০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

শেষ নবীর খোঁজে

প্রতীকি ছবি - ছবি - নয়া দিগন্ত

যায়েদ ইবনে সা’নাহ। ইয়াহুদিদের বড় পণ্ডিত। তাওরাতের বিশেষজ্ঞ। প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক।
একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বেরিয়েছেন। সাথে হজরত আলী ইবনে আবি তালেব রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এমন সময় এক গ্রাম্য ব্যক্তি সওয়ারি নিয়ে হাজির হলেন। এক গ্রামের দুর্ভিক্ষের কথা বলে সেখানের মুসলমানদের জন্যে সাহায্য চাইলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর দিকে তাকালেন। তারপর নিজ থেকেই বললেন, আচ্ছা, তোমার কাছে তো কিছু নেই।

ঠিক এসময়ে নবিজির দিকে এগিয়ে এলেন ইয়াহুদি পণ্ডিত যায়েদ ইবনে সা’নাহ। বললেন, আমি আপনাকে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করতে পারি। বিনিময়ে আপনি নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে অমুক বাগানের খেজুর আমাকে দেবেন।

নবীজি বললেন, শোনো ইয়াহুদি। নির্দিষ্ট বাগানের খেজুর দিতে পারব না। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে তুমি টাকা দিতে পারো। সময়মতো তোমাকে খেজুর দিয়ে দেয়া হবে।

যায়েদ রাজি হয়ে গেলেন। তিনি চাইছিলেন যেকোনোভাবে নবিজির সাথে একটা লেনদেন হোক। নিজের থলে খুলে ৮০ মিসকাল স্বর্ণ নবিজিকে অগ্রীম দিলেন। নবিজি স্বর্ণ-মুদ্রাগুলো ওই সাহায্যপ্রার্থী ব্যক্তিকে দিয়ে বললেন, এগুলো নিয়ে তাদের সাহায্য করো।

কিছুদিন পর। নির্ধারিত সময় আসার তখনও দুই-তিন দিন বাকি। নবীজি সেদিন এক সাহাবির জানাজা আদায় করছিলেন। সাথে ছিলেন আবু বকর, উমরসহ একদল সাহাবি। ঠিক সে সময়ে যায়েদ ইবনে সা’নাহ তার পাওনা আদায়ের জন্যে উপস্থিত হলেন।

জানাজা শেষে নবীজি একটি দেয়ালের ছায়ায় বসার জন্যে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু তার আগেই নবিজির জামা চেপে ধরলেন যায়েদ। গোস্বা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘কী ব্যাপার মুহাম্মদ, তুমি কি পাওনা আদায় করবে না? খোদার কসম, আব্দুল মুত্তালিবের বংশের সবাই পাওনা আদায়ে গড়িমসি করে। তোমাদের টালবাহানা সম্পর্কে আমি আগে থেকেই জানতাম।’

যায়েদ ইবনে সা’নাহ-র কথা শুনছিলেন হজরত উমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। রাগে তার চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম। তিনি বললেন, ‘এই আল্লাহর শত্রু, আল্লাহর রাসূলকে তুমি এমন কথা বলছো? আমার সামনে তাঁর সাথে এমন আচরণ করছো? আল্লাহর শপথ, যদি নবীজির প্রাণের ঝুঁকি না থাকত তরবারির আঘাতে তোমার মাথা উড়িয়ে দিতাম।’

নবীজি উমরের কথা শুনে মুচকি হাসলেন। বললেন, ‘উমর, তোমার কাছ থেকে আমরা দু’জনই আরো ভালো কিছু আশা করছিলাম। ভালো হতো যদি তুমি রাগ না করে আমাকে পাওনা আদায়ের পরামর্শ দিতে আর তাকে ভালোভাবে চাইতে আদেশ করতে। যাও উমর, তার পাওনা আদায় করে দাও। সেই সাথে তোমার ধমকের বিনিময়ে তাকে ২০ সা’ অতিরিক্ত খেজুর দিয়ে দাও।’

