০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬
`

মুমিনের জন্য আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য

- ছবি - সংগৃহীত

মানবজাতির জীবন পরিচালনার জন্য একমাত্র নিরাপদ পন্থা হলো আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়েতের অনুসরণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এই হেদায়াত দু’টি পদ্ধতিতে মানবজাতির কাছে পৌঁছিয়েছেন। এক. কিতাব বা ওহী। দুই. তাঁর প্রেরিত নবী রাসূলগণ। কিতাব বা ওহীর পাশাপাশি রাসূলগণকে পাঠানোর কারণ ছিলো— নবী রাসূলগণ যেন আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়াত মানুষকে হাতে কলমে দেখিয়ে সেসব শিক্ষা তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে দিতে পারেন। সেই সাথে আল্লাহ প্রদত্ত বাণীতে কোনো ব্যখ্যা বিশ্লেষণের দরকার হলে সেটাও যেন তাঁরা করতে পারেন।

আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বশেষ দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনকে হেদায়াতের মূল পাঠ হিসেবে অবতীর্ণ করে নবীজী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার প্রশিক্ষক ও ব্যাখ্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত করেছেন। সুতরাং আমাদের জন্য আল্লাহর বাণী কুরআনে কারীমকে অনুসরণ করার পাশাপাশি পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা হিসেবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসকেও অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য।

নবীজীর দায়িত্ব কুরআনের ব্যাখ্যা

এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় যে, যেকোনো সংবিধানেই শুধু মূলনীতির উল্লেখ থাকে। তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের অধিকার থাকে সাংবিধানিকভাবে অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তির। আল্লাহ তা‘আলা নবীজীকে এই অধিকার দান করেছিলেন। সেই অধিকার প্রাপ্ত হয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহীর আলোকে কুরআনে কারীমের মূলনীতি সমূহের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা মুসলিম জাতির সামমনে পেশ করেছেন। সুতরাং বোঝা গেল- রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুধু বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়নি। বরং সে বাণীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দায়িত্বও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং নবীজীকে অর্পণ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে—
‘এবং তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি, মানুষকে সুস্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যাহা তাহাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হইয়াছিল, যেনো তারা চিন্তা করে।’ -সূরা নাহল: ৪৪।

এই বিষয়টাকেই আরো স্পষ্ট করে আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করছেন—
‘যেমন আমি তোমাদের মধ্য হইতে তোমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা জানতে না; তা তোমাদের শিক্ষা দেয়।’ -সূরা বাকারা: ১৫১।

আমরা বুঝতে পারলাম- আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়েতকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে নবীজি ছিলেন আল্লাহ কর্তৃক নিয়োজিত প্রশিক্ষক। আর এই প্রশিক্ষকের অবস্থান‌ এমন যে, শুধু আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষাকে গ্রহণ করে প্রশিক্ষককে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শিক্ষা পরিপূর্ণ আত্মস্থ করতে চাইলে তাঁর প্রেরিত প্রশিক্ষকেরও পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে।

কুরআনে নবীজীকে অনুসরণ ও আনুগত্যের আদেশ

এবার আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পাশাপাশি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করার ব্যাপারে কুরআনে কারীমের কয়েকটি আয়াত লক্ষ করি—
‘হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।’ সূরা নিসা: ৫৯।

এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নিজের আনুগত্যের সাথেই ভিন্নভাবে রাসূলের আনুগত্যের আদেশ করেছেন। এখানে আল্লাহর আনুগত্য বলতে বোঝানো হচ্ছে আল্লাহর কথার আনুগত্য; যেটা কুরআনে আছে। আর রাসূলের আনুগত্যের অর্থ হলো তাঁর হাদীসসমূহের আনুগত্য করা।

আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবীজীর আদেশ মানাকে জরুরী ঘোষণার পাশাপাশি তাঁর নিষেধ থেকে বিরত থাকার আদেশ করেছেন। দেখুন—‘রাসূল তোমাদের যা (হুকুম) দেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত হও।’ সূরা হাশর : ৭

আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করছেন—‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলো সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হলো।’ সূরা আহযাব : ৩৬

এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহ এবং রাসূল শব্দদ্বয়ের মাঝে ‘ওয়াও’ হরফটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মানে হলো আল্লাহ অথবা রাসূল যে কেউ কোনো ফায়সালা বা হুকুম করলে তা মানা আবশ্যক।

নবীজির আদেশ না মানলে হুঁশিয়ারি

রাসূলের আদেশ শুধু যে মানা আবশ্যক, তাই নয়। কেউ রাসুলের আদেশ না মানলে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে লড়াইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। দেখুন-‘তোমরা লড়াই কর সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিয্য়া দেয়। সূরা তাওবা : ২৯
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যেকোনো বিষয়কে হারাম করার অধিকার রাসূলকে দিয়েছেন। আর এটা স্পষ্ট কথা যে, শরীয়তের কোনো বিষয় হারাম করার অধিকার যার থাকবে তাঁর কথা মানা অবশ্যই জরুরী হবে।

এটা ভিন্ন কথা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চয়ই আল্লাহর সন্তষ্টির বাইরে কোনো আদেশ নিষেধ নিশ্চয়ই করবেন না। কিন্তু এ সকল আয়াত থেকে এটা প্রমাণিত যে, উম্মতকে স্বাধীনভাবে যে কোনো আদেশ নিষেধের অধিকার নবীজীর হাতে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং নবীজীর কথাসমূহ শরীয়তের ভিন্ন একটি দলীল হিসেবে বিবেচিত হবে।

নবীজির অনুসরণ ঈমানের দাবি

উম্মতে মুসলিমার জন্য আইন প্রণেতা, হাকেম ও ফায়সালাকারী হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ অধিকার দিয়েছিলেন। এটি বিশ্বাস করা ও মেনে নেওয়া ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোনো মুমিনের জন্য এ বিষয়ে সন্দেহের সুযোগ নেই। দেখুন কুরআনের বর্ণনা—‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে তারতম্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতকের উপর ঈমান আনি এবং কতকের সাথে কুফরী করি’। আর তারা মাঝামাঝি একটা পথ অবলম্বন করতে চায়। তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব।’ সূরা নিসা : ১৫০, ১৫১

এখানে বলে দেয়া হয়েছে— ঈমানদার হতে হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল উভয়কে মানতে হবে। যদি কেউ বলে— ‘আমরা কিছু মানি আর কিছু অস্বীকার করি’ —তাহলে সেটা হবে কুফরী। সারকথা হলো- আল্লাহকে মেনে তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই।

প্রকৃত মুমিনের করণীয়

প্রকৃত মুমিন হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো— আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সমানভাবে অনুসরণ করতে হবে। কুরআনের বর্ণনা দেখুন—‘মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহবান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম।’ সূরা নূর: ৫১
এই আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী মুমিনের কর্তব্য তার জীবনকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল উভয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাজানো। উভয় হেদায়াতের আলোয় নিজেদের আলোকিত করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : শিক্ষক ও সহকারী কার্যনির্বাহী, দাওয়াহ ও ইরশাদ বিভাগ, জামি'আ রাহমানিয়া আরাবিয়া, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা
খতীব, শহীদ তিতুমীর কলেজ জামে মসজিদ, মহাখালী, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স ২২৭৬ নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ার, ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ বিএনপির দিনাজপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে মাঠে আদালত স্থাপনের প্রতিবাদে স্থানীয় ও ঢাকা আলিয়ার শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ রাজশাহীসহ ৫ জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বিস্তৃত হতে পারে ইউক্রেনে রাশিয়ার বোমা হামলা, নিহত ১৩ হালুয়াঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ২ জামায়াত নেতা আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রিভিউ শুনানি ২৩ জানুয়ারি মুকসুদপুরে থানা থেকে পালাল আসামি নিখোঁজের দু’দিন পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সজীব উদ্ধার চুয়াডাঙ্গায় এক দিনে তাপমাত্রা কমলো ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সকল