০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

রংপুরে আন্দোলনের খবর কাভার করতে গিয়ে ১০ সাংবাদিক আহত : তীব্র নিন্দা

-

কোটা সংস্কার আন্দোলনের খবর ও ফুটেজ কাভারেজ করতে গিয়ে পুলিশের টিয়ারশেল রাবার বুলেট ও আন্দোলনকারীদের হাতে আহত হয়েছেন রংপুরের ১০ সাংবাদিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে রংপুরের সাংবাদিক সংগঠনগুলো।

আহত সংবাদিকরা জানান, ঘটনার সময় ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে সড়কে আসলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার রেদওয়ান হিমেল, আব্দুর রশিদ জীবন ও ভিডিও জার্নালিষ্ট তরিকুল ইসলামের ওপর হামলা করে। এসময় তাদেরকে বেধড়ক পেটিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত তরিকুলকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ দিকে, সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোরাগুলি ও টিয়ারশেলে বাংলাভিশনের ভিডিও সাংবাদিক টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ নেয়াজ জনি, সহ-সভাপতি আরটিভির আবুল কাশেম, দফতর ও প্রচার সম্পাদক বৈশাখি টিভির সাইফুল ইসলাম হৃদয়, ৭১ টিভির রাফিউল ইসলাম রাফি, এটিএন নিউজের মনিরুজ্জামান মনির, ডিআরবি (অনলাইন) আইনুল ইসলাম, দৈনিক পরিবেশের নির্বাহী সম্পাদক শাকিল হোসেন আহত হন। তারা এখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত ভিডিও সাংবাদিক এবং টিসিএ সভাপতি শাহ নওয়াজ জনি বলেন, ‘পুলিশ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাদের দিকে টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেট মারে। আমরা বারণ করা সত্ত্বেও তারা আমাদের দিকে এসব মারে। এতে আমরা আহত হই।’

এ সময় এক পুলিশ সদস্যকে সাংবাদিক সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করতেও শোনা যায় বলেও জানান তিনি।

আহত সাংবাদিক রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের তথ্য দফতর ও গবেষনা সম্পাদক সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার রেদওয়ান হিমেল জানান, ‘ক্যাম্পাস থেকে ১ নম্বর গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমাদের বের হতে বাধা দেয়। এ সময় আমি এবং আমার সহকর্মী জীবন ও তরিকুল তাদের অনুরোধ করি। রাস্তায় অবরোধের ফুটেজ নিবো। কিন্তু তারা আমাদেরকে বের হতে দেয় না। আমরা যখন রাস্তায় বের হই, তখন আন্দোলনকারীরা আমাদের উপর্যপুর কিল, লাথি-ঘুষি এবং তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ক্যামেরা ভাংচুর করে।

এ দিকে, রাতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত সাংবাদিকদের দেখতে যান জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

এ সময় তার সাথে ছিলেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসির, জেলা সদস্য সচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাকসহ নেতারা।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের হাতে সাংবাদিক আহত হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। গণমাধ্যমকে দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে। তিনি জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।’

সাংবাদিকদের দেখার পর তিনি আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন ও আর্থিক সহযোগিতা করেন।

এ দিকে, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজ, প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।

রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান নজরুল ইসলাম রাজু এবং সাধারণ সম্পাদক যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র করেসপনডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নান এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক। এতে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাবে। যারা হামলা করেছে তারা অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে তাদের নিউজ বর্জনসহ কঠোর কর্মসুচি দেবো আমরা।’

রংপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার মেরিনা লাভলী জানান, ‘সাংবাদিকদের গায়ে হাত দেয়ার দুঃসাহস যারা দেখিয়েছেন। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে সাংবাদিকদের কঠোর আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’

রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব একুশে টেলিভিশন, দৈনিক সংবাদ এবং বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার লিয়াকত আলী বাদল জানান, ‘এই ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। যারা হামলা করেছেন। যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে টিয়ারশের রাবার বুলেট ছুড়েছেন। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না হলে আমরা আন্দোলনে যাবো।’

প্রসঙ্গত, সোমবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ সময় পুলিশের গুলিতে মারা যান আবু সাঈদ নামের রোকেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী । গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রংপুর মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক। এ ঘটনার পর রণক্ষেত্র পরিণত হয় পুরো এলাকা। ভাংচুর অগ্নিসংযোগ হয় পুলিশসহ বিভিন্ন বাহনে। আহত হয় পুলিশ, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১২০ জন।


আরো সংবাদ



premium cement