নবীজির কথা অনুযায়ী হজরত উমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার পাওনা পরিশোধ করলেন। অতিরিক্ত ২০ সা’ পেয়ে যায়েদ ইবনে সা’নাহ অবাক হলেন। বললেন, এ অতিরিক্ত খেজুর কেন?
উমর রাযিয়াল্লাহু তায়া আনহু বললেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ। তোমার সাথে কঠোরতার বিনিময়।
যায়েদ ইবনে সা’নাহ বললেন, উমর, আমাকে চেনো?
উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, কে তুমি?
আমি যায়েদ ইবনে সা’নাহ।
সেই ইয়াহুদি পণ্ডিত?
হ্যাঁ, সেই পণ্ডিত।

উমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যায়েদ ইবনে সা’নার নাম ইতোপূর্বে শুনেছেন। তিনি অবাক হলেন। তাওরাতের এত বড় পণ্ডিত। বিরাট সম্পদশালী মানুষ। তিনি কেন সামান্য কিছু পাওনার জন্য নবীজির সাথে এমন আচরণ করলেন?

তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কেন আল্লাহর রাসূলের সাথে এমন করতে গেলে?
যায়েদ ইবনে সা’নাহ বললেন, উমর, তাওরাতে থাকা শেষ নবীর আলামতগুলো আমি মেলাচ্ছিলাম নবীজির সাথে। একে একে সবই মিলে গিয়েছিল। সবগুলোই দেখে ফেলেছিলাম তার মাঝে। কিন্তু দুটো আলামত মেলানো বাকি রয়ে গিয়েছিল।
এক. শেষ নবীর সহিষ্ণুতা তার নির্বুদ্ধিতার ওপর প্রবল থাকবে।
দুই. তার সাথে কেউ মূর্খের আচরণ করলে তিনি সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেবেন।
আমি সুযোগ খুঁজছিলাম। যেভাবেই হোক মুহাম্মদের সহনশীলতা কেমন তা মাপতে হবে। দেখতে হবে তার সহিষ্ণুতা আর নির্বুদ্ধিতার পরিমাণ। আমার লেনদেনের উদ্দেশ্য ছিল এটাই। এ লেনদেনের মাধ্যমে আজ আমি সে দুটো আলামতও নবীজির মাঝে পেয়ে গেলাম। উমর, আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে সন্তুষ্ট চিত্তে—
আল্লাহকে আমার রব,
ইসলামকে আমার ধর্ম,
আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার নবী হিসেবে মেনে নিচ্ছি।

উমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সামনে ইসলাম গ্রহণ করার পর নবীজির সামনে উপস্থিত হয়েও নিজের ইসলামের কথা প্রকাশ করলেন তিনি।

একদিনেই সফলতার পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন যায়েদ ইবনে সা’নাহ রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। সর্বশেষ তাবূকের জিহাদে তিনি অত্যন্ত সাহসের সাথে শত্রুপক্ষের দিকে এগিয়ে যান। এগিয়ে যান চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাতের দিকে।

সূত্র : সহীহ ইবনে হিব্বান, ১/৫২১

লেখক : শিক্ষক, জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া, মুহাম্মদপুর, ঢাকা, খতিব, শহীদ তিতুমীর কলেজ জামে মসজিদ, মহাখালী, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
আড়াইহাজারে গ্রামবাসীর বসতঘরে হামলা ‘গণপিটুনিতে নিহত ডাকাত সহযোগীদের’ মুন্সীগঞ্জে ছাত্রলীগের সাথে ছাত্রদলের সংঘর্ষে আহত ১২ প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার আহ্বান প্রধান বিচারপতির ঢাবিতে ২৪৪ কোটি টাকা ব্যায়ে ছাত্রী হল নির্মাণের উদ্যোগ খালেদা জিয়া সাথে সাক্ষাৎ করলেন অলি, প্রবেশ করলেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মহিলা ফুটবল লিগে পুল প্রথা! বায়ু দূষণে অসুস্থ-বৃদ্ধ-শিশুদের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ কয়েক বছরের মধ্যে মুসলিমরা পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে, ভবিষ্যদ্বাণী বিজেপি নেতার হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত সরকারের এই মুহূর্তের প্রথম এবং প্রধান ভাবনা আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে দেশ পরিচালনা করেছে : সালাউদ্দিন বাবু

সকল