০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় - ছবি : সংগৃহীত

পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর ১২টার মধ্যেই হলের সকল শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো ক্লাস পরীক্ষা হবে না। পরবতীতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

সোমবার (১৬ জুলাই) রাত ৯টায় ভিসি হাসিবুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬ তম জরুরী সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রংপুরে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অশান্ত হয়ে উঠলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনে আগুন দিয়েছেন। দোতলা বাড়ির নিচতলায় ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ভিসির বাসভবনের দোতলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ভিসি, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ২০ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাইরে থাকা ভিসি, প্রো-ভিসি গাড়িসহ পাঁচটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে রংপুর শহর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হন। বেলা ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ অবস্থান নেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ছিলেন পার্ক মোড়ের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পুলিশ আহত হন।

আহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সদস্য নিহত আবু সাঈদের বন্ধু অঞ্জন রায় বলেন, শরীরে একের পর রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। তাঁর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এ সময় সংঘর্ষ চলছিল। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়।

রংপুরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে দুইজন সাংবাদিকসহ ২৬ শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন। এর আগে অনেকেই ভর্তি হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন বলে তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement