২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আরএমপির এসআই মজনুর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড়

এসআই মজনুর ফেসবুক পোস্ট - ছবি : সংগৃহীত

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) একজন এসআই’র ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড় তৈরি হয়েছে। ওই ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ১৯ জুলাই রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি এবং এসপি নিজেই রাইড কার দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হওয়া পাঁচটি মামলায় তাদের নাম না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশের এই সদস্য। প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে তারা কি সব আমলেই সুফল ভোগ করবেন?

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় রংপুর মেট্রোপলিটন নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মজনু তার ফেসবুক আইডি ’মিসির আলী’তে সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে লেখেন, ‘প্রিয় মিডিয়া/সাংবাদিক/আইনজীবী ভাই। প্রতিদিন কোর্টে মামলা হচ্ছে। ঘটনাস্থল সিটি বাজারের সামনে যেখানে গুলি করেছে রেঞ্জ ডিআইজি, জেলার পুলিশ সুপার বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক রংপুর-এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের রায়ট টিম। আর মামলা হচ্ছে যারা ঘটনাস্থলে ছিলো না। এত ফুটেজ এত মিডিয়া কাভার থাকতে এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হচ্ছে।’

তিনি আরো লেখেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ যারা বৈষম্যবিরোধী মনোভাবাপন্ন অধঃস্তনদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি মানবিকভাবে প্রকাশ-প্রচারের দাবি জানাচ্ছি।’

মজনু আরো লেখেন, ‘তাহলে এসপি, ডিআইজি, জেলা প্রশাশক, বিভাগীয় কমিশনার- এরা প্রভাবশালী, প্রতাপশালী, বিত্তশালী হওয়ার কারণে ঘটনাস্থলে নিজে উপস্থিত থেকে গুলি করেও মামলা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন। আর আমরা ঘটনার দিনের ডিউটিতে না থেকেও মামলার হয়রানির শিকার হচ্ছি।’

‘সুফলভোগীরা কি আজীবন আর সব আমলেই সুফল ভোগ করবেন?,’ ফেসবুক পোস্টে এই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

শেষে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আপনাদের কাছে আমার প্রার্থনা এবং আর্তনাদ।’

এই পোস্ট তিনি রংপুর জেলা ও মহানগর পুলিশের মিডিয়াসেলেও দেন।

এই পোস্টের পর ব্যাপক তোলপাড় চলছে রংপুরে।

ফেসবুক সম্পর্কে জানতে এসআই মজলুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আপনারা মিডিয়াকর্মীরা সত্য প্রকাশ করুন। আমি আমার বক্তব্য আমার ফেসবুকে দিয়েছি। শত শত ফুটেজ আছে। ১৯ জুলাইয়ে সিটি বাজার এলাকায় জেলা পুলিশের পোশাকধারীরা ছিলেন। এখানে মেট্রোপলিটন পুলিশের কেউ ছিল না। অথচ তাদের নামে মামলা হচ্ছে না।’

তাদেরকে কারা বাঁচাচ্ছে, অনুসন্ধান করে সাংবাদিকদের নিউজ প্রকাশ করার অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে রংপুরের পুলিশ সুপার মো: শাহজাহানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ধরনের কোনো ফেসবুক পোস্ট এখনো তার চোখে পড়েনি।

বিষয়টি জানতে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান এবং বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ফলে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় রংপুর সিটি বাজারের সামনে গত ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত পলিটেকনিক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মজনুকে।

রংপুর আদালত থেকে পাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দায়ের করা পাঁচটি হত্যা মামলার নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, পুলিশের আইজিপি, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, মেট্রোপলিটন ডিসি, এসি, ওসি, এসআই, কনস্টেবলসহ প্রায় ১৭ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এই পাঁচটি মামলার মামলার কোনোটিতেই নেই রংপুর জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং বিভাগীয় প্রশাসনের কেউ।


আরো সংবাদ



premium cement