কোটা আন্দোলন : আবু সাঈদ হত্যা মামলায় জামিনে মুক্ত কিশোর মাহিম
- সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর
- ০১ আগস্ট ২০২৪, ১৫:১৬, আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৫৮
রংপুর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহত আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার কিশোর আলফি শাহরিয়ার মাহিমের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। পরে জেলমুক্ত হয় সে।
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালত-১-এর বিচারক মোস্তফা কামাল এই আদেশ দেন।
পরে বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। কারাগার থেকে বেরিয়ে স্বজনদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে মাহিম।
আদালতের পিপি রফিক হাসনাইন জানান, নথিপত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থী মাহিমের বয়স ১৬ বছর ১০ মাস হওয়ায় এবং অপরাধের সাথে জড়িত না থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় তাকে জামিন দিয়েছে আদালত।
আসামি পক্ষের আইনজীবী জোবাইদুল হক জানান, ‘মিথ্যা মামলায় ১৬ বছর ১০ মাসের কলেজছাত্র মহিমকে পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বয়স ১৯ বছর দেখিয়ে আদালতে তুলেছিল। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। পরে প্রমাণ দিয়ে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী আদালত থেকে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নিয়ে আসি আমরা। সে কাজটুকু করতে গিয়ে আমরা অনেক ধকল সামলাই। আদালত আগামী রোববার শুনানির দিন ধার্য করে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে পুলিশের সহযোগিতায় পুট আপ দিয়ে আজ আমরা শুনানি করি। বিজ্ঞ বিচারক মাহিমকে জামিন দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। একটি ছোট কিশোরকে গ্রেফতার করে তাকে অধিক বয়স লিখে কারাগারে পাঠানোটা বেআইনি। এজন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই রংপুর জেলা পুলিশ পরিচালিত পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে পুলিশের দায়ের করা পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
আলফি শাহরিয়ার মাহিমের বোন সানজানা আকতার স্নেহা বুধবার (৩১ জুলাই) তার নিজ ফেসবুক আইডিতে পোস্টে জানান, ‘আমার ছোট ভাই মো: আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ, তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। সে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ (এইচএসসি ২০২৫)-এর ছাত্র। তার কলেজ আইডি নম্বর ১৭৬৬০। সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক ছাত্র ছিল সে।’
সানজানা আরো জানান, ‘আমার ভাই অত্যন্ত মেধাবী, শান্ত ও ভদ্র একটা ছেলে, ১৮ জুলাই সে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জরিয়ে যায় এবং পুলিশের টিয়ারসেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ওইদিন আনুমানিক ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে, সেখানকার লোকাল মানুষজন কোনো হসপিটালে ভর্তি করিয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল ক্লিনিক খুঁজেও যখন তাকে আমরা পাচ্ছিলাম না। তখন আমার বাবার কাছে পুলিশের একটা কল আসে। তারা আমার বাবাকে জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে জানাজানি করিয়েন না তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল সকালে ছেড়ে দেয়া হবে চিন্তার কিছু নেই।’
তিনি আরো জানান, ‘কিন্তু পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে পুলিশ অস্বীকার করে বলে তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর ওই দিন আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম তাকে আবু সাইদ ভাইয়ের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সেদিন থেকে বারবার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটা বার দেখা তো দূরের কথা তার কন্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। এরপর বিষয়টি আমরা কোর্টের মাধ্যমে মোকাবেলা করার চেষ্টা করি। কিন্তু মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু কোর্টে দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে মামলাটি নেয়া হলে। পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছে আগামী ৪ আগস্ট।’
সানজানা জানান, ‘ওই দিন কোর্ট কী রায় দিবে আমার জানা নেই, তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই, বেকসুর খালাস দেয়া হোক এটা চাই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা