মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সহযোগিতা করতে রাজি জামায়াত : গোলাম পরওয়ার
- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৮
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত খুনি শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিচারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে সহযোগিতা করতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুরের ওয়েস্টার্ন কুজিন হোটেল মিলনায়তনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন প্রসঙ্গে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা আজমির বক্তব্য তার ব্যক্তিগত, এটি জামায়াত ইসলামের বক্তব্য নয়, এছাড়াও জামায়াতকে নিয়ে ৪৮ বিশিষ্ট নাগরিকের বক্তব্যকে অসত্য বলে মন্তব্য করেন।
জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা দেশের সব মানুষের মতপ্রকাশের ভাষাকে সম্মান করি। ৪৮ বিশিষ্ট নাগরিক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্য নয়। জামায়াতকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে অপচেস্টার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের সাথে দেখা করেছি। আমরা তাকে বলেছি, একটা ন্যূনতম সংস্কার রাষ্ট্রের, সংবিধানের, নির্বাচন কমিশনের রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্দ্রে রন্দ্রে যে দুর্নীতি, দলীয়করণ, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পেতাত্মারা বাসা বেঁধে বসে আছে তাদেরকে সরিয়ে একটা স্থিতিশীল ও স্টাবল দেশ তৈরি করে গ্রহণযোগ্য ক্রেটিবেল, পারটিসেপটরি, ইনক্লুসিভ নিউট্রাল ফেয়ার ইলেকশন দেয়ার জন্য আপনারা চেস্টা করেন। জামায়াত আপনাদের পাশে থাকবে।’
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা যাতে আর আমাদের কাজে বাঁধা তৈরি করতে না পারে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা হাজার হাজার খুনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে লাশ বিকৃত করেছে, আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে- এরা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা, সাজানো, বানানো, মিথ্যা এজাহার স্বাক্ষী, বাদি বানিয়ে যেভাবে বিচারের নামে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার কোনোটির সাথে আমাদের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘এখন এই সরকার ওই মানবতাবিরোধী অপরাধের ওই ট্রাইবুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত খুনি হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিচারে আমরা সহযোগিতা করতে রাজি আছি। আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে। কিন্তু তোমাদের (হাসিনাসহ তার অনুসারীদের) বিচার করতে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেয়া লাগবে না। সত্য দিয়ে তোমাদের ১০০ বার ফাঁসি দেয়া যাবে। যে এক হাজার লোকের জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে, সব হাসিনার নির্দেশে হয়েছে।’
জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের রংপুরের কৃতি সন্তান এ টি এম আজহারুল ইসলাম ফাঁসির দণ্ড নিয়ে কারাগারে তিল তিল জীবনযাপন করছেন। আমরা আজকের এই শহীদ পরিবারের সভা থেকে তাকে বেগম খালেদা জিয়ার মতো এই সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দাবি করছি। সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
এ সময় জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তা পানিচুক্তির উদ্যোগ নিয়ে উত্তরের দুই কোটি মানুষকে খরা-বন্যার হাত থেকে মুক্ত করার দাবিও জানান।
তিনি বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলকে উন্নয়ন মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে।’
রংপুর মহানগর আমীর এ টি এম আজম খানের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনালের আব্দুল হালিম, কর্ম ও শূরা সদস্য মাহবুবার রহমান বেলাল, মহানগর আমির এ টি এম আজম খান, জেলা আমির গোলাম রব্বানীসহ স্থানীয় নেতারা। বক্তব্য রাখেন শহীদ পরিবারের সদস্যরাও।
মতবিনিময় সভা শেষে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্চ থেকে নেমে দর্শক সারিতে বসা শহীদ পরিবারদের সদস্যদের কাছে যান। তাদের জড়িয়ে ধরে কাঁদেন। পরে শহীদ ১৬ পরিবারের প্রত্যেককে এক লাখ করে টাকা তুলে দেন তিনি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ওইসব পরিবারকে আরো এক লাখ টাকা করে প্রদান করেছিল জামায়াত।
এর আগে, একই স্থানে জেলা ও মহানগর জামায়াতের রোকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা