যু করেছিল। তার মধ্যে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫৭ জন। এর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বাংলাদেশী ওমরাহযাত্রীদের জন্য সর্বমোট ইস্যুকৃত ভিসা এক লাখ ১৫ হাজারের মতো হবে। অন্য দিকে ওমরাহ পালনে শীর্ষে ছিল পাকিস্তান। দেশটির ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭৭ জন ওমরাহ পালন করেন। এরপরে ইন্দোনেশিয়ার ৯ লাখ ৫৭ হাজার ১২৫ জন, ভারতের ৬ লাখ ৫০ হাজার ৪৮০ জন, মিসরের ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫ জন, আলজেরিয়ার ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৮ জন, ইয়েমেনের ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৮ জন, তুরস্কের ৩ লাখ ২১ হাজার ৪৯৪ জন, মালয়েশিয়ার ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬৭৪ জন, ইরাকের ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭১ জন ও জর্দানের ২ লাখ ১৬ হাজার ১৬৫ জন।
চলতি বছর পবিত্র হজ পালন করেছেন মোট ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪০৬ জন। এর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজীর সংখ্যা ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ২৭ জন বাকিক ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৯ জন সৌদি আরবের। বাংলাদেশ থেকে হজ পালনে যান এক লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফিরতি ফ্লাইটে সব হাজীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এ বছর হজের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই সৌদি আরব ওমরাহর কাজ শুরু করে গত ১৬ আগস্ট থেকে। পরদিন হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ ওয়াজ্জান সৌদি দৈনিক ওকাজকে বলেন, ‘ওমরাহ পালনে ইচ্ছা পোষণকারী ব্যক্তিকে ভিসার জন্য দূতাবাসে যেতে হবে না। নতুন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে ২৪ ঘণ্টা ই-ভিসা সুবিধা দেবে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগামী মওসুমে ওমরাহ পালন করতে ইচ্ছুক এক কোটি ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে ই-ভিসা সুবিধা দেবে সৌদি।’ ‘দ্য সেন্ট্রাল প্লাটফর্ম ফর দ্য ইলেকট্রনিক ইস্যুয়েন্স অফ ওমরাহ ভিসাস’ নামক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনের ওমরাহ ভিসা দেয়া হবে। হজের পর গত রোববার মওসুমের প্রথম ওমরাহযাত্রীরা সৌদি আরব পৌঁছান। মালয়েশিান এই ওমরাহযাত্রীদের জেদ্দা কিং আবদুল আজিজ বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাদেরকে ঐতিহ্য অনুযায়ী গোলাপ ফুল এবং জমজমের পানি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি হজযাত্রীর পাশাপাশি ওমরাহযাত্রীর সংখ্যাও প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সংখ্যা আগে ৫০ হাজারের মধ্যেই ছিল। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা