২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আবু সাঈদ হত্যার বিচার না হলে বুঝবো সরকার এটা করেছে : ড. তুহিন ওয়াদুদ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান সাবেক ডীন, সিন্ডিকেড সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেছেন, ‘ আবু সাঈদকে খুন করা হয়েছে। সেখানে কোন মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিস্থিতি অথবা এমন কোন বাস্তবতা ছিল না যে সাঈদকে গুলি করে হত্যা করতে হবে। সরকারকে স্পস্ট করতে হবে আন্দোলনে গুলি করে হত্যা না কি প্রতিরোধের নির্দেশনা ছিল। এই অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ কখনও বের হতে পারবে না। কারা এই গুলির নির্দেশ দিয়েছিল সেটিও পরিস্কার হওয়া দরকার। ’

বুধবার ( ১৭ জুলাই) ড. তুহিন ওয়াদুদ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড়েএসব কথা বলেন।

ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘ আমার প্রথম কথা হলো রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে খুন করা হয়েছে। এটা কোন মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয় নাই। এমন কোন বাস্তবতা এখানে তৈরি হয় নাই। যে একজন মানুষের বুক মাথা চোখ টার্গেট করে এখানে গুলি করতে হবে। এরকম কোন পরিস্থিতি এখানে তৈরি হয় নি। সারাদেশের শিক্ষক সমাজ যদি তাদের শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে সারাদেশে একজন শিক্ষার্থীও মারা যেতো না। আমি মনে করি এই দায় সারাদেশের শিক্ষক সমাজকে বহন করতে হবে। যারা এই গুলি চালিয়েছে তাদেরকে এই দায় বহন করতে হবে। ’


বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তুহিন বলেন, ‘ আবু সাঈদকে হত্যারা এই যে একটা কালো অধ্যায় রচিত হলো, এই অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ কখনও বের হতে পারবে না। একটা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাঠে গেলো। আর কার টাকায় কেনা অস্ত্রে এই গুলি চালানো হয়েছে। যে সাঈদ, যার বাড়িতে তিনবেলা খেতে পারে না। সেই সাঈদের বাবার টাকাও আছে এই অস্ত্র কেনায়, এই পোশাক কেনায়। তাহলে আমরা কি রাষ্ট্রে অর্থ দিয়ে এইসব মানুষ তৈরি করেছি। যারা আমাদের দিকে তাক করে গুলি ছুড়বে।’

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, ‘আমরা মনে করি সরকারের একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, সেটা হলো সরকার কি চেয়েছিল, এরকম গুলি করে আবু সাঈদকে হত্যা করা হোক, নাকি সরকার চেয়েছিল এটা প্রতিরোধ করা হোক। যদি তার (হত্যাকারী পুলিশের) শাস্তি হয়। তখন আমরা বুঝবো সরকার মারতে চায় নাই। আর যদি দেখি সরকার তাদের লালন পালন করছে। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। তখন আমরা বুঝবো সরকার চেয়েছে আবু সাঈদকে হত্যা করা হোক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডীন ড. তুহিন বলেন, ‘ শিক্ষকদের পক্ষে এই গুলির নির্দেশ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ তারা যে দায়িত্ব পালন করেন, তার সাথে গুলের নির্দেশ দেয়ার কোন বাস্তবতা নেই। বরং যারা গুলির নির্দেশ দেয়ার সাথে যারা যুক্ত আছেন সেটা পুলিশ হোক আর প্রশাসনই হোক, যখন গুলির নির্দেশ আসে , কোনর পরিস্থিতিতে তারা গুলি করতে বলেছে সেটাও আমরা জানতে চাই। এই বিষয়টা পরিস্কার হওয়া দরকার।’

কলাম লেখক ও গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘ সারাদেশের কোটি মানুষ জেড়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের সাথে। সেই আন্দোলনকে বন্ধ করবার জন্য যে গুলি ছোড়া হয়েছে। এ গুলি তো শুধু আবু সাঈদের দিকে টার্গেট করে ছোড়া হয় নাই। কোটি মানুষের দিকে এই গুলি ছোড়া হয়েছে। মারা গেছে আবু সাঈদ। কিন্তু আবু সাঈদ সরবার প্রতিনিধি ।আবু সাঈদ যখন বুক এরকম করে দাড়িয়েগেছে। হাতে একটা লাঠি। তাহলে অস্ত্র নিয়ে তার কি দায়িত্ব সরাসরি গুলি করা। এটা আমাদের প্রশ্ন ‘

ড. তুহিন বলেন, ‘ আমরা এটার ভিডিওটা দেখছি। ভিডিওটা খুবই পরিস্কার। এটাকে প্রমাণ করার জন্য একজন মানুষকেও জিজ্ঞেস করবার দরকার নেই। শুধু ভিডিওটা দেখলেই পরিস্কার হবে যে ঘটনাটা কি ঘটেছে। কত ভয়াভহ সে ঘটনা। মানুষের কি কোন মূল্য নেই। মানুষের জীবন এতো ঠুনকো। যে পুলিশ গুলি করে মানুষ মেরেছে। তার আত্মীয় স্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না, তার সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে না। কার দিকে গুলি ছুড়েছে সে। হয় তার আত্মীয় স্বজন, না হলে প্রতিবেশি। নিছক কিছু না হলেও তার তো দেশের মানুষের দিকে গুলি ছুড়েছেন তিনি।’

প্রসঙ্গত: মঙ্গলবার (১৬জুলাই)দুপুর পৌনে ২ টার দিকে পুলিশ কোটা আন্দোলনকালীদের ছেত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি, টিয়ারশেল ছোড়ে। আর ছাত্রলীগ হেলমেট পড়ে মুখে গামছা বেধে দেশয়ি অস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। এমন মুহুর্তেই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেটের সামনে দাড়িয়ে আন্দোলনকারীদের নেতা আবু সাঈদ পুলিশ এবং ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্যে করে বলে আপনারা আমার ভাইবোনের উপর আর গুলি ছুড়বেন না। ওদের মারবেন না। এরপর দুই হাতে তুলে বলে আপনারা আমাকে গুলি করেন, তবুও ওদেরকে গুলি করবেন না। সাথে সাথে ১ নং গেট থেকে পুলিশ তার বুক বরাবর ৩ রাউন্ড রাবারবুলেট ছোড়ে। তারপরও কিছুটা সময় দাড়িয়ে থাকে সাঈদ। পরে সামান্য দূরে গিয়ে একটু পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সাঈদ। শিক্ষার্থীরা তোকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আবু সাঈদ। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়ায়। পিতা মকবুল হোসেন আওয়ামীলীগের সক্রিয়কর্মী।

মঙ্গলবার চারঘন্টা ব্যাপি ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ সাংবাদিক পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়েছে। ভাংচুর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, ভিসির বাংলো। পুড়িয়ে দেয়া হয়, ২ পুলিশের গাড়ি, ছাত্রলীগ সভাপতির কারসহ ১০/১২ টি মোটরসাইকেল। হামলা করা হয় র‌্যাবের গাড়িতেও।


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

সকল