২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাতেই লাশ দাফনে দেয়া হয়েছিল চাপ

আবু সাঈদের লাশ পুলিশ আড়াই ঘণ্টা গুম করে রেখেছিল, অভিযোগ বড় ভাইয়ের

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের লাশ পুলিশ আড়াই ঘণ্টা গুম করে রেখেছিল এবং জেলা পুলিশ, উপজেলার প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা রাতেই লাশ দাফনের জন্য প্রবল চাপ তৈরি করেছিল পরিবারের ওপর এমন দাবি করেছেন আবু সাঈদে বড় ভাই ও মামলার বাদি রমজান আলী।

বৃহস্পতিবার বিকেলে (৫ সেপ্টেম্বর) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে শহীদি মার্চের যোগ দেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকতা মঞ্চে এই দাবি করেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন, ছোট ভাই আবু হোসেন, বোন সুমি বেগম, শহীদ মানিকের মা নুরজাহান বেগম ও ভাই রতন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আবু সাঈদ ও মানিকের পরিবারকে কালোব্যাচ পরিয়ে দেন।

এ সময় আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী দাবি করেন,‘১৬ জুলাই রংপুর মেডিক্যাল কলেজে লাশ নিতে গেলে পুলিশ তিনি এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাশ ছিনতাই করে আড়াই ঘণ্টা গুম করে রেখেছিল। পরে রাতেই স্থানীয় ইউএনও, ওসি এবং আওয়ামী লীগ নেতারা বাড়িতে গিয়ে লাশ দাফনের জন্য কবর খোড়ার চাপ দিয়েছিল। এ সময় বাড়ি থেকে তার বাবা এই খবর মোবাইলফোনে জানালে তিনি বলেছিলেন এখনো লাশই পাইলাম না। তাহলে কবর খুড়ে লাভ কী।’

আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া নিয়েও পুলিশ নাটক করেছিল। রাতে বাড়িতে যখন আমার বাবা মায়ের ওপর আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রশাসনের লোকজন লাশ দাফনে প্রবল চাপ তৈরি করেছিল। তখন তারা অসহায় হয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা পরের দিন সকাল ৭টার মধ্যেই দাফন এবং মসজিদে জানাজা করার জন্য নির্দেশ দেয়। তখন আমরা আরো ভয় পেয়ে যাই। তখন আমি বলি কবর খুঁড়তেই তো ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। তখন তারা আমাদের কবর খুঁড়ার বিষয়টি দেখভাল করে। পরে ছাত্র ভাইদের সহোযোগিতায় মাদরাসা মাঠে জানাজা করেছি এবং ১১টায় দাফন করেছি। এ সময় ছাত্র ভাইদের মাত্র ১৫ মিনিট সময় দিয়েছিল পুলিশ।

সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, আমার ভাইকে গুলি করার সাথে শেখ হাসিনা, ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের লোকজন এবং পুলিশ জড়িত। আমি ১৭ জনের নাম মামলায় দিয়েছি। এছাড়াও অজ্ঞাতনামাদের দিয়েছি। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তিনি শেখ হাসিনা দেশে এনে বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, জড়িতদের ফাঁসি দিতে হবে।

এ সময় শহীদ সাঈদ ও মানিকের পরিবার তাদের সন্তানসহ যারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন তাদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। পরে তারা শহীদি মার্চে অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা তাদের রিকশায় শহীদি মার্চের সামনে দিয়ে সম্মান জানান।

বিকেল ৬টায় শহীদি মার্চটি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ চত্বর থেকে শুরু করে মডার্ন হয়ে ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা স্মারকে এসে ফুল দেয়। পরে শহীদ চত্বরে এসে সকল শহীদের উদ্দেশ্যে মোনাজাত করে। এ দিকে বিকেল ৪টায় রংপুর প্রেস ক্লাবের সামন থেকে রংপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়। সেখানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন শহীদ পরিবার এবং আন্দোলন সমন্বয়করা।


আরো সংবাদ



premium cement