২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সিয়ামের একটি অনন্য পুরস্কার

সিয়ামের একটি অনন্য পুরস্কার - ছবি : সংগ্রহ

আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ষষ্ঠ দিবস। রমজানের সিয়াম পালনের বিনিময়ে যেসব অসাধারণ পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হলো এই, সিয়াম কেয়ামতের দিন তা পালনকারীর জন্য সুপারিশ করবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লøাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘সিয়াম ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে প্রতিপালক, আমি দিনের বেলায় তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। কুরআন বলবে, হে প্রতিপালক, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। (মুসনাদে আহমদ)

সিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও নেক আমল। আর নেক আমল পাপকে মুছে দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘সৎকর্ম অবশ্যই পাপসমূহ নিবারণ করে।’ (সূরা হুদ, আয়াত : ১১৪ )
রমজান গুনাহ মাফ ও নিবারণের আরো বেশি সুযোগ দিয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে তার অতীতের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’(বুখারি ও মুসলিম) 

ইহতিসাবের অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে নিষ্ঠার সাথে সন্তুষ্টচিত্তে আদায় করা। আল্লাহর রাসূল আরো বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা থেকে অপর জুমা এবং এক রমজান থেকে অপর রমজান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের পাপসমূহের জন্য কাফফারা (প্রতিকার) হিসেবে গ্রহণ করা হয়, যদি কবিরা গুনাহ বা গুরুপাপ থেকে বেঁচে থাকা যায়। সিয়াম ছোট পাপগুলোকে নিবারণ করে আর তাওবা করলে কবিরা গুনাহ বা গুরুপাপ মাফ করা হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে, গুরুগুলো থেকে তোমরা বিরত থাকলে আমি তোমাদের লঘুতর পাপগুলো ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা, আয়াত : ৩১) 

এসব আয়াত ও হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ক্ষমার ওয়াদা করা হয়েছে, তা তিনটি শর্তসাপেক্ষে। 
প্রথমত রমজানের সিয়াম পালন করতে হবে ঈমানের সাথে অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এবং সিয়াম যে একটি ফরজ ইবাদত এর প্রতি বিশ্বাস রেখে। সিয়াম পালনকারীকে আল্লাহ যে সকল পুরস্কার দেবেন তাও বিশ্বাস করতে হবে। 

দ্বিতীয়ত সিয়াম পালন করতে হবে ইহতিসাবের সাথে। ইহতিসাব অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান ও পুরস্কারের আশা করা, তাঁকে সন্তুষ্ট করতেই সিয়াম পালন করা এবং সিয়ামকে বোঝা মনে না করা। তৃতীয়ত কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। 
অতএব রোজার ফজিলত ও সওয়াব শুধু ওই ব্যক্তি লাভ করবে যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে রোজা রাখবে। মানুষকে দেখানো বা শোনানো অথবা মানুষের প্রশংসা অর্জন কিংবা স্বাস্থ্যের উন্নতির নিয়তে সিয়াম আদায় করবে না। 

তা ছাড়া সিয়াম আদায়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূলের সুন্নত অনুসরণ করতে হবে। সেহরি, ইফতার, তারাবিহসহ সবগুলো বিষয় রাসূলের সুন্নত অনুযায়ী আদায় করতে হবে। তেমনি শুধু খাওয়া-দাওয়া ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকলেই যথেষ্ট হবে না। মিথ্যাচার, পরনিন্দা, অশ্লীলতা, প্রতারণা, ঝগড়া-বিবাদসহ সব ধরনের অবৈধ কাজ হতে বিরত থাকতে হবে। মুখ যেমন খাবার থেকে বিরত থাকে, তেমনিভাবে চোখ বিরত থাকবে অন্যায় দৃষ্টি থেকে, কান বিরত থাকবে অনর্থক কথা ও শব্দ শোনা থেকে, পা বিরত থাকব অন্যায়-অসৎ পথে চলা থেকে। সিয়াম পালনকারী সব রকমের অন্যায় ও গর্হিত আচার-আচরণ থেকে নিজেকে হেফাজত করবে। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ ত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি শরীফ)

তিনি আরো বলেছেন : ‘অনেক সিয়াম পালনকারী আছে যারা তাদের সিয়াম থেকে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা ভোগ করে। আবার অনেক সালাত আদায়কারী আছে যারা তাদের সালাত থেকে শুধু রাতজাগা ভোগ করে থাকে।’ (এ ছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিদান লাভ করে না)। (মুসনাদে আহমদ)।


আরো সংবাদ



premium cement