আবু সাঈদ হত্যা : এএসআই আমীর ও কনস্টেবল সুজন গ্রেফতার
- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো
- ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:০৩
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি এসআই মো: আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ বিউরো অফ ইনভেস্টিগেশন পিবিআই।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর পুলিশ লায়ন্সে ক্লোজড থাকা এই দুই পুলিশ সদস্যকে পিবিআই-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার( হেডকোয়ার্টার্স) আবু বকর সিদ্দিক জানান, গত ১৬ জুলাই শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় ঘটনায় মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় গত ১৯ আগষ্ট মামলা হয়, যার নম্বর-৩, এই মামলায় আসামি এএসআই মো: আমীর হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার রিকুইজিশনের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশন এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পিবিআই আবু সাঈদ এর মামলাটি তদন্ত করছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন রংপুরের পুলিশ সুপার মো: জাকির হোসেন জানান, আমির আলী ও কনস্টেবল এ ঘটনার পর থেকেই পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে রাখা হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যায় তাদেরকে মহানগর পুলিশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় প্রথমে পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা করেছিল। ওই মামলায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ঈদ পাঠ পেলে আবু সাঈদ হত্যার বিষয়ে এজাহার করেছিল। পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার হয়ে যায়। এরপর আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী ১৮ আগস্ট রংপুর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটনআদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলাটি আদালতের আদেশে পরের দিন রেকর্ডভুক্ত করে আদালতকে জানায় তাজহার থানা। এরপর মামলাটি তদন্তের ভার দেয়া হয় পিবিআইকে।
মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো: মনিরুজ্জামান, ডিসি ক্রাইম আবু মারুফ হোসেন, পুলিশ সদস্য সৈয়দ আমীর আলী, সুজন চন্দ্র রায়সহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে, গত ৩ আগস্ট এই দুই পুলিশ সদস্য এএসআই আমীর আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
মামলার এজাহারে আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী উল্লেখ করেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদ নিরস্ত্র ও একা ছিলেন। তিনি দৃশ্যত পুলিশের জন্য কোনো হুমকি ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তাকে শটগান দিয়ে গুলি করা হয়। আবু সাঈদ পড়ে গিয়ে একাধিকার দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে একাধিকার গুলি করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়ার নেতৃত্বে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। আবু সাঈদ পিছু না হটে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে এগিয়ে যান। পুলিশের সামনে এ সময় প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান হেলমেট পরে এসে আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে ‘গুলি করুন, গুলি করুন' বলে নির্দেশ দেন। অপর দুই আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক মশিউর রহমান ও আসাদুজ্জামান মণ্ডল পুলিশকে গুলি করতে প্ররোচিত করেন।
গত ১৬ জুলাই দুপুর পৌনে ২টায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে দুই হাত উঠিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে আবু সাঈদ বলেছিলেন, ওদের মারবেন না আমাকে গুলি করুন। এরপর পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যায় আবু সাঈদ।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফর পাড়া বাবুনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ।
মামলার বাদী রমজান আলী বলেন, আমার ভাইকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। তার এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদদাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরসহ ধরিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা