সৈয়দপুর রণক্ষেত্র : আহত শতাধিক
- সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
- ১৮ জুলাই ২০২৪, ১৯:১১
অবশেষে শান্তির শহর নীলফামারীর সৈয়দপুরও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের শেষ মুহূর্তে এসে হঠাৎ পুলিশের হামলায় ছাত্র-জনতার সাথে চরম সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। যা মুহূর্তে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। এতে ব্যাপক হামলা ও ভাঙ্চুর হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন পুলিশ, ৩০ থেথে ৪০ জন শিক্ষার্থী এবং বাকিরা হলো রিকশাচালক, পথচারী, ফেরিওয়ালাসহ সাধারণ মানুষ।
পূর্ব ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে সৈয়দপুরে শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেস ক্লাবের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শেরে বাংলা রোড হয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দিকে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু চত্বরে (পাঁচ মাথা মোড়) রেলক্রসিংয়ে পৌঁছলে রাজশাহী থেকে চিলাহাটিগামী আন্তনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস আসার খবরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে অবস্থান নেয়। এতে ওই ট্রেনটি দক্ষিণ আউটার সিগনালের কাছে এসে থেমে যায়। এর ফলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ সেখানে অবস্থান করে এবং অন্য অংশটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে চলে যায়।
এমনিতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন ছিল। ট্রেন আটকের খবরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে রেলক্রসিং সংলগ্ন পুলিশ বক্সে অবস্থান নেয় এবং একটি দল আটক ট্রেনের কাছে গিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবেই অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন অব্যাহত রাখে। বেলা ২টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এতে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং ছাত্রদের প্রবল বাধার মুখে পুলিশ সদস্যরা পুলিশ বক্সে অবরদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য প্রখর রোদে ও তাপে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ছাত্ররা। ফলে ক্ষিপ্ত হয় পুলিশ। পড়ে আন্দোলনকারীদের নেতৃবৃন্দের সহায়তায় অসুস্থ পুলিশকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েই পুলিশ হামলা শুরু করে।
হঠাৎ পুলিশের গুলি চালানোর ফলে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিকবিদিক সরে যায়। এতে পুলিশ আরো বেশি উৎসাহী হয়ে ব্যাপক গোলাগুলি করতে থাকলে ছাত্ররা পাল্টা ইট, পাথর ছুড়তে থাকে। এতে অনেকে গুলিবিদ্ধ এবং কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। ১০ মিনিট গুলি ও পাটকেল পাল্টা-পাল্টি নিক্ষেপের একপর্যায়ে ছাত্রদের সাথে সাধারণ মানুষ একযোগে ঢিল মারতে মারতে ছুটে আসে পুলিশ বক্সের দিকে।
এতে পুলিশ অবস্থা বেগতিক দেখে নিরুপায় হয়ে ফায়ার করতে করতে থানার দিকে পালিয়ে যায়। এসব পেছনে ধাওয়া করে পুলিশের ওপর সম্মিলিত হামলা করে ছাত্র-জনতা। এতে চারজন পুলিশকে ধরে বেধড়ক মারপিট করা হয়। আহতাবস্থায় পুলিশ রাস্তার পাশে দোকানে ঢুকে পড়লে সেখানেও হামলে করে আঘাত করা হয়। পড়ে থানা থেকে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। এর মধ্যে শহরের ট্র্র্র্রফিক বক্সের সামনে একটি, রেলওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে দুটি এবং ক্যান্টনমেন্ট রোডের ফুল বাগানের সামনে একটি মোটরসাইকেলে আগুল লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে পুলিশ পালিয়ে যাওয়ার পর উত্তেজিত ছাত্র-জনতা পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভেঙ্গে ফেলে রাস্তায় টায়ারে আগুন লাগিয়ে দেয়। শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই উত্তেজনা। সকাল থেকেই শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। এক প্রকার অঘোষিত হরতাল অবস্থা বিরাজ করেছিল। এরমধ্যে ছাত্র-জনতা পুলিশের সংঘর্ষের খবরে পুরো শহরে আতঙ্ক দেখা দেয়। সড়কে সড়কে উৎসুক জনতার লুকোচুরি অবস্থান। মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশের সমবেত হওয়া আর ছাত্রদের থেমে থেমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শহরে থেমে থেমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী আউয়ুব আলী, কাপড় ব্যবসায়ী ইমান আলী, নাপিত কামালসহ ছাত্রদের মধ্যে নাফিস সরকার, হ্যাপী, রাজা, সোয়েব, মারুফ, সিফাত, রফিকুল, আবু সাইদ, রকি, মঞ্জুর, হৃদয়, জুবায়ের, ওয়াসিম, সাকিল, নয়ন সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সবচেয়ে গুরুতর আহত শিক্ষার্থী শুভ ও মাহিষ দুই চোখেই গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও প্রায় অর্ধ শতাধিক আহতরা হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ওষুধের দোকানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
এদিকে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আহতরা হলেন এস আই লুৎফর রহমান, কনস্টেবল নাজনীন, মল্লিকা, কাদের, সকমলসহ প্রায় ১০ জন।
এ ব্যাপারে জানতে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলমের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সেকারণে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা